সকালের আলোটা তখনও ধানের ক্ষেতে লুটোপুটি করছে, কুয়াশার পর্দা ভেদ করে সে আলো যেন ঘুমভাঙা গ্রামজীবনের গায়ে মাখা সোনালি গল্প হয়ে দাঁড়ায়। মা তখন গোয়ালঘর থেকে গরুর দুধ দোয়েন, কাঁসার পাতিলে ধাতব শব্দ বাজে। দুধের পাতিলে শিশিরের ফোঁটা মিশে যেত, যেন প্রকৃতি নিজেই চোখের জল ঝরাচ্ছে আমাদের ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে। সেদিনও মা বলেছিলেন, “তোর বাবার চিঠি আসবে আজ।” তাঁর গলায় এমন এক শিহরণ ছিল, যেন তিনি কোনো দূরাগত পাখির ডাক শুনতে পেয়েছেন, এমন এক শব্দ যা শুধু তাঁর হৃদয়ই বুঝতে পারে। পুকুরের পাড়ের নিমগাছটার ডালে ডালে শিশির জমে জমে কাঁপছিল— আলোয় ঝিকমিক করছিল সেই কাঁপুনি। মনে হচ্ছিল, চিঠির কালিতে লেখা কোনো গল্পের পাতা যেন ঝুলছে গাছে, বাতাসে একটুখানি দুললেই বুঝি পড়বে মাটিতে। আমি তখন বুঝিনি, এক টুকরো কাগজের জন্য মানুষের হৃদয় এতটা উতলা হয় কী করে; এক চিঠিই হতে পারে কারো বেঁচে থাকার সবচেয়ে মধুর অপেক্ষা।
বাবা ছিলেন রেলওয়ে ক্লার্ক। দূরে, খুলনার কোনো এক স্টেশনে, যেখানে ট্রেন থামে, আবার চলেও যায়, কিন্তু মানুষ থেকে যায় প্রহর গুনে। প্রতি মাসের শেষে তাঁর চিঠি আসত— মোটা খামে ভরা তিন পৃষ্ঠা, কালো কালিতে লেখা এক ব্যক্তিগত মহাকাব্য। মা চিঠির খামের আঠা গালে লাগিয়ে রাখতেন, যেন ভালোবাসার গন্ধ শুকিয়ে না যায় কোনোদিন; যেন বাবার ছোঁয়া জমে থাকে তাঁর মুখে। চিঠির প্রতিটি শব্দ তিনি কণ্ঠস্থ করতেন, যেন বাবার স্বর তাঁর কানে বাজে সন্ধ্যার হাওয়ায়। একবার চিঠি দুদিন দেরিতে এলে মা পুকুরঘাটে বসে কেঁদেছিলেন, যেন পৃথিবীর সব অপেক্ষা সেদিন তাঁর দু’চোখে এসে জমে গিয়েছিল। ধানক্ষেতের আলো তখন তাঁর চোখের জলকে সোনা বানিয়ে দিয়েছিল— এক রকম নীরব কবিতা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল পুকুর পাড়ে, আমাদের ঘরে, আমাদের দুচোখে।
চিঠি আসত অমলের হাত ধরে। অমল ডাকপিয়ন, কিন্তু আমাদের কাছে সে ছিল মহামায়া, দূর থেকে আসা স্বপ্নের দূত। সে জানালার নিচে দাঁড়িয়ে সাইকেলের ঘন্টা বাজাত, “দিদি, ঢাকা ফেরত!”—এই একটিমাত্র বাক্যেই মায়ের চোখ জলে ভরে উঠত। মা ছুটে যেতেন, পায়ের শব্দে উঠোন কাঁপত, খামের কোণায় বাবার হাতের লেখা দেখে বুকের ভেতর কান্না জমিয়ে রাখতেন দিনের পর দিন। যেন ওই লেখাগুলোতে বাবার নিঃশ্বাস লেগে আছে, তাঁর আদর মিশে আছে প্রতিটি বাক্যে। একদিন অমল বলেছিল, “আমারও তো কেউ চিঠি লিখে না।” তার চোখে সেদিন আমি দেখেছিলাম এক অদ্ভুত একাকিত্ব, যেন কেউ কোনোদিন তাকে ডাকেইনি। তারপর থেকে মা মাসে একবার অমলের নামে চিঠি লিখতেন— নকল চিঠি, কিন্তু তাতে ছিল সত্যিকারের মমতা। যেন সে-ও কারো প্রতীক্ষায় থাকতে শেখে, যেন তার জীবনেও অপেক্ষা বলে কিছু থাকে, একটা আলো জ্বলে উঠে কোনো এক শূন্য দুপুরে।
