বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্বের মধ্যে রয়েছে সহাবস্থানগত দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বের প্রকাশ বাঙালির প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়। কারো কারো মতে, মুসলমানিত্বের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। কারো কারো মতে, মুসলমানিত্বকে অস্বীকার করে শুধু বাঙালিত্ব জাহির করাতে রয়েছে ধর্মীয় অবমাননা।
প্রথিতযশা কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে। পরস্পরের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি জাহিদ সোহাগ।
জাহিদ সোহাগ
ইসলাম ধর্ম পালনের সঙ্গে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের কি কোনো বিরোধ আছে? থাকলে বা না-থাকলে কেন?
মজিদ মাহমুদ
এ প্রশ্নের সঠিক জবার দেয়ার উপযুক্ত লোক হয়তো আমি নই। ‘ইসলাম ও পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের মধ্যে বিরোধ আছে’—এটি একটি ধর্মতাত্ত্বিক কর্তৃপক্ষের দাবি। ইসলাম আদতে একটি ধর্ম হলেও এর ইমাম ভিত্তিক নানা শিক্ষায়তন রয়েছে, যার আলাদা আলাদা মত ও ব্যাখ্যা রয়েছে—তাফসির ও ফতোয়া রয়েছে। আবার পাশাপাশি এদেশে পয়লা বৈশাখ পালনের দীর্ঘকালীন ইতিহাস রয়েছে। ধর্মের বাইরে আছে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। এ সবরে উপরে আছে লোক-সংস্কৃতি-রাষ্ট্র ও ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের কথা না ভেবেই যা বহুকাল ধরে চলে আসছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রেও পহেলা বৈশাখ সাংস্কৃতির একটা গুরুত্ব আছে।
বাঙালি সংস্কৃতির মূল উপাদান এসেছে মূলত প্রাক-হিন্দু ও প্রাক-মুসলিম যুগের বৌদ্ধ অনুষঙ্গ থেকে।
ইসলামে কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে তার কয়েকটি মূলনীতি আছে—যেমন ইসলামের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘শিরক’—কোনো বস্তু বা ধারণার উপরে আল্লাহ’র ক্ষমতা আরোপ করা। ইসলামি-আরবে ছিল না এমন নতুন কিছুর ক্ষেত্রে যা অশ্লীল কিংবা ক্ষতির কারণ কিনা। ইসলামি সংস্কৃতিতে ছবি আঁকা, আলপনা করা, গান-বাজনার মতো বিনোদন নিষিদ্ধ বলে ধর্মতাত্ত্বিকদের একটি অংশ দাবি করে থাকেন। তাই বলে ইসলামি দুনিয়া ছবি আঁকা, সংগীতচর্চার মতো শিল্পসৌকর্য অন্য কোনো সভ্যতা থেকে কম করে নি। ইসলাম যখন আরব থেকে বাইরের দেশগুলোতে ধর্মের ও শাসনের প্রয়োজনে ছড়িয়ে পড়েছিল—তখন থেকেই এই সংঘাত শুরু হয়েছে। নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বেগ পেতে হয়েছে। মহানবির যুগে যা ছিল না, তাকে ইসলামি কর্তৃপক্ষ বিদাত বলে অভিহিত করে। পয়লা বৈশাখের মতো বিষয় তো তখন থাকার কথা নয়। তাই একটি অংশ এটাকে বিদাত বলে বাতিল করতে চায়। তারা মনে করে এই উৎসবের গান-বাজনা, আলপনা ও মঙ্গল-শোভাযাত্রা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থী। অথচ বাংলা-নববর্ষের প্রবর্তক মুসলমান শাসক মোগল আকবর। তিনি খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে সৌরপদ্ধতির বছর গণনা শুরু করেছিলেন, যে কারণে এটাকে ফসলি সালও বলা হয়। কূটাভাস হলো, ভারতে মুসলমানরা এই সালের প্রবর্তন করলেও এক শ্রেণির মুসলমান এটাকে বিদাত বা গোনাহ’র কাজ মনে করেন। আরবে ইসলাম আসার পরে প্রাক-ইসলাম যুগের আরব সংস্কৃতির অধিকাংশ ইসলামি সংস্কৃতি হিসাবে আত্তীকরণ হয়েছিল।
জাহিদ সোহাগ
বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বলা হয় কেন?
