তস্কর

—এই, তোর নাম কি?

—জামাল।

—বেয়াদবের মতো কথা কস ক্যান হারামীর পুত! থাপ্পড় দিয়া বেয়াদবী ভুলাইয়া দিমু …

জামাল স্পষ্ট স্বরে বলল, নাম জানতে চাইছেন নাম বলছি। বেয়াদবী করি নাই। গালি দেন কেন?

কামরুল চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে জামালের গালে একটা থাপ্পড় দিল। ছোটখাটো মানুষ হলেও কামরুলের শরীরে শক্তি আছে। রোজ সন্ধ্যায় সে এক ঘন্টা স্কোয়াশ খেলে। এরপর এক ঘন্টা জিমে কসরত করে। বাংলাদেশে ব্যবসা চালাতে হলে মানসিক শক্তির সাথে শারীরিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা সাদা কথায় কিছু বুঝে না। এদেরকে মার দিয়ে কথা বুঝাতে হয়।

কামরুলের থাপ্পড়ে জামালের অবশ্য তেমন কিছু হয়নি। সে আগের মতোই ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে থাপ্পড়টা খুব বেশী জোরে বসেনি। কামরুলের বিরক্তিবোধ হচ্ছে। এখন থেকে রোজ স্কোয়াশ না খেলে সেই এক ঘন্টা জিমে কিক বক্সিং করতে হবে। অফিসের কর্মচারীদের শায়েস্তা করতে হলে খালি হাতপায়ে জোর লাগবে। অফিসে তো আর স্কোয়াশ রেকেট নিয়ে বসে থাকা যাবে না।

জামালের দৃষ্টিতে ভয়ভীতি না থাকলেও চেয়ারে বসে থাকা এই অফিসের বিপণনকর্মী মন্জুর বেশ ভয় পেয়েছে। মন্জুর বাচ্চা ছেলে, ইংরেজি মিডিয়াম আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া দুর্বল গ্র্যাজুয়েট। এরা শার্ট টাই লাগিয়ে ফুটফাট ইংরেজি বলা পর্যন্ত ঠিক আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ-জাতি, দূর্নীতি, প্রশাসন আর রাজনীতি উদ্ধার করা বার্তা লেখার সময় এদের সাংঘাতিক সাহস দেখা যায়। কিন্তু চোখের সামনে বাংলা গালাগালি আর বাংলা মার শুরু হলে এরা ভীষণ ভয় পায়। এই মুহূর্তে মন্জুর নিশ্চই সেরকম একটা ভয় পাচ্ছে।

কামরুল সেই দৃশ্য কিছুক্ষণ উপভোগ করে বজ্রকণ্ঠে বললো, এই যে মন্জুর, মিস্টার জিপিএ ফোর … বলদের মতো তাকাইয়া কি দেখো?

মন্জুর কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর সামনে মালিকপক্ষের এই আচরণ হয়তো সে আশা করেনি। কামরুল আবার বলল, কি দেখো? হোয়াট?

—সরি স্যার ….

—কিসের সরি! গত ছয় মাসে তোমার ডিপার্টমেন্টের স্টাফ এই নিয়া তিন নম্বর চুরি করল। তুমি করোটা কি অফিসে বইসা? মাইয়াবাজি আর ফেইসবুক হান্দানো ছাড়া আর কি করো?

মন্জুর ঢোক গিললো। বেচারা এবার বেশ ভালো ভয় পেয়েছে। পাক। পরিচিতের ছেলে হয়ে চাকরিতে ঢুকে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। এরকম দুই-একটা গালি না দিলে এদের টনক নড়ে না। এই ছেলে শুরু থেকেই অফিসের যুবতী কর্মচারীদের সাথে ফুটফাট খোশ আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। কামরুলের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এই ছেলেকে একটা শিক্ষা দেয়ার। আজকে সেই সুযোগ তৈরী হয়েছে। আজকে একে কর্পোরেট নামক সাপের পা দেখাতে হবে।

কামরুলের মুঠোফোন ভোঁ ভোঁ শব্দ করছে। নিশ্চই ঈশিতা ফোন করেছে। কামরুল অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোন ধরলো। ঈশিতার কল অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। ঠিক যেই মুহূর্তে মন্জুরকে একটা মোক্ষম ঝাড়ি দেয়ার কথা, সেই মুহূর্তে এখন কণ্ঠস্বর নরম করে স্ত্রীর সাথে কথা বলতে হবে। অসহ্য! কানে ফোন নিতেই ঈশিতা বলল, হ্যালো, কোথায় তুমি?

—এই তো, অফিসে।

—ও … কি করছো?

