ন তু ন ক বি তা গু চ্ছ

সাপেক্ষ ❑

অনেকেই জানতে চান—জন্ম সম্বন্ধে কি আমার মত ঈশ্বর আছে কিংবা নাই মানুষ কি বানর জাতীয় প্রাণী থেকে এসেছে পৃথিবী কি সূর্যের চারিদিকে ঘোরে মানুষের দুরাচারে ওজনস্তর যাচ্ছে হয়ে ফুটো একদিন এ গ্রহ ছেড়ে মঙ্গলে মানুষ বাঁধবে ঘর বরফ-গলনে উঁচু হচ্ছে সমুদ্রের তল আর কতটা দেরি মসিহ ঈসার কাল গণতন্ত্র ভালো না উন্নয়ন আমি শুধু দেখি রুয়ান্ডা থেকে বুরুন্ডি দারফুর থেকে রাখাইন নগ্ন পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ঈশ্বর—জঙ্গলে সমুদ্রে পানিতে ভেসে উঠছে লাশ পালিয়ে যাচ্ছে অন্য কোনো গ্রহের সন্ধানে সূর্য ঘুরছে পৃথিবীর চারিদিকে মসিহ পথ দেখায়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের পোড়া মাংসের পাশে নৃত্যরত দাজ্জালের ঘোড়া অথচ এখনো যারা উত্তরের অপেক্ষায় আছেন তাদের শুধু বলি—এবার সাপেক্ষ বলে দিতে হবে।


বাঙালিরা আসছে ❑

বাঙালিরা আসছে—বাংলার দিকে বাঙালিদের বলা হচ্ছে—যাও বাঙালির কাছে বাঙালিরা হাঁটছে, বাঙালিরা দৌড়াচ্ছে বৈদিক মহেঞ্জোদারো হরপ্পা থেকে বাঙালিরা আসছে বাংলার দিকে বাঙালিরা দৌড়াচ্ছে রৌবং নরকের দিকে বাঙালিরা আসছে উড়িয়া পুরিয়া থেকে বাঙালিরা আসছে অহমিয়া নাগপুর থেকে বাঙালিরা আসছে কৌনজ পাটালিপুত্র থেকে রাজমহল ছত্তিশগড় থেকে বাঙালিরা আসছে মগধ হস্তীনাপুর থেকে বাঙালিরা আসছে রোসান কুশান থেকে বাংলা—বাঙালিদের বাড়ি, বাংলা—বাঙালিদের মা বাংলা ছেড়ে বাঙালিরা কোথাও যাবে না বাঙালিকে বহিষ্কার করবে কে বাঙালিরা আসছে পথ ছেড়ে দে বৈদিক চৈনিক আরবি সংস্কৃত উর্দু কেউ নয় বাঙালির বন্ধু বাঙালিকে বাংলার সাথে বাঁচতে হবে বাঙালির রং চোয়ালের গড়ন বাংলা বর্ণের মতো বাঙালি নয় কোথাও আগত বাঙালি যেখানেই থাক বাংলা তার নিরাপদ আশ্রয় বাংলা থাকতে বাঙালির কেন ভয় বাঙালিরা যেখানেই থাক সেখানেই তার দেশ বাঙালিকে মারলে ইতিহাসে ঝাড়েবংশে শেষ।


লড়াই ❑

আমরা যখন যুদ্ধের কথা বলি প্রাণ বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলি শত্রুর মুখ থেকে কেড়ে নেয়ার কথা বলি বীরত্বমাখা সেই ইতিহাসের কথা বলি ভাবি কি ভয়ংকর দিনই না ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের গোড়া সিপাহিদের নলের মুখে পাকবাহিনির বেয়োনেটের মুখে ভাগ্যিস আমাদের বীরেরা লড়েছিলেন খুব তারা অনেকেই জীবন করেছেন দান তারা শহিদ—পেয়েছেন কিছুটা সম্মান আর জীবিতরা রেখেছেন আমাদের মান কিন্তু সমুদ্র সৈকতে সংকেত ঘোষণার আগে কিংবা বাঘের ছাপ দেখে পুলকিত হওয়ার কালে দেখি এক দুর্জেয় শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছে মানুষ কি দুঃসাহসে লাফিয়ে পড়ছে সামুদ্রিক ঝড়ে তারা অনেকেই আর আসছে না ফিরে এমনকি তাদের সন্তানেরাও এই লড়াইয়ে রত যদিও শত্রু চিহ্নিত—তবু তারা জানে— পিঠের সামনে লেগে থাকা পেট আজন্ম যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাদের অথচ তাদের মুক্তির নেতা এখনো অনাগত ক্ষুধার্ত স্ত্রীদের জরায়ুতে ঘুমায়।