৯০-এর দশকে আমাদের স্কুলে “পত্রমিতালী” নামে এক অভিনব প্রথা ছিল, যা এখনকার প্রজন্মের কাছে রূপকথার মতোই শোনাবে। রাবেয়া, রাজবাড়ীর এক মেয়ে, লিখত ফরিদপুরের এক অচেনা ছেলেকে: “তোমার গ্রামে কি শিমুল ফুল ফোটে? আমাদের বাড়ির পাশে নদীতে ডুবসাঁতার দিতে ভয় লাগে না?” চিঠির কাগজে মিশে থাকত হাতের লেখা, সিঁদুররাঙা ভাষা, আর দূরবর্তী হৃদয়ের স্পর্শ। উত্তরে সে পেত: “শিমুল ফুলের রং তুমি দেখলে বুঝতে, লজ্জা কী জিনিস।” কী অপূর্ব বিনিময়, যেন কাগজের ভাঁজে গন্ধ থাকে হৃদয়ের। চিঠিগুলো হাতে হাতে ঘুরত, কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে— খেলার মাঠে, লাইব্রেরির পেছনে, অথবা খাতা-বইয়ের ভাঁজে। একবার রাবেয়ার চিঠি হারিয়ে গেলে সে তিনদিন না খেয়ে বিছানায় পড়ে ছিল, তার চোখে যেন একটা যুদ্ধ হেরে যাওয়া রাজকন্যার একা রাত কেটেছিল। এখনকার প্রজন্ম কি জানে, একটি কাগজের টুকরো হারানো মানে কারো স্মৃতি মুছে ফেলা, এক অদৃশ্য হৃদয়ের মৃত্যু?
১৯৯৮ সালের বন্যায় বাবার চিঠি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চারদিক জলমগ্ন, কিন্তু মায়ের চোখে ছিল চিঠির জন্য অদৃশ্য এক তৃষ্ণা। মা প্রতিদিন পোস্ট অফিসে যেতেন, হাঁটুসমান কাদা পেরিয়ে, ছাতা মাথায়, “কিছু এসেছে?”—এই প্রশ্নটাই তাঁর জীবনের ধ্বনি হয়ে উঠেছিল। একদিন অমল নিজেই ছুটে এসেছিল, ঘেমে-নেয়ে, হাতে ভাঙা এক খাম—ময়লা, ভেজা, তবে ভিতরে শব্দ ছিল জীবন্ত: “আমার জ্বর… ডাক্তার বলেছে…”সেই শেষ চিঠি। মা চিঠিটাকে বালিশের নিচে রেখে দিতেন, যেন বাবার নিঃশ্বাস এখনো গায়ে লাগে রাতে, ঘুম ভাঙলে চিঠির ছোঁয়ায় যেন জেগে ওঠে কোনো পুরোনো সন্ধ্যা। চিঠির নিচে লেখা ছিল: “মিষ্টি কর্পূরের গুঁড়ো পাঠালাম, রাতের বাতাসে মেখে নিও।” সেটা এখনো সংরক্ষিত আছে মায়ের সিন্দুকে, পুরোনো কাপড়ের নিচে, পলিথিনে মোড়ানো একটি মৃত প্রেমের মমি হয়ে, যার গায়ে এখনো ধরা পড়ে সময়ের ঘ্রাণ।
আজকে ফেসবুকে এক মেসেজ আসে: “হাই, হাউ আর ইউ?” জবাব দেই: “ফাইন।” তারপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কথাগুলো স্ক্রিনে মিলিয়ে যায়, যেন কখনো ছিলই না, কোনো অনুভূতির অস্তিত্ব ছিল না বলেই সব মুছে গেল। প্রিয়তমা একদিন ভিডিও কল করে বলেছিল, “কান্না পাচ্ছে।” আমি বলেছিলাম, “ইমোজি পাঠাচ্ছি।” হৃদয়ের ভার্টিক্যাল স্ক্রলে হারিয়ে গেল অনুভূতির ডকুমেন্ট, যেন কোনো ব্যাকআপ রাখা হয়নি ভালোবাসার ফোল্ডারে। অথচ ১৯৯৭ সালে শেফালী আপু লিখেছিল: “তোমার চিঠির কাগজে কপূরের গন্ধ পাই, মনে হয় তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরছ।” সেই চিঠির পাতা এখনো স্পর্শ করলে হাতে লাগে নস্টালজিয়ার গুঁড়ো, যেন হাজার বছর পুরোনো কোনো প্রেম এখনও আঙুলে রয়ে গেছে। এখন আর কেউ চিঠি লেখে না, তাই হয়তো ভালোবাসাও আর তেমনভাবে গায়ে লাগে না।