কামরুল প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ঘড়ি দেখলো। তিনটা পঁচিশ। দুপুর তিনটা পঁচিশে একটা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসে কি করছে সেটা তার স্ত্রীর বুঝা উচিত। এই ব্যবসা ঈশিতার বাবার, কিন্তু কামরুলই এখন ব্যবসার সবটা দেখে। ব্যবসায় ঈশিতার কোনো আগ্রহ না থাকলেও মাস শেষে টাকাপয়সার হিসাব নিতে আর প্রতিদিন কয়েকবার ফোন করে প্রশ্ন করতে তার কোনো ভুল হয় না। কামরুলকে স্ত্রীর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। লেনদেনের হিসাব বুঝাতে হয়। এসব কাজ খুব ভদ্রভাবেই করতে হয়।

কামরুল সহজ স্বরে বলল, স্টাফদের সাথে একটা মিটিং-এ আছি।

—কখন ফিরবে বাসায়? আজকে রাতে দাওয়াতে যেতে হবে মনে আছে তো?

জামাল মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বলা যাচ্ছে না। মন্জুরের দৃষ্টিও অন্যদিকে। কামরুল ইতস্তত করে বললো, শোনো … আমি তোমাকে আর পাঁচ মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি।

—আচ্ছা … কিন্তু আমি কেমন আছি জানতে চাইলে না তো …

কামরুল একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো। ওদের বিয়ের উনিশ বছর পার হয়েছে, কিন্তু ঈশিতা অফিসে ফোন করলেই এসব ঢং করবে। কামরুলকেও তখন সেই ঢং-এর উত্তরে কিছু বলতে হবে। কামরুল নরম স্বরে বললো, তুমি কেমন আছো? ইশমাম, রুসামা ওরা কি করছে?

—আমি ভালো আছি। রুসামা স্কুলে, আর ইশমাম ওর ঘরে। তুমি পাঁচ মিনিট পরে ফোন করবে কিন্তু, নইলে …

—হ্যা হ্যা … করব, আমিই করব। রাখছি, বাই।

ফোনের কারণে কামরার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন আবার ধমকা ধমকি বা গালাগালি করে জেরা শুরু করা কঠিন। এমন অবস্থায় আচমকা কিছু করে ফেলা উচিত। কামরুল সেরকম কিছু ভেবেই জামালের গালে আবার একটা থাপ্পড় দিল।

জামালের দৃষ্টি বা হাবভাবের এবারেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু মন্জুর ভয় পেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। কামরুল এক মুহূর্ত সেদিকে তাকিয়ে জামালের দিকে দৃষ্টি ফেরালো। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, শোন হারামীর পুত, তোরে চুরির দায়ে দুই মাসের জন্য সাসপেন্ড করলাম। চুরির বিশ হাজার ট্যাকা নিয়া আয়, এর পরে আবার কামে ঢুকবি। তার আগে এক পয়সাও বেতন পাবি না।

—আমি চুরি করি নাই। চুরির টাকা আমার কাছে নাই।

—দুই মাস পেট শুকাইয়া পইড়া থাকবি তখন মনে পড়ব চুরির ট্যাকা কই। গেট আউট। হারামজাদা কুলাঙ্গার … বাইর হ।

জামাল চলে যাওয়ার পরে কামরুল মন্জুরের দিকে তাকালো। মন্জুরের মুখ শুকনো, দৃষ্টি মেঝের দিকে। কামরুল মনে মনে হাসলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাইরাল হিরো এখন বাংলা ভাষায় কর্পোরেট নির্যাতনের মুখোমুখি হতে পারছে না। হায় রে প্রজন্ম! এরা জীবন চালাবে কিভাবে? দশ বারোটা মেয়ের সাথে গুটুর গুটুর চ্যাটিং করে এরা মাদী ঘোড়া হচ্ছে। আসল জীবনে মেয়েমানুষের পাল্লায় পড়লে এদের কালোঘাম বের হয়ে যাবে। ঈশিতার মতো একটা মেয়ে কপালে জুটলে বুঝবে জীবন কি জিনিস। ঈশিতার মতো মেয়ে সামলাতে কামরুলের মতো কঠিন কলিজা লাগে। এতো পুতু পুতু মাদী ঘোড়া দিয়ে ঐরকম জিনিস সামলানো যাবে না।

কামরুল গলা খাকারি দিয়ে বললো, তোমার ডিপার্টমেন্টের পেমেন্ট থেকে এতো চুরি হয় কেন? ক্লায়েন্ট ঠিকমতো টাকা দেয়, আর আমি দশ বিশ হাজার কম পাই। ঘটনা কি?