চুলে ধরেছে পাক ❑

চুলে ধরেছে পাক চুলে ধরেছে পাক অনেকটা পথ যাবি বললি এখন বলিস থাক মেঘ করেছে ঈশান কোণে চুনের মত শ্বেত খানিকটা ভুঁই অনাবাদি অরক্ষিত ক্ষেত নদীর দিকে হাঁটতে গিয়ে পিছল খেলাম ঘাটে কয়েকটা দিন শুশ্রূষাতে রইলাম তার খাটে হঠাৎ দেখি ট্রেন ছেড়েছে জাহাজে হুইসিল ভেতর থেকে ভয় ধরেছে আটকানো এক খিল রাত্রি ধরে ব্যথার ছেদন তারার পতন পর চাঁদের হাটে সরব বাজার—ছিন্ন নীলাম্বর কপাট খুলে নব্যযুগল বিরক্তি চুলবুল বলছে মশায় আর কতদিন হবেন চক্ষুশূল যতটা ন্যুব্জ ভাবছ আমায় ততটা নই মোটে সাগরে মেঘ পুবের কোণে বৃষ্টি হয়ে ফোটে প্রত্নপথটি হারিয়ে আজো সঠিক মত খুঁজি যুদ্ধ জয়ের মন-বাসনা তোমার সাথে যুঝি


ফজল আলি আসছে ❑

ফজল আলি খেয়েছিল দুইশত কুড়িদিন আগে বহুদিন কিছুই বরাদ্দ নেই ফজল আলির ভাগে তবু সজল আলি পেতে চায় ফজল আলিরে বাগে সজল বলে—ফজল প্রতিদিন আমার বাগানে হাগে ফজল বলে—এ গু আমার নয় হেগেছে তার ছাগে দেখুন বাবু আমার পেটে নেই দানা চলে না ঠিক মতো পা-খানা আমার তো সবখানে যেতে মানা তবু সজল আমায় মারিছে একান্ত ব্যক্তিগত রাগে কারণ এখনো আমার জন্য লোকজন ভিক্ষা মাগে সজল ভাবে লোকে আমার নাম নেয় অনুরাগে তাই সে আমারে মারিতে চায় কাল-বিষ-নাগে কিন্তু এখন তো আমি বায়ু থেকে নিই অম্লজান সূর্যের আলোর শক্তিতে গাইছি ভাটিয়ালি গান এই অবিশ্বাস্য খবর সংগ্রহে আসিছে সাংবাদিকগণ পুলিশ ভাইয়েরা তটস্থ সারাক্ষণ আমি বলি— ভাইয়েরা সব! বোনেরা সব শোন—বাতাস নদী আর পাখিদের রব প্রাণ না মেরেও পৃথিবীতে রয়েছে প্রাণের খাবার জানাব অনুপুঙ্খ সব—এই সঙ্কীর্ণ যুদ্ধ শেষে যদি ফিরে আসি আবার!