মজিদ মাহমুদ
এটি আসলে প্রধানতন দুই সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব, ক্ষমতা ও আধিপত্যের লড়াই। সংখ্যা-গরিষ্ঠের ধর্মকেন্দ্রিক আরব সংস্কৃতি এবং স্থানীয় সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্বের ও দখলের লড়াই। গোড়ায় গলদ হিসাবে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই এই সংকট রয়ে গেছে—মাদরাসা বনাম স্কুল। মাদরাসা শিক্ষা শেষে অধিকাংশ মানুষ গ্রামগঞ্জের মাদরাসায় শিক্ষকতা, মসজিদের ইমাম, কাজি হিসাবে কাজ নিতে বাধ্য হয়। তারা মিলাদ, জানাজা ও জলসার মতো জীবিকার সঙ্গে যুক্ত হয়। কর্মসূত্রে জনগণের কাছাকাছি থেকে তাদের পরিচালিত করার চেষ্টা করে। এভাবে এক দেশে পৃথক শিক্ষানীতি রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। সংস্কৃতি কোনো অনড় অবিচল পাথর নয়, বহুদিনর চর্চার দ্বারা এমনকি সংঘাতের দ্বারাও নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। বাঙালি সংস্কৃতি মূলত বাঙালিদের সংস্কৃতি—এটি না হিন্দু সংস্কৃতি, এটি না মুসলিম সংস্কৃতি। বাঙালি সংস্কৃতির মূল উপাদান এসেছে মূলত প্রাক-হিন্দু ও প্রাক-মুসলিম যুগের বৌদ্ধ অনুষঙ্গ থেকে।
বাঙালি মুসলমানরা যদি শুধু আরবের সংস্কৃতি পালন করে, তাহলে তো বাঙালির পরিচয় থাকে না।
বাঙালি যেহেতু বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক জাতি, সেহেতু লক্ষ করবেন, বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ—যার সময়কাল প্রায় চারশ বছর, যে কবিতাগুলো লিখেছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। যেখানে আছে বাঙালিদের পেশা, খাদ্যাভ্যাস, বিয়ে-যৌনতা ও উৎসবের বর্ণনা। সেই সময়ের পাল শাসকগণও ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাম্বলী। তারপর সেনরা বাংলার প্রথম হিন্দু তথা উচ্চবর্গীয় ব্রাহ্মণ্য-চেতনার শাসক—যারা বাংলার লোক নন, বহিরাগত- বাংলা থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের দক্ষিণের কর্ণাটকের বাসিন্দা। সেন দরবারের কবিরা জাতে বাঙালি হলেও বাংলায় কবিতা করার অনুমতি পায় নি। জয়দেব, ধোয়ী, বোধায়নকে সংস্কৃতি ভাষায় লিখে জীবনযাপন করতে হয়েছে। বল্লাস সেন, বিজয় সেন চতুবর্গ ও কুলীন প্রথার প্রবর্তন করলেও ভাষার সঙ্গে যুক্ত না হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে তথাকথিত হিন্দু সংস্কৃতির বিকাশ ঘটার দাবি ধোপে টেকে না। এখানকার মানুষের মধ্যে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক ধর্মের সঙ্গে বহিরাগত সংস্কৃতির একটা মিশ্রণ ঘটিয়ে নিজেদের মতো ধর্ম-সংস্কৃতি পালন করত। সেন শাসকদের পরে বাংলায় তুর্কি, সুলতানি, মোগল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমল মিলে প্রায় আট শত বছর বিদেশি শাসন জারি ছিল। তাহলে কিভাবে বলা সম্ভব—বাঙালি সংস্কৃতি মানে শুধু হিন্দু সংস্কৃতি! বিগত বারো-শ বছরের বাংলা শাসনের ইতিহাসে সেন আমলের দুশ বছর বাদে এক হাজার বছর অন্য ধর্মের ও সংস্কৃতির লোক বাংলা শাসন করেছে। বলা চলে শাসন সুবাদে বাঙালিরাই হিন্দু হয়েছে, বাঙালিরাই মুসলমান হয়েছে। বাঙালি জাতিই হিন্দু ও মুসলমান ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর অভিন্ন উৎস। আরবদের কাছে যেহেতু সিন্ধু থেকে গঙ্গা পর্যন্ত সবটার নাম হিন্দস্থান, সেহেতু মুসলমানরাও ভারতবর্ষের অমুসলমানদের হিন্দু মনে করে। যেমন ভারতীয়রা সব বিদেশিকেই যবন মনে করত। গ্রিক, হুন, শক, মুসলিম, পাঠান, মোঙ্গল—তাদের কাছে এক। এমনকি নিজ দেশের বৌদ্ধদেরও তারা নেড়ে বলত, পরবর্তীকালে সেটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হতে থাকে।
জাহিদ সোহাগ
মুসলিমরা আরবের সংস্কৃতি পালন করবে না বাঙালি সংস্কৃতি? বাঙালি সংস্কৃতিকে কি অগ্রাহ্য করা সম্ভব?