—সরি স্যার। আই এ্যাম ট্রাইং মাই লেভেল বেস্ট স্যার, বাট …. স্যার কিছু মনে করবেন না, আমার মনে হয় সমস্যাটা একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের। বিক্রি থেকে যা পেমেন্ট আসে আমি নিজে চেক করে একাউন্টসে পাঠাই। আপনি যদি একবার একাউন্টসের সাথে ব্যাপারটা চেক করতেন ….

—তোমার মতো একটা জিপিএ ফোর বলদ আমারে বলবে কি করতে হবে!

—সরি স্যার …. রিয়েলি সরি।

—গেট আউট। যাও কাম করো। ফেসবুক হান্দানো বন্ধ করো। বহুত হান্দাইছো।

—স্যার প্লিজ বিলিভ মি, আমি মন দিয়ে কাজ করছি …

কামরুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, দেখো মন্জুর, তোমার মা আমার বন্ধু, তার অনুরোধে আমি তোমারে এই চাকরি দিছি। তুমি বাইরে আমার বন্ধুর পোলা হইতে পারো, কিন্তু এই অফিসে তুমি একটা বলদা। বলদার মতো গতর খাটাইয়া কাম করো। নাইলে তোমার পাছায় লাথ্থি দিয়াও আমি কাম করাইতে পারমু। বুঝছো?

মন্জুর হতবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। কামরুল সেই দৃষ্টি আবার উপভোগ করল। মন্জুরের মা রুহী কামরুলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেমিকা ছিলো। সেই সময়েই রুহী ছিল প্রচন্ড সাহসী আর স্পষ্টভাষী। অনার্সের পরপরই রুহী খুব সরাসরি কামরুলকে বলেছিল, তোমার সাথে ভালো সময় কেটেছে, কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করব না। তুমি ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল না। আমি আরও সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের কাউকে বিয়ে করব। তুমি স্ট্রাগলার। তোমার সাথে প্রেমটা ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু জীবন ঠিকঠাক হবে না। সরি।

সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের যাকে রুহী বিয়ে করলো সেই লোকটা বুয়েট থেকে শীর্ষস্থানে পাশ করা ইন্জিনিয়ার, কিন্তু মন্জুরের মতোই একটা পুতু পুতু মাদী ঘোড়া। এরপর প্রায় সাত-আট বছর রুহীর সাথে কামরুলের কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেমটা হয়তো কামরুল ভালোই করেছিল। বিয়ের আট বছর পরে রুহী কামরুলের সাথে আবার যোগাযোগ শুরু করল। প্রথমে ফোনে, এরপর টুকটাক দেখা। এরপর সেই হারানো প্রেমটা আবার। তখন ওরা দুজনই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসারী, কিন্তু তাতে কার কি! বরং নতুন সেই শুরুটা আরো বাধাহীন, বেপরোয়া, উন্মত্ত আর দ্বিধাহীন হল।

এখনও তাই আছে। সপ্তাহে দুই-তিনদিন একান্তে দেখা হয়। নিয়মিত বার্তা বিনিময় হচ্ছে। কেউ টেরও পায়নি। রুহীর মতো এরকম একটা সাহসী, সম্মোহিনী আর চটপটে মায়ের ছেলে এতো পুতু পুতু আর ভ্যান্দা টাইপ হয়েছে শুধুমাত্র তার বুয়েট টপার বাপের কারণে। এসব ছেলে জীবনে কোনো দুঃসাহসিক কাজ করতে পারবে না। এদের চোখের সামনে দিয়ে চুরি হলেও এরা ধরতে পারে না। নিজের পক্ষে চুরিধারি করা তো অসম্ভব। চুরি আর দুই নম্বরী করতেও কলিজা লাগে, আর হারামের মাল হজম করতে শক্ত পেট লাগে। এদের এসব কিছুই নেই। 

কামরুল মন্জুরের দিকে তাকিয়ে শীতল স্বরে বললো, এখন যাও। আমি যদি আর কোনো চুরি ধরি, সবচেয়ে আগে তোমার পাছায় লাথ্থি দিয়া তোমারে বাইর করুম। গেট আউট।

মুঠোফোনে ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। নিশ্চই ঈশিতা ফোন করেছে। পাঁচ মিনিট অনেক আগেই পার হয়েছে। কামরুল ফোন ধরল।

—কি ব্যাপার …. ফোন করলে না যে?

—সরি, একটা ঝামেলায় ছিলাম। সেলসের একটা পেমেন্টে একটু সমস্যা হয়েছে।

—আমি শুনেছি … একাউন্টসে ফোন করেছিলাম। বললো বিশ হাজার টাকা চুরি হয়েছে, আর সেজন্য তুমি একজন পিওনকে সাসপেন্ড করেছো। মন্জুরকেও ধমকাধামকি করছিলে। গত ছয় মাসে এই নিয়ে তিনবার টাকা চুরি হয়েছে … তুমি তিনজন পিওনকে সাসপেন্ড করেছো। সমস্যাটা কোথায় বলো তো? ওয়াট ইজ গোইং অন?

