ফিনিক্স
আয়নায় তাকিয়ে দেখি
কিছু ছাই উড়ছে ফিরছে
শরীরে ওদের আস্তর
সাবানের ফেনার মতো
সামনে পাথুরে দেয়াল
আমার তো দেয়ালে পিঠ
ডানে বামে আধখোলা
দরোজা জানালা
আয়নায় তাকিয়ে দেখি
আমার যে চোখ নাই কান নাই
মুখ নাই দেখাবার বলবার
তোমাদের পানে চাহি
নেই কোনো উৎপাত
পারদের পিঠে লেপা
বেলজিকা কাচ বলে
পুড়ে গেছ তুমি আজ
জানালা-পথে যাচ্ছে
তোমার ভবিষ্যৎ
আমি কি ভস্মীভূত
মায়াবী মাটিজুড়ে
মিশে যাব দু মুঠো
ঋতুছুট ধানের বিছন
তেড়ে মেরে ডান্ডা
করিল কে ঠান্ডা
দেয়ালে তাকিয়ে দেখি
আয়না হারিয়ে গেছে
ছাই থেকে উড়ে যাচ্ছে
সোনালি অগ্নিপাখি
পাতাঝরাদিনে
মহাকাশ থেকে পাতা ঝরে পড়ছে
ফাগুনের নির্জলা ফুটপাতে, রাজপথে-
অ্যাসফল্ট ঢেকে যায়
বাসন্তী রঙের ব্যাজস্তুতি
মাখতে মাখতে।
শুকনো গাছের ডালে বসে দাঁত চেপে ঝুলে থাকি
পাতার লালিমায়, প্রকট উপশিরায়;
এখনই রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গাইতে
কে যেতে চায়
বৃন্তচ্যুত
ঝরাপাতার দলে!
আমাদের কসমোপল্লীতে পাতাঝরাদিন :
সে-ই থাকে যে বাঁচতে চায়
আহ্নিক গতির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে
আরেক পাক নাচতে নাচতে।
মানচিত্রের বেড়া কাঁপে
মানচিত্রের বেড়া কাঁপছে-
আগ্রাসনের অশ্বমেধের হ্রেষায়
দেয়াল ঝুরঝুর;
উচ্চবিত্ত রিফিউজির জায়গা কোথায়?
রাষ্ট্রীয় বখাটেরা বন্দুক প্যারেড
শোডাউনে মত্ত
আমাদের সবুজ পাহাড়েও।
দেহের কোষে আগ্রাসন, অর্গানে অর্গানে
দীর্ঘ ছায়া উপনিবেশের;
এখন আয়ুর্বেদ পড়ো
জলের মাছ গবাদি পশু
সবুজ মাঠে ঘুরে বেড়াক;
ইউক্রেনের হলুদ গমখেতে
সূর্যমুখীর আবাদ হোক,
অলিমিতি বিস্তারেন-
সীমান্তগুলো সুখী হোক।
রোজনামচা
এক একটা দিন
মূর্খের মতো কেটে যায়
ফেসবুকের ডেইলি সোপ
ঘড়িটা গিলে খেয়েছে শেষমেশ
বুকশেলফের ক্ষয়ে যাওয়া ন্যাপথলিনগুলো
ঘুণপোকা হয়ে করাত চালায় দীঘল রাতে
ভোরবেলা হাতির গায়ের রঙের মতো মেঘ
মশারীর মতো ঢেকে দিল যখন
নিরুপায় নির্বিকার কংকালসার
গাঢ় মেঘের প্রান্তগুলোতে রূপালি ঝিলিক দেখে দেখে
অন্ধকার ঋতু কাটিয়ে দিলাম
যবনিকার পরের অংক
মুখস্ত সংলাপ ভুলে গিয়ে
কিছু সৃজনশীলতা আর ইম্প্রোভাইজেশন
যোগ করতে করতে
উইংসের দু পাশ দিয়ে দু জন
মানে মানে ফিরে গেলাম
গ্রিন রুমে।
কত দৃশ্য, কত অংক কেটে গেল, কত যুগ!
দর্শকদের হাততালি, হই রই,
তাদের দুয়োধ্বনিগুলো সুদূরে বিলীন।
মঞ্চে ফিরে এসেছি নতুন রূপসজ্জায়, দু জনেই।
কেউ কাউকে চিনতে পারছি না!
সংলাপ অবান্তর
দর্শকবিহীন
প্রেক্ষাগৃহে।

মোশতাক আহমদ, জন্ম : ৪ জানুয়ারি ১৯৬৮।
লেখকের বইপত্র- কবিতার বই : সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট (১৯৮৯) দিয়ে লেখালিখির সূচনা। লিখেছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস। উল্লেখযোগ্য কবিতার বই : ‘মেঘপুরাণ’, ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’, ‘বুকপকেটে পাথরকুচি’, ডুবোজাহাজের ডানা’। অনুবাদ কবিতার বই : ‘যাই ভেসে দূর দেশে’, স্মৃতিপাঠের বই : ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গল্প : পাবলিক হেলথের প্রথম পাঠ’ এবং ‘অক্ষরবন্দি জীবন’; উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘ঝিনুক নীরবে সহো’। এই উপন্যাসকে ঘিরে সৃষ্টি করেছেন গবেষণার এক মনোরঞ্জক নিদর্শন ‘আবুল হাসান ও ঝিনুকের সন্ধানে।
শিক্ষাজীবন : মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ- ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশা : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন কর্মী।
ঢাকায় বসবাস করেন।
ইমেইল: aha.mostaque@gmail.com