মজিদ মাহমুদ
সংস্কৃতি একটা জাতির পরিচয়, বাঙালি মুসলমানরা যদি শুধু আরবের সংস্কৃতি পালন করে, তাহলে তো বাঙালির পরিচয় থাকে না। আবার আরর সংস্কৃতির কোনো কিছু পালন না করে তাহলে মুসলমানিত্ব থাকে না। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য আরব সংস্কৃতি তো পালন করতেই হবে। সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উপাদান ভাষা। সুতরাং বাংলা ভাষাকে অক্ষুণ্ন রেখে কিভাবে পুরোপুরি আরব সংস্কৃতি পালন সম্ভব? ইসলামের প্রথম যুগে আরবরা আশেপাশের যে-সব ভূখণ্ড অধিকার করেছিল তারা আরবদের ভাষাও নিয়েছিল, এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশ—তারা আজ আরব বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু পারস্য দখল করলেও তাদের উন্নত সংস্কৃতির কাছে আরবরা খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি। পারস্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, কিন্তু তাদের সংস্কৃতির অনেক উপাদান আরবদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। এমনকি ফার্সি ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি—আরবি সংস্কৃতির থেকে শক্তিশালী বলে মুসলিম অধিকৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ইরানি মুসলিম পোশাক-পরিচ্ছদ, সৌরভ ও খাদ্য ভারতের উচ্চবর্ণের হিন্দুরাও সানন্দে গ্রহণ করেন—রবীন্দ্রনাথের পরিবারও তার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলা সুদূর দিল্লি থেকে শাসিত হয়েছে—বিদেশি শাসকদের অনুগামীদের দ্বারা। ফলে বাঙালির বীরত্ব কৃতিত্ব ইতিহাসে স্বীকৃত নয়।
ইরানিরা তাদের সেই তিন হাজার বছর আগের প্রবর্তিত অগ্নি-উপাসনাকালের ‘নওরোজ’ উৎসব এখনো জাঁক-জমকপূর্ণভাবে পালন করে। এতে তাদের মুসলমানিত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে—বাঙালি সংস্কৃতির লড়াইয়ের কারণেও। পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অন্যতম লড়াই ছিল সাংস্কৃতিক লড়াই—ভাষা আন্দোলন তার প্রধান নিয়ামক। পয়লা বৈশাখ পালন, রবীন্দ্রসংগীত এবং অবিকৃত নজরুল-সংগীত গাওয়ার অধিকার আদায় ছিল এই আন্দোলনের অংশ। হিন্দু ও মুসলমাম—দুই বৃহত্তর ধর্মীয় জাতির ভাষা বাংলা—অনেক ক্ষেত্রে অভিন্ন অতীত। এমনকি ভবিষ্যৎ নির্ধারিত তাদের এই ভূখণ্ডে। সুতরাং বাঙালি সংস্কৃতিকে অবলম্বন করেই নিজ নিজ ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই হওয়া উচিত। তাছাড়া কোনো সংস্কৃতিই অবিমিশ্র নয়। এমনকি আরব সংস্কৃতিও নয়, তারা যখন অন্যদেশে শাসন শোষণ করতে গেছে তখন অধিকৃত অঞ্চলের সংস্কৃতিও তাদের সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে। ভারতে মুসলমান আগমনের ফলে হিন্দু মুসলমান পরস্পরের সংস্কৃতির বিনিময়ের দ্বারা ঋদ্ধ হয়েছে। ইরানের মতো এদেশেও আরবি সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন ধরনের পির-ফকির-আউলিয়া-বাউল-সুফি তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে। আরব-সংস্কৃতি ও বাঙালি সংস্কৃতি পালনের মূলনীতি হলো দুই সংস্কৃতির মধ্যে বিরোধ তৈরি না করা।
জাহিদ সোহাগ
‘বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট’ এই কথাটি নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
মজিদ মাহমুদ