কামরুল একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তেমন কিছু না। আমি সলভ করব।

—তুমি সলভ করতে পারবে না। কারণ তুমি আসল সমস্যাটা লুকাচ্ছো। আসল সমস্যা আমাদের একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। সেখানে তোমার অতি পেয়ারের বিলকিস জাহান আছে। চুরি ঐ মেয়েই করছে, কিন্তু তুমি তাকে কিছু বলবে না। তুমি কোনো প্রমাণ ছাড়া পিওনদেরকে সাসপেন্ড করছো। এর মধ্যে দুইবার মন্জুরকেও গালাগালি করেছো। তুমি ভুলে যাও যে মন্জুর আমাদের মেয়েকে পড়ায়, আমাদের বাসায় আসে। বাচ্চা একটা ছেলে, ইশমামের থেকে একটু বড়। হি ইজ লাইক ফ্যামিলি। তোমার পেয়ারের বিলকিস জাহানের জন্য তুমি এসব করছো। কি যে তোমার পেয়ার এই চোরের জন্য ….

—ঈশিতা প্লিজ … আমরা এসব নিয়ে পরে কথা বলি। 

ঈশিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে রাতে আমরা এটা নিয়ে কথা বলব। কিন্তু এভাবে এসব চলতে পারে না কামরুল। একাউন্টসের একটা সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার।

—হবে। তুমি কি আর কিছু বলবে?

—হ্যা … আমি চাই না বিলকিস আমাদের অফিসে আর থাকুক। একাউন্টসে বসে সে এসব চুরি করছে, আর তুমি তাকে বাঁচানোর জন্য নির্দোষ গরীব মানুষের চাকরি খাচ্ছো।

—প্লিজ ঈশিতা … এখন না …

ঈশিতা আবার কিছুক্ষণ সময় নিলো। কামরুল টের পাচ্ছে ঈশিতা প্রচন্ড রেগে আছে। ফোনে ওর ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ আসছে। ঈশিতা শীতল স্বরে বললো, শোনো, রুসামা ওর ক্লাস শেষ করে ধানমন্ডিতে এক বন্ধুর বাসায় গ্রুপ স্টাডিতে বসবে। ওখান থেকে আজমলের বাসা খুব কাছে, তো আমি ওকে বলেছি সরাসরি ঐ বাসায় চলে যেতে। তোমার মনে আছে তো যে আজকে আজমলের বাসায় দাওয়াত?

—হ্যা, মনে আছে।

—মনে থাকলে ভালো। ইশমামও একটু পরে বের হবে। ও কোথায় যেন একটা কনসার্ট দেখতে যাবে। ওখান থেকে হয়তো পরে দাওয়াতে আসবে। আমি ভাবছিলাম কি … আমি ছয়টায় একটু পার্লারে যাবো, এরপর সেখান থেকে আজমলের বাসায় চলে যাবো। তুমি যদি তোমার হেল্থ ক্লাব থেকে বাসায় না এসে সরাসরি ওখানে চলে যাও, আমি রানুকে নীচের তলায় চলে যেতে বলতাম। ইয়াং মেয়ে … ওকে তো আর বাসায় একা রেখে যেতে পারি না। বুঝেছো?

কামরুল গম্ভীর স্বরে বললো, ঠিক আছে। আমি সরাসরি দাওয়াতে চলে যাব।

—ওহ গ্রেট … আমি তাহলে পাঁচটার সময় রানুকে নীচের তলায় রেখে এক ঘন্টা আগেই পার্লারে চলে যাই … একটু সময় বেশী পাব!

কামরুল অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বললো, হু, তাই করো ….

—কামরুল, এত আপসেট হচ্ছো কেন? একটা সমস্যা হয়েছে, আমরা সেটা কথা বলে সমাধান করব। তুমি আগেই এতো চিন্তিত হচ্ছো কেন?

ঈশিতার কণ্ঠস্বরে মায়া মায়া একটা ভাব। কামরুল স্বস্তিবোধ করলো। স্ত্রী হিসেবে ঈশিতা ততটা খারাপ না। মাঝে মাঝে মেজাজ এদিক সেদিক হয়। এই বয়সে নারীদের সেটা হওয়া অস্বাভাবিক না। কামরুল হালকা স্বরে বলল, ঠিক আছে, আমি সরাসরি দাওয়াতে চলে যাব। সি ইউ। বাই।

