শরাব সাকি
চোখজোড়া আর কতই দেখে
তারচে’ বেশি মনের ঘটন।
ঘটন ঘটে আলোছায়ায়
অদৃশ্যে রয় পিয়াসি মন।
মাতাল আমি শরাব বিনে
মুগ্ধ সাকির আঁখির প্রতি
চোখের তীরে হৃদ-মাঝারে
নিত্য গড়ি প্রেমের আসন।
প্রেম ও দানবের উৎপাত
ভালোবাসবার এলো না অবসর
বুকের ধুকধুকানি
বুকেই থেমে গেল সময়ের ব্যবধানে
এ হাতে গোলাপ ছিল
পকেটের ভাঁজে ছিল প্রেমের চিরকুট
পতঙ্গের মতো প্রেমের আগুনে
খানিক পুড়ে
শেষে সন্ন্যাসমনা একজন সংযমী মানুষ হয়ে
এখনো শ্বাসরুদ্ধকর স্বপ্নের ঘোরে
কাল কাটাচ্ছি
বুক ভালো আছে, ভাঙেনি এখনো
মুখ ভালো আছে, পোড়েনি আজও
শুধু ভেঙে গেছে স্বপ্ন
পুড়ে খাক হয়ে গেছে দৃষ্টি
চৈত্রের দুপুরগুলো প্রিয় সরস অংশটুকু অধিগ্রহণ করে
চৌচির করে গেছে নির্দয় সাধনায়
কালো কালো মেঘে বৃষ্টি হবে ভেবে
চাতকের স্বভাবে চেয়েছি
মিছে আজ সব আয়োজন
মিছে আজ পথ চাওয়া পথিকের
আজ পথ নয়, কাঁটার ফাঁকে ফাঁকে সুকৌশলে ঘাপটি মেরে বসে আছে দানব
সমস্ত নান্দনিকতা আজ
দানবের উৎপাতে বিরক্ত
প্রেমের নামে কেমন জুয়া চলে প্রকাশ্যে
আজ ও আগামীর প্রেম
বিশ্বাস ঘাতকের নির্মমতায় রক্তাক্ত
মুক্তি পাবার আশায় অসহায় হরিণের মতো ছুটছে দিক বিদিক।
অঝোর শ্রাবণ
আর যদি দেখা না হয় আমাদের
চোখের গভীরতা মাপার সুযোগ হারাই চিরতরে যদি;
স্পর্শে আর যদি না পাই হৃদয়ের উষ্ণতা-
প্রেমের মৃত্যু বলব তারে!
এইসব প্রশ্ন একদিন সময়কালীন
সমাধানের ডাক দেবে ঠিক
শুধু আমাদের অঝোর শ্রাবণ
বরষার প্লাবিত জলে ভেসে
একাকার হয়ে যাবে।
তোমার সংসার হল,
এক টুকরো সুখের লোভে অতীত ভুলে
ভবিতব্য বেছে নিলে!
আমার হৃদয়ের নাম দিলে কিছু?
তোমার চোখে স্বপ্নের বীজ বুনে
আজ আমি নির্ঘুম রাত্রিচরী।
আমাদের কথাগুলো কাব্য হবার কথা ছিল, কিন্তু বিরহের গল্প হয়ে গেল।
মনপোড়া আগুনে ধিকিধিকি জ্বলেপুড়ে
নিঃশেষ হব একদিন; তবুও
আসবে না সুখস্মৃতি রোমন্থক তিথি
বরফের পাশে গরম হাওয়ার ডাক!