গত বছর অমলকে পেয়েছিলাম রিকশাচালক হিসেবে। পুরোনো পাড়ার এক গলিতে ভোরবেলা ধোঁয়াভেজা আলোয় তাকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম। বলল, “ডাক বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কেউ চিঠি লেখে না, সবাই শুধু কল করে, আর তা-ও যেন নিছক কর্তব্যবোধ।” তার পকেট থেকে বের করল ছেঁড়া একটি খাম—আমি চিনলাম, মায়ের হাতের লেখা নকল চিঠি। খামের কোণায় এখনো লেগে আছে হালকা কর্পূরের গন্ধ। অমল বলল, “এটাই তো আমার একমাত্র সম্পদ, এটাই প্রমাণ করে আমি কারো অপেক্ষায় ছিলাম, কেউ আমার অপেক্ষা করত।” ওই দিন বিকেলে দেখলাম, পুরনো ডাকঘরটার জায়গায় উঠেছে মোবাইল ফোনের দোকান। লাল-সবুজ এলইডি আলোয় ঝলমল করছে পুরোটা। ভেতরে ঢুকে বললাম, “চিঠি পাঠাব।” কেউ হাসল, “স্যার, কুরিয়ার সার্ভিস চান?” তাদের চোখে আমি যেন কোনো যাদুকর, যিনি প্রাগৈতিহাসিক কোনো কাহিনি খুঁজছেন।
এখনো মাঝরাতে জানালার পর্দা খুলে বসি। একবার বাতাসে কাঁপা পাতার শব্দ শুনলে মনে হয়, অমল সাইকেলের ঘন্টা বাজাবে। মায়ের পদশব্দ শুনতে পাব, সিঁড়ির বাঁক ধরে ছুটে আসবে তাঁর অস্থির পায়ের তাল। খামের আঠায় লেগে থাকা ভালোবাসার গন্ধ নেব, দুধের মতো কাঁচা কোনো অনুভূতি যা এখন বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এখন শুধু ফেসবুকের নোটিফিকেশন বাজে— একটি লাল বৃত্ত, যেন রক্তের ফোঁটা, যেটি হৃদয়ের নিরব সংকেত। জিজ্ঞাসা করি আকাশকে: “চিঠি কি মৃত্যু হলে তার শ্মশান কোথায়?” উত্তর দেয় বাতাস, হালকা, নিঃশব্দ: “যেখানে সমস্ত নিঃশব্দতা সমাধিস্থ হয়— পুরনো ডায়েরির পৃষ্ঠা, তালাবদ্ধ সিন্দুক আর অমলের পকেটে রাখা একটি ছেঁড়া খাম।”
“প্রিয়…,
তুমি এই চিঠি পাবে যখন আমি বৃষ্টিতে ভিজে যাব, হয়তো ভিজে যাব সেই পুরোনো ছাদে দাঁড়িয়ে, যেখানে একসময় তুমি হাত ধরেছিলে। জানালার গ্রিলে যে জং ধরে আছে, সেটা আমার চোখের জল, দীর্ঘ অপেক্ষার ধাতব নিঃশেষ। টিনের চালে পড়া বৃষ্টির শব্দ মনে হয়? ওটা আমার হৃদয়ের টাইপরাইটার, প্রতিটি টুপটাপ মানে একটি না-বলা শব্দ। আজ রাতে লিখব: ‘তোমাকে ছাড়া…’ কিন্তু শেষ করতে পারব না, কলম থেমে যাবে হাত কাঁপায়। কাল সকালে অমল এসে বলবে, ‘কোনো চিঠি নেই।’ তুমি তখন মোবাইলে টিক দেবে— Seen। আমি অপেক্ষা করব পরশু পর্যন্ত। তারপর… একদিন তুমি বুঝবে, Seen মানে শুধু দেখা নয়, এটি এক ধরনের সমাধিফলক। যেখানে চিঠির লাশ পুঁতে রাখা হয়, আর তার উপর বসে থাকে একজোড়া ডিজিটাল কবুতর, খবর না পৌঁছানোর সংবাদ নিয়ে।”