ঘাস ❑

যদিও হত্যাকারীরাই পৃথিবীতে মহান তারা অন্তত ঈশ্বরের একটি গুরুভার নিয়েছেন তুলে কারণ একদিন সকল জীবন্ত বস্তুর হবে লয় হাড় থেকে মাংসগুলো খুলে মিশে যাবে মৃত্তিকায় সকল সুন্দরীর চিৎকারে ভরবে আকাশ বলবে—এইসব ঝুলেপড়া স্তন নয় আমার যে সব বস্তু আমরা অনিবার্য ভেবেছি করেছি লড়াই রাখতে অক্ষয় কুমারীত্ব উলান থেকে সরিয়ে নিয়ে বাছুরের মুখ একফোঁটা দুধের হিসাব করি নি-কো ভুল যাদের রক্ষার্থে কিংবা ভালোবেসে দিয়েছিলাম ফুল তাদের পাওয়ার মোহ আজ নেই অবশিষ্ট এইসব পলায়নপর মায়া ও প্রপঞ্চ ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতির খেলা একচ্ছত্র সৃষ্টির অবিবেচনা—হত্যাকারী নিয়েছে ভাগ প্রাণ অধিকতর হয়েছে সজাগ একটি মৃগের সম্মুখে পারে কি যেতে ব্যাঘ্র সফল নৃত্যের শেষে বাতাসে মিশিয়া থাকে পরিত্যক্ত সুন্দরের মায়া সকল প্রাণের মধ্যে রয়েছে হত্যাকারীর ছায়া আমরা রেখেছি ধরে হত্যার ইতিহাস যদিও তারা আমাদের করিতেছে উপহাস তবু একদিন তারাও হয়ে যাবে ঘাস।


সমীরণ জেঠুর বারান্দা ❑

আমি জানতে চাই—তোমায় শুনতে চাই তোমার বাবা-মা জ্ঞাতিদের কথা তোমার তুতো বোনদের খলখলানি তোমার ফুফাতো ভাইয়ের বাড়িতে যাব প্রতিবেশীদের কথাও জানতে হবে আমায় জানতে হবে যে নদীতে তুমি করেছিলে গোসল তোমার ফ্রক বিঁধেছিল যে বিল্ব কাঁটায় তোমদের বাড়ির গাভিটির কথা জানতে হবে দুটি ছাগি আর একটি মোরগের পরিবার দেখতে হবে যে রাস্তাটি মসজিদের দিকে গেছে পূজায় বিতরিত প্রসাদ পেতে হবে আমায় গির্জা ও প্যাগোডা তোমাদের গায়ে ছিল না নিশ্চয় দেখতে চাই তোমার আতুর ঘর শুনতে চাই তোমার প্রথম অনুভূতির কথা মায়ের মৃত্যু—প্রেম-ব্যর্থতার কথা তুমি কিভাবে আমায় কুড়িয়ে পেলে কিভাবে দিলে নিজেকে মেলে লুকিয়ে রাখলে সেইসব জঙ্গম দিনের কথা তোমায় জানার অতিরিক্ত কি-ই বা আছে আমার এই জানতে জানতে যখন জানা হয়ে যাবে তখন ঘুমিয়ে পড়ব সমীরণ জেঠুর বারান্দায়।


যুদ্ধ ❑

সেইসব যুদ্ধই তো ছিল ভালো— কোনো এক রাজন্যের আহ্বানে বেরিয়ে পড়তাম রাস্তায় বর্মে আচ্ছাদিত হয়ে নাঙা তলোয়ার হাতে নদী ও পর্বত অতিক্রম করে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিজের অবস্থানে থাকতাম অনড় কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি—সেসব আমাদের ছিল না জানা কেবল জানতাম—কখন নেমে আসবে সেনাপতির নির্দেশ অমনি প্রতিপক্ষের মাথা উড়িয়ে দেয়ার কাজ করতে হবে সম্পন্ন প্রতিটি মাথার মূল্যে নির্ধারিত হবে আমাদের শক্তি শেষমেষ নিজের মাথা বাঁচাতে পারলেই কেবল জুটবে— বাহারি খেতাম, সোনা-দানা—লুণ্ঠিত দ্রব্য যদিও জানতাম না—কেন তারা আমাদের বধ্য তাদের সঞ্চিত সম্পদ ও ছেলে-মেয় কেন আমাদের ভোগ্য তবে জানতাম—অন্যকে মারার মধ্যে রয়েছে বীরত্ব সম্মান ও মর্যাদা—ইতিহহাসের অংশ হয়ে থাকা চেঙ্গিস-নেপোলিয়ান-আলেকজান্ডার বেনাপোট এখনো শিশুরা দেখতে পায় তৈমুর আটিলার শকট প্রাক-ইতিহাসের সকল সুর ও অসুর নিজ দেশ অতিক্রম করে গিয়েছে অনেক দূর অন্য জাতির মানুষদের করেছে লুণ্ঠন কেননা উৎপাদনের চেয়ে পৃথিবীতে যুদ্ধই মহৎ পেশা যোদ্ধাকে তাই সবাই করে সম্মান পর-জাতিকে পরাস্ত করেছে যারা তারাই বীর তারাই অন্য জাতির ঘৃণায় অধীর আজ যদিও সেইসব যুদ্ধের হয়েছে অবসান তবু যুদ্ধ মানুষের রক্তের টান তাই জাতিকে বিভাজন করে আজও মানুষ যুদ্ধ চান যদিও এই যুদ্ধে আমাদের মাথা থাকে অক্ষত তবু হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ঝরে অবিরত।