বিলকিসের ক্ষুদে বার্তা এসেছে। ভয়াবহ বার্তা। বিশ হাজার টাকা না, আজকের নগদ জমা থেকে সে আশি হাজার টাকা সরিয়েছে। বিলকিসের সাথে কথা বলা দরকার। মেয়েটা প্রশ্রয় পেয়ে মাথায় উঠেছে। অফিসের এই মেয়েটার সাথে একটা ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়ানোটা কামরুলের মহা ভুল হয়েছে। এই মেয়ের বাসা কামরুলের হেল্থ ক্লাবের পাশেই। ওর স্বামী রাত দশটার আগে আসে না। মেয়েটা দেখতেও খারাপ না। তাই কামরুল ভেবেছিলো হেল্থ ক্লাব শেষ করে মাঝে মাঝে এই মেয়ের কাছে যাওয়া যায়।

কিন্তু সেই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে এখন এই মেয়েটা একাউন্টসে যা তা করছে। দুই-এক মাস পরপর দশ-বিশ হাজার টাকা সরাচ্ছে… কামরুলকে বলছে এই দরকার, সেই দরকার। বিক্রয়ের নগদ টাকা একাউন্টসের পিওনের হাত হয়ে তার কাছে পৌঁছালে সে দশ-বিশ হাজার টাকা সরিয়ে কামরুলকে বলে “এডজাস্ট” করতে। বিক্রয় আর একাউন্টসের হিসেবে তখন টাকার বেশকম হয়। ঈশিতাকে বলতে হয় যে এই টাকা বিক্রয় থেকে একাউন্টসে যাওয়ার সময় পিওন সরিয়েছে। এভাবে দুইবার দুই পিওনকে সাসপেন্ড করে ঈশিতাকে বুঝানো হয়েছে।

বিলকিসের আজকের চুরির কারণে আরেকটা পিওন বিনাদোষে সাসপেন্ড হচ্ছে। সেটা মূল সমস্যা না। পিওন সাসপেন্ড হচ্ছে হোক। কামরুলের ধারণা বন্চিত, অপমানিত আর অত্যাচারিত হওয়ার জন্যেই দেশে গরীব লোকের জন্ম হয়। সমস্যা হলো ঈশিতা। একাউন্টসের হিসাবে গড়মিল দেখলেই ঈশিতা সব খোঁজখবর করে, সাসপেন্ড হওয়া পিওনদের সাথে কথা বলে। বিলকিসের সাথে কামরুলের সম্পর্কের ব্যাপারে ঈশিতা কিছুটা জেনেও গেছে। এখন এসব চুরিধারীর দোষ পিওনের উপর চাপানো তাই খুব একটা সহজ ব্যাপার হবে না।

আজকের ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ। গতকাল বিলকিস জানিয়েছিলো যে ওর বিশ হাজার টাকা দরকার। কিছুক্ষণ আগেও কামরুল জানতো যে বিশ হাজারই গেছে। কিন্তু এখন বুঝা যাচ্ছে যে বিলকিস মোট আশি হাজার টাকা সরিয়েছে। আশি হাজার টাকা চুরি হচ্ছে পুকুর চুরি! এই ঘাপলা ঈশিতা ধরলে খবর আছে। ও পুরো তদন্ত করবে। পিওনের সাথে, বিক্রয় বিভাগের সাথে, বিলকিসের সাথে কথা বলবে। বিশ হাজার টাকা চুরি হলে বলা যায় পিওন সরিয়েছে, পুলিশ ডাকার দরকার নেই। কিন্তু আশি হাজার টাকার চুরি পিওন করেছে এটা বলে ঈশিতাকে ভুলানো যাবে না। এতো টাকা চুরি হয়েছে অথচ পুলিশকে কেন জানানো হয়নি সেটা সে ঠিকই জানতে চাইবে। এসব করলে এই চুরির আসল পর্দা উঠে যাবে। তাই আজকে অফিস থেকে এই টাকা বের হওয়ার আগেই কিছু করতে হবে।

কামরুল বিলকিসকে ফোন করল। বিলকিস ফোন ধরে বলল, জি স্যার বলেন।

—আমি বলছি। তুমি আমার কেবিনে আসো, কথা আছে।

—এখন তো পারবো না স্যার। খুব ব্যস্ত। আমার কেবিনে স্টাফ আছে, একটা কাজ চলছে …

—এখনই আসো। তুমি আশি হাজার টাকা গায়েব করেছো কেন! তুমি তো বলেছিলে তোমার বিশ হাজার টাকা দরকার!

—স্যার হঠাৎ প্রয়োজনটা হলো তো, তাই এই পদক্ষেপটা নিতে হল। তবে এই মুহূর্তে এসব নিয়ে আলাপ করতে পারব না। মিটিং-এ আছি। পরে কথা বলি প্লিজ।

কামরুল ফোন রাখলো। চারটার কাছাকাছি বাজে। এক ঘন্টা পরে অফিস বন্ধ হবে। এই মেয়ে ধুরন্ধর। এখন তার কামরায় কর্মচারীদের ডেকে রেখেছে যেন আজকে আর কথা বলতে না হয়। সে আজকেই টাকা সরাবে।

বিক্রয় বিভাগ থেকে নগদ টাকা একাউন্টসে যাওয়ার আগে কাগজপত্র, টাকার পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য বিক্রয় বিভাগে নথি করা হয়। বিক্রিবাট্টা দেখে মন্জুর। মন্জুরের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলে ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে হবে। কামরুলের এখন এই ছেলের সাহায্য দরকার। রুসামাকে পড়ানোর জন্য মন্জুর বাসায় আসে। ঈশিতার সাথে তার কথা হয়। কামরুলের ধারণা অফিসের এসব ব্যাপারে নজরদারী করার কারণেই ঈশিতা এই মন্জুরকে রুসামার টিউশনে রেখেছে। আজকের ব্যাপারটা ঈশিতা কিছুটা জেনে গেছে। এখন ঈশিতা নিশ্চই বাকিটা মন্জুরের কাছ থেকে জানতে চাইবে। তার আগেই মন্জুরকে হাত করতে হবে। কামরুল মন্জুরকে আসতে বলল।

মন্জুর কামরায় ঢুকেই বললো, স্যার একটা সমস্যা হয়ে গেছে …. বিশ হাজার না, আশি হাজার টাকা চুরি হয়েছে ….

—আই নো, আমি জানি। বসো মন্জুর।

মন্জুর বসলো। কামরুল নরম স্বরে বললো, মন্জুর, আশি হাজার টাকা চুরি নিয়ে আমি চিন্তিত। তোমার সেলস রেকর্ডে কতো টাকার পেমেন্ট এসেছিলো?

—স্যার এক লাখ চল্লিশ হাজার। আমি এন্ট্রি করে জামালকে দিয়ে একাউন্টসে পাঠিয়েছি …. কিন্তু একটু আগে আমি জানলাম যে একাউন্টসে নগদ জমা পড়েছে ষাট হাজার। তার মানে স্যার … একাউন্টসে জমা পড়ার আগেই আশি হাজার টাকা কেউ সরিয়েছে …

কামরুল অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বললো, তুমি এসব কথা আর কার সাথে আলাপ করেছো?

—কারও সাথে করিনি স্যার।

—গুড। কারও সাথে করবেও না। বুঝছো?

—জি স্যার, বুঝেছি।

—আশি হাজার টাকার চুরি আমরা সবাইকে জানাইতে পারব না। বড় এমাউন্ট, তোমার ঈশিতা ম্যাডাম জানলেই বলবেন থানায় খবর দেইনি কেন। আমি তাকে ম্যানেজ করব। কিন্তু তুমি তাকে এটা নিয়ে কোনো তথ্য দেবে না। তোমার নেক্সট টিউশন কবে?

—কালকে স্যার। স্যার আমি ম্যাডামকে কিছু বলব না।

—গুড। তোমার সেলস রেকর্ডে কতো পেমেন্টের এন্ট্রি করা আছে?

—স্যার এক লাখ চল্লিশ হাজার।

কামরুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, মন্জুর, মনযোগ দাও, প্লিজ। তুমি স্মার্ট ছেলে, গাধার মতো কথা বোলো না। আমি আবার প্রশ্ন করতেছি … তোমার সেলস রেকর্ডে কতো পেমেন্টের এন্ট্রি করা আছে?

মন্জুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে সহজ স্বরে বললো, স্যার আমি ষাট হাজার টাকার এন্ট্রি করে দিব।

—গুড। তুমি বিলকিসকে বলো একাউন্টসে চল্লিশের এন্ট্রি করতে, আর আমাকে বিশ হাজার টাকা গড়মিলের একটা অফিসিয়াল রিপোর্ট ইমেইল করতে। সেটা তোমাকে সিসি করতে বলো। সো অফিসিয়ালি বিশ হাজারের গড়মিল থাকবে। আর ইনভয়েসটা …

—স্যার আমি ষাট হাজারের ইনভয়েস তৈরী করে একাউন্টসে পাঠাচ্ছি। অরিজিনাল ইনভয়েস কোনো রেকর্ডে থাকবে না। আমি ক্লায়েন্টকে বলে দেবো পেমেন্টের কোনো ডিটেইলস যেন ডিসক্লোজ না করে। আর স্যার এইচ আর-এ বলবো জামালের সাসপেনশন অর্ডারে বিশ হাজারের চুরির কথা লিখতে।

কামরুল গম্ভীর স্বরে বললো, গুড। এইচ আর-এর চিঠি তুমি নিজে টাইপ করবে, ওদেরকে কোনো কপি দেবে না। আর একাউন্টসে অরিজিনাল ইনভয়েসের একটা কপি আছে …

—স্যার সেটা গায়েব হয়ে যাবে। আমি ষাট হাজারের নতুন ইনভয়েস বিলকিস আপুকে পাঠিয়ে দিব। স্যার একটা অনুরোধ … আমার একটা জায়গায় যেতে হবে, আমি কি কাজ শেষ করে একটু আগে বের হতে পারি?

—যাও। তবে কাজ দুইটা করে এরপর যাও।

মন্জুর ঝটপট কাজ সারলো। প্রথমেই ষাট হাজারের ভুয়া কাগজ বানিয়ে পাঠিয়ে দিল। এরপর বিলকিস আপুকে ফোন করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। বিলকিস আপু মহা চালু জিনিস। তুখোড় মাস্তিবাজ। তাউড়া লাইফস্টাইল। চরম দূর্নীতিগ্রস্ত। আজকের চুরির পরিকল্পনা তারই। কিন্তু মন্জুরের সাথে বোঝাপড়া না করে সেটা সম্ভব না। আজকের চুরির ব্যাপারে বিলকিস আপু অবশ্য প্রথমে ষাট হাজার টাকার কথা বলেছিলো। বলেছিলো ষাট হাজার সরিয়ে দুইজন তিরিশ তিরিশ নেবে। মন্জুর ফোনে বললো, কি আপু, সিক্সটি বলে আশি সরালেন যে … আমার শেয়ার তাহলে কি চল্লিশ?

—চিল্ ব্রো! তিরিশেও পেট ভরে না তোমার! আমি একাউন্টস রিপোর্ট চেন্জ না করলে ঈশিতা ম্যাডাম প্রথমে তোমার চাকরি খাবে।

—তা খাবে। ঠিক আছে, ক্যাশ লাগবে না। অন্যভাবে পুষিয়ে দিয়েন আপু।

—ফাজিল! শখের শেষ নাই … আচ্ছা, তোমার জন্য দেবো, কালকে বাসায় এসো। ছাগলটা কি বলে? বউকে নিয়ে চিন্তিত?

—মহা চিন্তিত। টেনশনে মুখ শুকিয়ে বান্দরের পুটকির মতো হয়ে গেছে।

—ঐ ছাগলের মুখ এমনিতেই বান্দরের সেইটার মতো। আমি রেকর্ড চেন্জ করে চল্লিশের এন্ট্রি করে দিচ্ছি। লেট হিম ডিল দা বিচ। আমার কি!

মন্জুর হাসলো। ফোন রেখে এইচ আর-এর চিঠি টাইপ করলো। নিজের কামরা থেকে বের হয়ে দেখলো জামাল দাঁড়িয়ে আছে। মন্জুরের কেন যেন মনটা ভারী লাগছে। জামাল বেচারা চুরি না করেও চোর হচ্ছে, শাস্তি পাচ্ছে। বরখাস্ত হওয়ার কারণে ও বেতন পাবে না। হয়তো পরে ওর চাকরিও যাবে। পিওনদের সাথে সচরাচর তাই-ই হয়। এর মধ্যে ওকে একটা চাকরি খুঁজে বের করতে হবে। ততোদিন ওর সংসার চলবে কিভাবে কে জানে।

জামালের হাতে বরখাস্তের চিঠি দেয়ার সময় ও চোখ তুলে তাকালো না। মন্জুর নরম স্বরে বললো, জামাল, চা খাবে?

—না, চা খাবো না।

—তোমার তো বেতন হবে না, চলবে কিভাবে?

—চলবে। আল্লাহ চালাবে।

মন্জুর গম্ভীর স্বরে বললো, তোমাকে চাকরি খুঁজতে হবে জামাল। আমার মনে হয় না তুমি আর এই চাকরিতে ব্যাক করতে পারবে।

—খুঁজতে হইলে খুঁজব।

—তোমার দুই মাসের বেতন কতো জামাল?

—দশ হাজার পাঁচশ টাকা।

মন্জুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আমি তোমাকে দুই হাজার টাকা দিচ্ছি জামাল। তুমি টাকাটা রাখো, তোমার কাজে লাগবে।

—টাকা নিব না।

—কেন নিবে না? নাও, ফেরত দিতে হবে না।

জামাল দৃঢ় স্বরে বললো, হারামের টাকা খাই না। আমি চুরি করি নাই। টাকা এই অফিসেরই কেউ চুরি করছে। আপনেও করতে পারেন। তাই আপনের কোনো টাকা আমি নিব না।