উনিশ-শ একাত্তর সালের আগে ইতিহাসে বাংলা কখনো বাঙালি শাসন করে নি। যে জাতির নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নেই সেই জাতির পরিচয়ের স্বীকৃতি নেই। সারা ভারতবর্ষে বাঙালিই ছিল সংখ্যাধিক্য, কিন্তু তারা স্বাধীন ছিল না। এমনকি স্বাধীন সুলতানি আমল বাদ দিলে বাংলা সুদূর দিল্লি থেকে শাসিত হয়েছে—বিদেশি শাসকদের অনুগামীদের দ্বারা। ফলে বাঙালির বীরত্ব কৃতিত্ব ইতিহাসে স্বীকৃত নয়। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে যারা উচ্চবিত্ত বলে খ্যাত তারা মূলত বিদেশি শাসকদের রাজ্য শাসনের সহযোগী গোষ্ঠী। নিম্নবর্গের সংখ্যাধিক্য বাঙালি কৃষক-মজুর খেটে খাওয়া মানুষ—তারা জল ও তেলের মতো এক সঙ্গে বাস করলেও পরস্পরকে সম্মান করতে পারে নি, তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হীনম্মন্যের বোধ। ব্রিটিশের শেষ দিকে বেঙ্গল প্রভিন্স ইংরেজের দিল্লির অধীনে বাঙালি শাসন করলেও তাদের মধ্যে বাঙালিত্বের চেয়ে ধর্মীয় সংস্কৃতি প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছিল। ফলে শেরে বাংলা-সোহরাওয়ার্দী ও শ্যামাপ্রসাদের পক্ষে বাঙালি হিসাবে বাংলার ঐক্য ধরে রাখার তাগিদ ছিল না। পাকিস্তান পর্বের তেইশ বছরে চলে বাঙালির প্রথম সংঘবদ্ধ সাংস্কৃতিক লড়াই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সে সংস্কৃতিকে প্রবল স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের মাহাত্ম্য দিয়েছে। বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট উত্তরণের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু সেই পরিচয় অবিমিশ্র নয়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডার ফলে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সংকট পুরোপুরি ঘোচানো সম্ভব হয় নি।
বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালির একমাত্র ধর্ম-নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক উৎসব।
বাঙালি সংস্কৃতিই বাঙালির আত্মপরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। বিশ্ব-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি। বাংলা সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করলে আমরা যেমন আমাদের পূর্বপুরুষদের ভুলে যাব, তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই দুর্বল হয়ে যাবে। বাঙালি মুসলমানরা বরং এই ভেবে গর্ব করতে পারত যে হিন্দু সংস্কৃতিও আমাদের, মুসলিম সংস্কৃতিও আমাদের—দুই সংস্কৃতির মিশ্রণে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দাবিদার তারা। কেবল হিন্দু সংস্কৃতির পক্ষে এই ঋদ্ধ-উত্তরাধিকার দাবি করা সহজ নয়। যেমন ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্য এশিয়া ও পূর্ব-ইউরোপের মুসলিম দেশগুলো অনেকটা পেরেছে।
জাহিদ সোহাগ
আপনার পয়েলা বৈশাখ উদ্যাপন কেমন?
মজিদ মাহমুদ
বিগত বছর পাঁচেক যাবৎ আমি আমার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার চরগড়গড়ি গ্রামে বেশ জাঁক-জমকপূর্ণভাবে পয়লা বৈশাখের উৎসবের আয়োজন করে থাকি, যেটি ‘চর গড়গড়ি মঙ্গল-উৎসব’ নামে পরিচিত। এলাকার লোকজনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশের বাইরে থেকে অনেকে এই উৎসবে অংশ নেন। প্রথম দিকে এলাকার কিছু লোক বিজাতীয় বলে এই উৎসবের বিরোধিতা করলেও এখন আর করে না। বরং সর্বশ্রেণির মানুষ আগ্রহ নিয়ে অংশ গ্রহণ করে। তবে করোনার কারণে গত বছর থেকে আগের মতো করা সম্ভব হচ্ছে না।
মনে রাখতে হবে, বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালির একমাত্র ধর্ম-নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক উৎসব। বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি হিন্দু ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে নিজস্ব অনুষ্ঠান হিসাবে অংশ নিতে পারে। এই অনুষ্ঠান ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এমনকি আর্থিক শ্রেণির আধিপত্য ব্যতিরেকে করা সম্ভব। উচ্চবিত্ত শ্রেণিও এই দিন কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির পূর্বপুরুষের খাবার পোশাক ও বিনোদনের অংশিদার হয়ে ওঠে।