মানুষ ❑

আমার ঘরের দরোজা আজ খুলেছি রাতে কুকুরের তাড়া খেয়ে যে সব মানুষ রয়েছে তফাতে যে সব শিশুরা ডুবিছে পানিতে তাদের তরুণ দেহখানি তুলে নিতে আমিও যে মানুষ ছিলাম অন্তত গল্পে শুনেছি তার পরিচয় কখনো কি দিয়েছি কখনো কি নিজের ব্যঞ্জন থেকে একটি শাকের ডাটা দিয়েছি তাদের দিকে কখনো কি বলেছি—এসো ভাই যে সব জানোয়ার তোমাদের তাড়ায় আমরা তাদের সাথে নাই এসো ভাই—্এই নাও তৃষ্ণার জল আমাদেরও নাই খুব বেশি সহায় সম্বল যদিও আমাদের বাড়ির আঙিনা আমাদের থাকার জন্য যথেষ্ট না তবু মানুষ ডুববে পানিতে মানুষ মরবে উত্তরের শীতে বুলেটের তাড়া খেয়ে যারা এসেছে পালিয়ে যাদের ঘরবাড়ি শিশুদের দিয়েছে জ্বালিয়ে তাদের কি এখনো বলব তফাত তাদের কি বলব তোমরাও বজ্জাত এখানে হবে না তোমাদের ঠিকানা এখানে কুকুর ও মানুষের প্রবেশ মানা আমার অন্তর আজ এইসব জিঘাংসার অপরাধে নীরবে নিভৃতে একাকী কাঁদে তাই আজ রাতে খুলেছি আমার ঘরের কপাট দিয়েছি লিখে এই নিঃস্বদের রাজ্যপাট অনেক হয়েছে ভাই—এবার ধরো প্রতিরোধের লাঠি আকড়ে ধর মা মাটি মারো—মরো নিজের মৃত্তিকায় আমরা সাথে আছি—তোমাদের ভাই দানব বধের মন্ত্র আমাদের আছে জানা মানুষ বিপন্ন হলে আমরা নিশ্চুপ থাকি না।


আলিঙ্গন ❑

অনেকদিন আমরা আলিঙ্গন করি না আমাদের বিছানাও আলাদা হয়ে গেছে শরীরের চামড়াগুলো কিছুটা ঢিলঢাল দেখা দিয়েছে প্রস্টেটের অসুখ মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে প্রায়ই টের পাই বিছানা ভিজে গেছে এ আর নতুন কি! আগেও বহুবার হয়েছে মা তখন বেঁচে ছিলেন ফকিরের পানিপড়া, তাবিজ-কবজ বাহুতে শিকড় ধারণ আর কৈশোর পেরুলে শুরু হয় নতুন যন্ত্রণা বিছানার বদলে তখন ভিজেছে পাতলুন মা’র দুশ্চিন্তা তখনো কমে নি সন্তানের স্বাস্থ্যরক্ষা মায়ের নিয়তি কিন্তু এখন! কে নেবে এই অসুখের ভার মা নেই; যার কাছে রেখে গেছে, সেও হারিয়েছে ধারণের ক্ষমতা আমরা যাদের ডায়াপার দিয়েছি পাল্টে কিভাবে করি মাঝরাতে তাদের স্মরণ তারাও তো এখন ব্যস্ত এই রাত ঐন্দ্রজালিক চেতনায় ভরপুর এই রাত আমাদের করেছে দ্বিখণ্ডিত এই রাত আমাদের অপারগতা সারাদিন ব্যস্ত থেকেছি কয়লা সংগ্রহে রাত্রে প্রভুর দাসত্ব করা তার চরাচর, তার কর্মী সংগ্রহ উৎপাদন ঘাটতি হলে সোজা কেটে পড়া তবু উর্বর দিনের স্মৃতি রয়েছে শিরায় পুনরায় চাষবাদের আকাঙ্ক্ষা আছে জেগে যদিও গরুটানা লাঙলের হয়েছে অবসান নতুন নিয়ম শেখা অতটা নয় সহজ তবু মনে হয় জেগে উঠি রাত থাকতে গরুগুলি জোয়ালে বেঁধে দিই টান ফালের ভ্রমর ধরে গাই মুর্শিদি গান এখন কলের লাঙলের যুগ শুরু মানব-শ্রমের দিন হয়েছে অবসান আলিঙ্গনে রয়েছে লিঙ্গ—বলেছেন কলিম খান গান্ধীর ব্রহ্মচর্য সেও তো লৈঙ্গিক চেতনার ফল আমাদের মিলন, নিষ্কাম জড়িয়ে ধরা দু’একটা দিন নিজেদের জন্য বাঁচা নয় শ্রম, নয় উৎপাদন নয় কর্মের বিভাজন এখন বাতাসের ভেলায় চড়ে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের রঙ্গে মিলিত হবার ঢঙে একটা শরীরের ওপর আমরা আরেকটা শরীর যাচ্ছি পড়ে…


নিন্দুক ❑

কিছু মানুষ তোমার নামে ছড়ায় নিন্দা আড়ালে আবডালে করে গালমন্দ তুমি যা নও তা প্রমাণের করে চেষ্টা এমনকি তারাই নির্ধারণ করে তোমার বাপের নাম, রাজনীতি ও ধর্ম বিশ্বাস যদিও ওরা দৃশ্যমান নয় তবু রাস্তার পাশে রেস্টুরেন্টে থাকে বসে চালায় কথার ছুরিকাঁচি অন্যের খুদকুঁঁড়ো খেয়ে করে ক্ষুণ্নিবৃত্ত তুমি হয়তো ভাব, কি লাভ ভাগাড়ে কৃমি ঘেটে ময়লা ঘাটাও তো কিছু মানুষের পেশা, না কি তুমি হয়তো নাক চেপে চলে যাও দূরে তাই বলে তুমি তো চাইতে পার না সব কোট-টাই-পরা সাহেব সাহেবও তো হতে পারে গালি আসলে যারা নিন্দা করে, ছড়ায় গন্ধ তারা তোমারই অংশ তুমি তো আর তাদের দাও না মাইনে তবু তারা করে তোমার প্রচার তারা তোমার মাটিতে থেমে থাকা পা যখন একটি পা উপরে ওঠে আরেকটি তারা টেনে নামায় নিচে আর তুমি দ্রুত সামনে এগিয়ে যাও তুমিও তো তার ঊরুতে রাখছ ভর তারা যদি মাটিতে আটকে না ধরে তুমি তখন ভারসাম্যহীন পতিত মানুষ থেমে যাবে তোমার কাজ মুছে যাবে দূরত্বের সূচক তুমিও যদি তাদের মতো হও তাদের কথার দাও জবাব তাহলে তুমি থেমে গেলে দু’টি পা হয়ে গেল সমান্তরাল কেউ আর তখন ছোট নও, বড় নও নিন্দুকও তখন থাকবে না তোমার সাথে।


ভদ্দরলোক ❑

সব ভদ্দরলোকের বাবাই একদিন দস্যু ছিলেন নিদেনপক্ষে তার দাদা কিংবা তার বাপ রাজার সেনাপতি কিংবা সিপাই ছিলেন মসজিদের ইমাম কিংবা মন্দিরের পুরুত ছিলেন ওজনে কম দেয়া বণিক ছিলেন কারাগারের দ্বারপাল ছিলেন এখনো যারা ভদ্দরলোক হন নি এখনো তারা রাজনীতিজ্ঞের সন্তান এখনো তাদের বাবারা রাস্তায় মারে টহল ভবিষ্যেতের জ্ঞানীগুণি সন্তানদের জন্য অধ্যাপক বাগ্মি সন্তান কী জন্য তাত্ত্বিক সমাজতন্ত্রীদের জন্য ধর্মের ব্যাখ্যাতা সন্তানের জন্য সঞ্চয় করছেন অর্থ কারণ তারাও পৃথিবীতে শান্তিপ্রিয় সন্তানদের রেখে যেতে চান তারা জানেন সর্বদা অস্ত্র কার্যকর নয় তাদের সন্তানেরাও একদিন শান্তি কায়েমের কথা বলবেন বুুদ্ধের মতো রাজ্য পরিত্যাগের কথা যিশুর মতো পিতার রাজ্যের কথা রাজার প্রাপ্য রাজাকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা গান্ধির মতো অহিংসার কথা বলবেন কিন্তু কেউ বলবেন না, চল আমাদের পিতাদের কেড়ে নেয়া সম্পদ সেই নিঃস্বদের সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিই।


আমার কবিতা ❑

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আমি বন্ধুদের একটি কবিতা উপহার দিই; যেভাবে অন্যরা শুভ সকাল বলে কবিতা লেখাই তো আমার কাজ যেভাবে ভোরবেলা সবজিবিক্রেতা হাঁকডাক ছাড়ে প্রতিদিন তো কেউ সবজি কেনে না কোনোদিন বিক্রিপাট্টা ভালো, কোনোদিন নয় ক্ষতিতেও করতে হয় বিক্রি মাঝে মাঝে নষ্ট-পচা বলে কেউ দুর দুর করে চাষির কাজ চাষ, বিক্রেতার বিক্রি আমিও কবিতার চাষি, নেই অন্য দক্ষতা রোদ-বৃষ্টি-শীত-গ্রীষ্মে করি কবিতার চাষ শব্দের সঙ্গে শব্দ যোজনা করি— গতকাল যে-সব মানুষ পেয়েছিল ব্যথা যাদের হৃদয় অন্যের দুঃখে উঠেছিল কেঁপে ক্ষমতার নিষ্পেষণে যে-সব নীরব-কান্না চেয়েছিল সশব্দে উচ্চারিত হতে আমার কবিতা তাদের চেতনার সিঞ্চন প্রতিদিন প্রাতঃরাশের আগে আমিও মানুষের ভেতরের মানুষ জাগিয়ে তুলি যেভাবে একটি কাক কা কা করে ওঠে বলতে চাই—অসংখ্য পিপীলিকা একটি বৃহত্তর কামানের চেয়ে বড় জেগে ওঠো প্রবঞ্চিত প্রেমিকের দল, সম্ভ্রম হারানো বোন যারা কালরাতে ঘুমাতে পারো নি নিজের বিছানায় যে সব মা জেগে আছ সন্তানের ফেরার প্রত্যাশায় যারা ভূগছ মাদক আর সিৎজোফ্রেনিয়ায় তোমাদের কথা লিখেছি আমার কবিতায়।


দশম দশা ❑

প্রেমের সূচনাতে হারিয়ে ফেলেছি সকল মুদ্রা তার অনির্দেশ্য ইঙ্গিতে করেছি গৃহত্যাগ আমাকে ছেড়ে গেছে গোত্রের স্বজনেরা জানি না ভগ্নস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের আছে কি উপায় আর কেনই বা তার দরকার পাড়ার শিশুরাও আমাকে করে না গ্রাহ্য দু’একটি ঢিলও ছুড়েছে আমার দিকে পাগলের সাথে সবারই সম্পর্ক মজার— মানুষের পৃথিবীতে—সে থাকে অন্য দুনিয়ায় অবশ্য যার জন্য আমার এই দশা তাকেও দিই না দোষ ভালোবাসা তো একান্ত নিজেরই জন্য যদি আমার আহ্বানে সে দিত সাড়া যদি পূর্ণ হতো মিলনের সাধ তাহলে তো এখানেই শেষ প্রেমানন্দের মল্লিনাথ বলেছেন—প্রেমের দশটি সোপান দৃশ্যের সুখ—প্রেমের প্রথম ধাপ দ্বিতীয়তে রয়েছে—মিলবার সাধ ক্ষুধামন্দা, স্বাস্থ্যহানি এসবও প্রেমের পর্যায় আমার অবস্থান এখন অষ্টম ধাপে সংসারীরা যাকে প্রেমোন্মাদ বা মজনু বলে ডাকে আমি নিজেও ভুলে গেছি এ দশার কারণ শরীর দিয়ে শরীর ছোঁয়ার ক্ষমতা হারিয়েছি এখন শুধু পৌঁছে যেতে চাই চরম প্রান্তে বারংবার মূর্ছা যাচ্ছি, বেঘোরে দেখছি— যুদ্ধে কর্তিত সৈনিকের শিরস্ত্রাণ তুলে নিচ্ছে এক রোরুদ্যমান রমণী হয়তো আমি চলে এসেছি প্রেমের চূড়ান্ত পর্বে যদিও মানুষ তাকে মৃত্যু বলে জানে তবু পেয়ালা ভরার এই তো সময় আমি এখন উঠে যাচ্ছি দশম ধাপে…


মা ❑

এখানে আসার পরে ইচ্ছে করছে মায়ের কাছে যেতে সম্ভবত আমি হারিয়ে ফেলছি দিনের ক্লিষ্ট স্মৃতি হয়তো নির্ভরতা, কেউ আমাকে তুলে নেবে কোলে অনেক দিয়েছি হামাগুড়ি, ছিলাম কাদা ও জলে লেপ্টে সাঙ্গ খেলাধুলা, খেলার বউ ও ছেলেপুলে রেখে আমাকে মায়ের কাছে ফিরে যেতে হবে মনে হচ্ছে এসে গেছে সময়,মস্তিষ্ক করছে না কাজ বালিকা বধূদের শরীরের বিভেদ পাচ্ছি না টের চিহ্নের পার্থক্য থাকলেও ফুরিয়েছে ব্যবহার যোগ্যতা যারা ভুলিয়ে রেখেছিল সাময়িক আনন্দে, স্পর্শে তারা কি কেউ দিয়েছিল একবিন্দু তৃষ্ণার জল যদিও তারা ছিল মায়ের রেপ্লিকা সন্ধ্যার আগেই তারা আমায় রেখে করেছে গৃহত্যাগ তাদের রয়েছে নিজস্ব সন্তান, নেই সান্নিধ্যের প্রয়োজন কেনই বা দিচ্ছি দোষ, তাদেরও আছে ফেরার ভয় অথচ রেখে যাওয়ার আগে মা কতবার করেছিল বারণ যদিও অবোধ শুনি নি নিষেধ, তবু জেনে গেছি কাদা ও পানিতে পিছলে গেলে, এমনকি আগুন ও সমুদ্র যেখানেই যাই, ঘুমানোর জন্য ফিরতে হবে তার কোলে এখন পাচ্ছি টের, এখন আমার ঘুমিয়ে পড়ার সময় ভুলে গেছি নাম, শব্দের মানে, আয়তনের আপেক্ষিকতা মেয়ে বন্ধুদের স্মৃতি ভুললে এখনো সম্ভব মাতৃদুগ্ধ পান জানি মা শরীরে ধরলে হবে না দেহের ক্ষয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *