উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাংস্কৃতিক চর্চার ধারাকে সমৃদ্ধ করতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পঞ্চমবারের মতো উত্তর আমেরিকা আবৃত্তি উৎসব ২০২৫।
চলতি বছরের ২রা, ৩রা ও ৪ঠা মে অনুষ্ঠিত অন্তর্জালে আয়োজিত এই উৎসবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন শহর থেকে অংশ নেন অর্ধশতাধিক বাচিকশিল্পী ও আবৃত্তিপ্রেমী, কবি, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী। আর অন্তর্জালে যুক্ত হন অসংখ্য দর্শক ও শ্রোতা, ভরিয়ে দেন এই আয়োজনকে তাদের শুভাশীষের বর্ষা ধারায়।
এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল: “মানবিক বোধে উচ্চারিত হোক শান্তির গান”, যা সমসাময়িক বিশ্ব বাস্তবতায় নতুন প্রাসঙ্গিকতা এনেছে। উৎসবের সূচনা ও সমাপ্তি উভয়ই ছিল মননশীল বক্তৃতা, কবিতাপাঠ ও হৃদয়ছোঁয়া সংলাপে সমৃদ্ধ।
উদ্বোধনী দিনে অতিথি হিসেবে ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বাংলাদেশর বাচিক শিল্প জগতের দুই কিংবদন্তি সরকার কবীর উদ্দিন, ইকবাল বাহার চৌধুরী, মন্ট্রিয়াল থেকে শিশু সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক লুৎফুর রহমান রিটন, এবং বাংলাদেশ থেকে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি লায়লা আফরোজ।
তাঁদের প্রত্যেকেই নিজেদের বক্তব্যে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চার এই প্রয়াসকে সময়োপযোগী এবং আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেন, এবং এই উৎসবের ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আবৃত্তি ও নাট্য প্রশিক্ষক এ আবৃত্তিকার ড. ভাস্বর ব্যানার্জী, বিশিষ্ট আবৃত্তি ব্যাক্তিত্ব মীর বরকত, পশ্চিমবঙ্গের থেকে নাট্য ও আবৃত্তিশিল্পী ও প্রশিক্ষক অমিতাভ কাঞ্জিলাল, বিশিষ্ট আবৃত্তি ব্যাক্তিত্ব ও প্রশিক্ষক পার্থপ্রতিম পান, ও ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অগ্রজ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রোকেয়া হায়দার।
তাঁরা প্রবাসে আবৃত্তি শিল্পের এই অগ্রযাত্রায় ও এই শিল্পের প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহ ও চর্চা দেখে অভিভূত হন এবং ভবিষ্যতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য রাখেন। সকলেই একটি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন তা হল বর্তমান বিশ্বের সকল বিদ্বেষ ও হানাহানির অবসান হোক, মানুষ মুক্ত আলো বাতাসে শ্বাস নিয়ে মস্তক উন্নত করে বাঁচুক।
তিন দিন ব্যাপী এই উৎসবে যুক্ত হন উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহর থেকে ১০টি আবৃত্তি সংগঠন, শিশু কিশোর আবৃত্তি শিল্পী, কবি, সংগীত শিল্পী ও সতন্ত্র আবৃত্তিশিল্পীরা। এবারের কবি পর্ব দুটো উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত বাংলা সাহিত্যের দুই কবি, কবি হেলাল হাফিজ ও কবি দাউদ হায়দারের স্মরণে। প্রথম কবি পর্বে যুক্ত ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের এই সময়ের জনপ্রিয় লোককবি যিনি প্রান্তিক মানুষের কবি বলে পরিচিত, কবি দেবব্রত সিংহ। প্রবাসে কবিতা এবং আবৃত্তির এই প্রসারে তিনি অভিভূত হন। তিনদিন জুড়ে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ-সহ বিভন্ন কবির বৈচিত্র্যময় কবিতা।
সংগঠনের বলয়ের বাইরে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত যে কজন আবৃত্তিশিল্পী ও প্রেমী এই উৎসব নিয়ে কাজ করছেন তারা হলেন মন্ট্রিয়াল থেকে তোতন আফাজ, আটলান্টা থেকে রিজোয়ান হদয় ও রাশেদ চৌধুরী, হ্যামিল্টন থেকে নাঈমা সিদ্দীকা, ডালাস থেকে তারেক ইয়াসিন উজ্জ্বল, রুনি সরকার ও মারুনা রাহী।
উৎসব শেষে আয়োজকেরা জানান, এই আয়োজন শুধু অনুষ্ঠানমালাই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বন্ধন গড়ে তোলার প্রয়াস উত্তর আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বজুড়ে এবং এই প্রত্যয়ে তারা আগামীদিনগুলোতেও কাজ করে যেতে বদ্ধপরিকর।
অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে তারা তাদের পরবর্তী উৎসব আয়োজনের দিন ঘোষণা করেন ১লা, ২রা ও ৩রা মে, ২০২৬। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে ও সরাসরি অংশগ্রহণমূলকভাবে উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা তারা করছেন।
-নাঈমা

test