শুকতারার দিনলিপি
কম্পমান দোলকে গড়িয়ে যাবে সময়,
খানিকটা এপাশের বাতাস
গন্ধ ছড়াবে ওপাশের মহুয়ার গায়।
হাওয়ার পালকী থেমে গেলে,
অনির্ধারিত অবসরে যদি
দেখা হয় ফের—
দৃষ্টিপথ ঢেকে দেবে
অবিশ্বাসের নিঃশব্দ আঁধার।
এইসব দিনরাত্রি—
রোজনামচা,
দিনযাপনের কড়চা—
অলক্ষ্যে খুঁজে নেবে বিশ্রামের কক্ষ।
শুকতারা নিভে যাওয়া রাতে
প্রকৃতির সঙ্গে চলবে মান-অভিমান।
আলোকের আয়োজন ফুরিয়ে যাবে তবু—
পেঁচা আর ফিরবে না দৃষ্টির অধিকারে।
ঘুমঘুম স্বপ্নে নীরবতা বাঁধবে বাসা,
ঘরহারা কাঠুরের চোখে
কাঠ বুঝি নেই আর তার অধিকারে।
আরও অভাবী, আরও নিঃস্ব—
আবির্ভূত বন-বনানীতে।
নিরন্ন মানুষের কষ্ট নয় শুধু—ব্যথা ঘিরে যত আরও ব্যথিত তার চারপাশ,
মূল্যবোধের দারিদ্র্যে।
মেঘেদের ঘরবাড়ি জলে ভরা নয়,
নোনতা জলের দেহে জেগে থাকে
অরূপ বিস্ময়।
আমাদের গল্প আমাদেরই মতো
ডাহুকের ডাকে চিরে যায় নৈশব্দ্যের বুক
কালো আর গাঢ় অন্ধকার পাশাপাশি মিশে যেন খেলা করে কাকের পাখনায়।
অন্ধকারকে আপন ভাবতে ইচ্ছে জাগে
রাত শেষের আগে।
স্বপ্নবিলাসে বাঁধ সাধে শব্দযোগ
কার যেন বেরোবার তাড়া আছে বাইরে
কে যেন হাঁক দেয় তেল-নুন নাইরে
মৃতবৎ হৃদয়ের কম্পন রুপ নেয় কামারের হাপরে।
মরা নদী ডাক দেয় বজ্রের
ঢেউহীন জলে বংশবৃদ্ধি চলে কচুরিপানার
কেন্নোরা পথ হাঁটে নির্ভয় চরণে
ফুলগুলো এলোমেলো পড়ে থাকে ঝরাপাতার কাছাকাছি; শিথানে।
আজ এই হেমন্তের ফল ও ফসল
হাসি হয়ে ফিরে আসে কৃষাণীর গালে
আজ এই তপ্ত দুপুরের রোদ যেন
রূপকথার গল্প;
দোল খায় জারুলের ডালে।
কোনো এক মায়াভরা মুহুর্ত
দাগ কেটে যায় মনে নিমেষে
আমাদের সান্ত্বনা ঢেকে দিক
বিদগ্ধ হৃদয়ের ক্ষত;
আমাদের গল্প হোক আমাদেরই মতো।

জামান আল আসাদ, জন্ম ১৯৮০ সালে, ঝিনাইদহ জেলায়। স্কুল ও কলেজের পাঠ শেষ করেন নিজ উপজেলা হরিণাকুণ্ডুতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড এবং ঢাকা আইডিয়াল ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা।
সাহিত্যের পথে হাঁটাচলা ছোটবেলা থেকেই। প্রধানত কবিতা ও গান লেখার চর্চা বেশি করেন। তবে নিবন্ধ, প্রবন্ধ, ছোটগল্পসহ সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় রয়েছে অনিঃশেষ আগ্রহ।
ধ্রুপদী সাহিত্যের রস নিঃসৃত উপাদানে তৈরি করেন সমকালীন বাস্তবতা। পৌরাণিক কাহিনীর প্রতি রয়েছে অদ্ভুত আকর্ষণ। আবার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয়ে আলোকপাত করেন নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
কবিতার সাথে তার বোঝাপড়াটা বেশ সাবলীল। গানকে ভাবতে পারেন দৈনন্দিন জীবনের অনুসঙ্গ করে। সূফী দর্শন, লোক-সাহিত্য ও বাউল সংগীতের গভীর অনুরাগী।
তার সৃষ্টিতে রয়েছে অসাধারণ ব্যঞ্জনাময় শব্দের প্রয়োগ যা পাঠককে এক কল্পনাশ্রয়ী সাহিত্যরসের নদীতটে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।