এইসব স্মৃতিরা এখন ধুলোজমা বাক্সে রাখা পুরোনো রুমালের মতো— যেটার গায়ে একদিন কেউ চোখের জল মুছেছিল, এখন শুধুই রংচটা। মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি, আমি একটি বিশাল চিঠি লিখছি— তাতে কোনো ঠিকানা নেই, শুধু লিখে রাখছি না-বলা সব কথা। সেই চিঠি উড়ে চলে যায় মেঘের দেশে, যেখানে ডাকপিয়ন অমল আজো দাঁড়িয়ে থাকে সাইকেল নিয়ে, অপেক্ষায় থাকে সেইসব চিঠির, যেগুলো কেউ আর কখনো লিখে না, আর কেউ আর কখনো পড়ে না।
চিঠি কেবল কাগজ নয়, এটি এক বিদায়ী উষ্ণতা। একটি চিঠি সেই শেষ হাত ছোঁয়ার মতো, যেটি আমরা দিতে পারিনি, আর সেই শেষ কথার মতো, যেটি কণ্ঠে আটকে ছিল। যখন কোনো প্রেমিক মারা যায়, তখন তার শেষ চিঠিটি হয়ে ওঠে স্মৃতির শবাধার, যেন প্রেমিকের হৃদয় থেকে ছিঁড়ে নেওয়া রক্তাক্ত পাতাগুলি। ২০২১ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর সিন্দুক খুলে দেখি— ভাঁজ করা চিঠিগুলো হাতে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বুঝলাম, প্রতিটি শব্দ মায়ের নিঃশ্বাসে ভেজা, প্রতিটি রেখায় লেগে আছে তার আঁচলের শেষ গন্ধ। কাগজের কোণায় এক জায়গায় লেখা: “কাল রাতে তোর কথা ভেবে ভেবে ঘুম আসেনি…” এই বাক্যটি পড়ার সময় মনে হলো, মা আবার বেঁচে উঠেছেন তাঁর যুবক বয়সে— চুলে জুঁই ফুল, মুখে অলীক হাসি, হাতে কলম। চিঠি হলো এক ধরনের ভৌতিক মাধ্যম, যেখানে মৃতরাও কথা বলে, এমনকি মৃতাদের নিঃশ্বাসও নতুন জীবন দিতে পারে এক টুকরো কাগজকে।
আমার প্রথম প্রেমিকার চিঠিগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিলাম ২০০৩ সালে— একটা সন্ধ্যায়, যখন আকাশ ছিল ধূসর, আর মনের ভেতর জমছিল ঝড়। কিন্তু ছাইতে একটু গন্ধ রয়ে গিয়েছিল— জুঁই ফুল আর নীলের কালির মিশ্রণ, কিছুটা চোখের জলের মতো টক, কিছুটা কিশোর প্রেমের মতো কাঁচা। বছর বিশেক পর ফেসবুকে তার প্রোফাইল পেয়ে মেসেজ পাঠালাম: “তোমার চোখের নিচে এখনও কি সেই রোদের দাগ আছে?” সে জবাব দিল: “লেখো না এসব।” বুঝলাম, চিঠি মরার পর প্রেমও মরে যায়, বা বলা ভালো, সমাজ তাকে কবরে ঢুকিয়ে দেয় কনক্রিটের মতো নির্লজ্জভাবে। অথচ ওই ছাইয়ের গন্ধ আজও আমার বইয়ের পাতায় লেগে আছে, যেন কোনো অদৃশ্য ডাকঘর থেকে আসা একটি রিটার্নেড মেল— যেটা কেউ ফেরত পাঠায় না, শুধু রেখে দেয় বুকের কোনো গোপন খামে।
আজ রাতেও লিখব—
“প্রিয় অজানা,
তুমি যদি এই লেখাটি পড়ো, তবে জানিও— আমি একুশ শতকের এক নিঃসঙ্গ ডাকপিয়ন। আমার সাইকেলের ব্যাগে ভরা ফাঁকা খাম, যেগুলোর কোনো ঠিকানা নেই, শুধু অপেক্ষার গন্ধে ভারী। হৃদয়ের স্ট্যাম্পে লেখা— ‘প্রতীক্ষা’, আর প্রতিটি খামে আমি লুকিয়ে রাখি সেইসব শব্দ, যেগুলো কেউ শোনেনি কখনো। তুমি কি কখনো লিখবে? একটি চিঠি, যার শুরুতে থাকবে ‘তোমাকে…’, শেষে ‘আমার’। মধ্যবর্তী শূন্যতায় আমরা দুজনাই হয়তো খুঁজে পাব চিরন্তন কিছু, হয়তো আবিষ্কার করব— নিঃসঙ্গতাই আমাদের একমাত্র ঠিকানা। নাহ, মেসেজ নয়— একটি খামে ভরা নস্টালজিয়া। যেখানে মৃত্যুও হার মানে চিঠির জীবন্ত স্পর্শে, আর ভালোবাসা হয়ে ওঠে একটা ঠাণ্ডা কাগজের উষ্ণতা।”
এই শতাব্দীতে ভালোবাসা হয় ইনবক্সে, আর বিচ্ছেদ হয় ব্যাকস্পেসে। আমি সেই সময়ের মানুষ, যখন ভালোবাসার মানে ছিল ডাকে অপেক্ষা, শব্দে ঘাম, ও খামে চোখের জল। একদিন হয়তো কেউ খুঁজে পাবে আমার অসমাপ্ত চিঠিগুলো—একটি কাঠের বাক্সে, পুরনো টাইপরাইটারের পাশে, যেখানে লেখা থাকবে: “জানিও, ভালোবাসা একদিন মরে না; শুধু ডাকপিয়নদের মতো তারা হারিয়ে যায় রাস্তা ভুলে।” তখনও কেউ হয়তো জানালার পাশে বসে থাকবে, শুনবে সাইকেলের ঘন্টা, আর মনে মনে বলবে— “আজও কেউ একজন, আমার নামে একটি চিঠি লিখেছে।”

আবু মকসুদ। জন্ম ১৯৭০ সালে। মৌলভীবাজার জেলার কলিমাবাদে। পেশা ব্যবসা। ১৯৮৭ সাল থেকে বিলেত প্রবাসী। লেখালেখির শুরু আশির দশকের শেষভাগে। ছড়া দিয়ে শুরু। লিখেছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। বাংলাদেশের শীর্ষ পত্রিকাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কাছাড়ের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, সাহিত্য কাগজে ছাপা হয়েছে অসংখ্য ছড়া, কবিতা, গল্প। সম্পাদনা করছেন বিলেত এবং বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘শব্দপাঠ’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৯৪ সাল)।
প্রকাশিত গ্রন্থ : নটার ট্রেন কটায় ছাড়ে (২০০৪ সাল), মিথ্যাবাদী রাখাল ছেলে (প্রথম প্রকাশ ২০০৫ সাল, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৮ সাল), একটি গুলি (২০০৬ সাল), দূরতর গ্রহ জীবন (২০১০ সাল), ক্রমাগত ঘুমের উনুন (২০১৩ সাল), খনিজ ভুলের কাছে জমা রাখি জলের মোহর (২০১৩ সাল), মৃত্তিকার মেঘলা ভ্রমণ (২০১৪ সাল), পাশে রেখে শুদ্ধ শিশির (২০১৫ সাল), আহত ঐতিহ্যের নদী (২০২০ সাল), দুঃখগুলো মধ্যবিত্ত (২০২১), আনসার মাঠে বিকেলের রোদ (২০২২), প্রতিদিন কিছু না কিছু হারিয়ে যায় (২০২২)। বিবিধ মৃত্যুর রঙ (২০২২)। সম্পাদনা গ্রন্থ : বিলেতের ছড়া (২০০২ সাল), তৃতীয় বাংলার নির্বাচিত কবি ও কবিতা (২০০৯ সাল), মহান প্রেমিক কিংবা আত্মহত্যার বিড়ম্বনা (২০২৪)।