মন্জুর থতমত খেয়ে গেছে। ও কোনো কথা বলতে পারছে না। জামাল এখন সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। জামালের দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে যেটা মন্জুরকে বাকরূদ্ধ করে ফেলেছে। ওর নিজেকে খুব ছোট আর তুচ্ছ মনে হচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে যে জামাল এভাবে আর কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ও লজ্জায় মরে যাবে। এর আগে কখনও মন্জুরের এমন কোনো অনুভূতি হয়নি। ওর গলা শুকিয়ে আসছে। বমি ভাব হচ্ছে।

জামাল অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরেও মন্জুর কিছুক্ষণ উদ্ভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। ওর পকেটে তিরিশ হাজার টাকা। সেই টাকার ওজন তেমন না, কিন্তু মন্জুরের মনে হচ্ছে প্রচন্ড ভারী কিছু একটার কারণে ও কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে সেই বোঝাটা পকেটে না, বুকের ভেতরে কোথাও। মনে হচ্ছে সেই বোঝাটা ওকে পৃথিবী থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। এমন কোথাও যেখানে চারদিকে শুধু ওর নিজের মতোই অনেকগুলো মন্জুর। সেই মন্জুরগুলো ওর দিকে তাকিয়ে বিদ্রূপের হাসি হাসছে।

মুঠোফোন বাজছে। মন্জুর ফোন ধরলো। ঈশিতা ফোন করেছে। মন্জুর হারানো কণ্ঠে বললো, হ্যালো ঈশিতা।

ঈশিতা তরল কণ্ঠে বললো, হ্যালো হ্যান্ডসাম। কাজ হয়েছে?

—হয়েছে।

—কতো চুরি হয়েছে আজকে?

—এক লাখ।

—হুম … বিলকিস কতো নিয়েছে?

মন্জুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, নব্বই।

—গুড। তুমি দশ নিয়ে ভালো করেছো, ও সন্দেহ করবে না। রেকর্ডস ঠিক আছে তো?

—হ্যা, ঠিক আছে। স্যার জানে সেলসের এন্ট্রি ষাট হাজার টাকার। কিন্তু আমি সেলস রেকর্ডে এক লাখ চল্লিশই রেখেছি। জামালকে বিশ হাজারের চোর দেখানোর জন্য একাউন্টসের এন্ট্রিতে চল্লিশ হাজার লেখা আছে। কিন্তু আসল কাগজপত্রে এক লাখের গ্যাপ। এখন তদন্তে বের হবে বিশ নিয়েছে জামাল, আশি নিয়েছে বিলকিস। অরিজিনাল ইনভয়েসের কপি স্যার গায়েব করতে বলেছেন। একাউন্টসের ইনভয়েসে ষাট আছে, তবে সেটা ভুয়া প্রমাণ করা যাবে। সেলসে আসল ইনভয়েস আছে।

—ভেরী গুড। তাহলে একাউন্টসে এক লাখ টাকা চুরি হয়েছে। ফ্যান্টাস্টিক। তুমি আজকে আমার কাছে অরিজিনাল ইনভয়েস নিয়ে আসবে। এবার আমি ঐ কুত্তীকে অফিস থেকে বের করবো। তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না। তোমার কিছু হবে না। তুমি এখন অফিস থেকে বের হও।

মন্জুর তার কামরা থেকে ইনভয়েস নিয়ে মুঠোফোন হাতেই অফিস থেকে বের হল। পাঁচটার কাছাকাছি বাজে। রাস্তায় প্রচন্ড ভিড় … কোলাহল আর হর্ণের শব্দ ছাপিয়ে ফোনে ঈশিতার তরল কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

—শোনো, ও আজকে বাসায় আসবে না। আমি এখন বাসায় একা। এসে পড়ো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আজকে নতুন একটা গোলাপী ব্রা পরেছি। সাথে গাঢ় লাল জি স্ট্রিং প্যান্টি। তুমি এসে সেগুলো খুলবে। গ্র্যান্ড ওপেনিং। সময় নষ্ট কোরো না।

মন্জুরের এখন আর কিছুক্ষণ আগের কোনো স্মৃতি মাথায় নেই। ওর মাথায় এখন গোলাপী ব্রা আর লাল প্যান্টি পরা ঈশিতার দৃশ্য। সেই ভাবনার মধ্যে থেকেই ও দেখলো যে অফিসের সামনের ফুটপাথের উপরে একটা চায়ের দোকানে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে জামাল বসে আছে। জামালকে দেখতে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ও অজ্ঞান হয়ে ফুটপাথে ঢলে পড়বে।

তবে জামালকে দেখে এখন আর মন্জুরের বুক ভারী লাগছে না। ওকে দেখে মন্জুরের হাসি পাচ্ছে। মন্জুরের এমন অনুভূতি আগেও বহুবার হয়েছে। নতুন কিছু না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *