অভাব
কত কিছু হারিয়ে যায়
নদী মরে শুয়ে পড়ে নালায়
কল থেকে উড়ে যায় জল
বাল্ব ছেড়ে নিভে আসে আলো
তুমি ছিলে কিছুখানি কাছে
এখন গিয়ে করেছে ভালো।
কত কিছু ভেঙে পড়ে অজান্তে
হাত থেকে ছিটকে যায় গ্লাস
ধেয়ে আসে ঝড়ঝঞ্জার দিন
সঞ্চয় বলতে যা ছিল গেল
অভাবের দিনে বাড়ন্ত চাল
এমনকি দ্রুত ফুরিয়ে আসে
সিগারেট জ্বালানোর আগুনও।
সময় এক ইরেজার
যে চলে যায় তাকে বিদায় জানাও
ভুলেও করো না অভিযোগ
পাতারা ঝরে যাওয়ার আগে শুধু
একটি দীর্ঘশ্বাসই ফেলে যায়।
মনে করো, তুমি নামে ছিল না কিছুই
তোমার সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি তার
সময় এক ইরেজার।
যে চলে চায় তাকে পথ দেখিয়ে দাও
পুষে রেখো না রাগ-ক্ষোভ
বা বলো না, আরেকটু থাকো।
নদী জলের থাকে না নোনা হওয়ার ভয়
যে আসতে চায় তাকে জানাও স্বাগত
ঝড়ে স্তব্দ, আগুনে দগ্ধ পাখির জন্য
তোমার হৃদয় পোতাশ্রয়।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপে
একবার জেগে উঠি, একবার ডুবে যাই
আমি কি চর—সমুদ্রের কোনো দ্বীপ?
তৃষ্ণার খনি হয়ে ভাসছি চতুর্দিক।
নিজেকে নিজে ছুঁড়ে দিয়ে মহানীলে
ডুবসাঁতারে নোনা বিষাদ নিচ্ছি গিলে।
এমন অনেক দুঃখ আছে মূর্খের মতো
দেখতে ওরা। পায়ের সঙ্গে থাকে মাথা
এমন অনেক বৃষ্টি আছে, ভিজতে হয়
উদ্দেশ্যহীন, একা এবং ছাতা ছাড়া।
বটগাছ
অফিস থেকে ফেরার পথে প্রতিদিন
পরস্পরবিরোধী এক বটগাছকে দেখি
একবার পাখিদের আদর করে ডেকে
এনে আরেকবার ফুঁয়ে তাদের তাড়ায়।
অফিসে যাওয়ার পথে অবশ্য কোনো
বটগাছ চোখে পড়ে না। কেবল ক্ষণে
ক্ষণে একটা ছাতিম সুবাস বিলিয়ে যায়
আঠারো মাস, তেত্রিশ দিন, কয়েক ঘণ্টা।
তবুও কেন ফেরার পথে বটগাছ পড়ে!
নিশ্চিন্তে ভাবি। ভেবে অবাক হই। এই
ভেবে যে, বটেরও ফুল ধরে। ফল আছে
বটগাছ পুরোটা বিফল নয়। তার কাঠেও
রঙবেরঙের ফার্নিচার হয়।
প্রতিদিন
মৃত্যুর মতো হল্লা করে আজ বাড়ি ফিরি
গান শুনতে শুনতে রান্না ও গোসল সারা।
খাই। সিগারেট জ্বালিয়ে বসি বারান্দায়।
ছাদ থেকে মেয়েদের উঁকি দেওয়া দেখি
সকালে অফিস; দুধ খেয়ে কবিতা পড়ি
গান শুনতে শুনতে ঘুমাই, অভ্যেস বহুদিন
কত কি মনে পড়ে ঘোরে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো
ঝাপসা দিন, রৌদ্র ঝিলমিল, সুতোতে দুলছে।
সকালে অফিস। অ্যালার্ম বাজে সাতটায়
পানি খেয়ে পেস্ট লাগাই ব্রাশে। গান শুনতে
শুনতে গোসল করি, নিজেও গাই বেসুরে
একটা সেদ্ধ ডিম ছিলে চাল ছিটায় ছাদে
পাখিরা এসে খুঁটে খুঁটে খায়, কত যে পাখি!
তারপর রোদ এসে বসে কার্নিশে, তেরচা
আলো লুটোপুটি খায় ঘাসে, বাতাসে ওড়ে চুল
আমি তো ভাবি প্রতিদিন, একদিন ঘাস ছিঁড়ে
দেখব ঘাসের মাহাত্ম্য, কোথায় শিখেছে তারা
নির্বাক হওয়ার ধ্যান। আমি ভাবি প্রতিদিন।

উপল বড়ুয়া। জন্ম ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৮, কক্সবাজারের রামুতে। তিনি কবি, কাহিনিকার ও অনুবাদক। পড়াশোনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- কানা রাজার সুড়ঙ্গ [২০১৫], উইডের তালে তালে কয়েকজন সন্ধ্যা [২০১৮] যেখানে জঙ্গলের শুরু [২০২৫]। কবিতাপুস্তিকা- তুমুল সাইকেডেলিক দুপুরে [২০২০]। ছোটগল্প সংকলন- ডিনারের জন্য কয়েকটি কাটা আঙুল [২০২০]। উপন্যাসিকা- মহাথের [২০২২]। যৌথ অনুবাদ- মরা বিড়ালের মাথা [২০২৪]। বর্তমান পেশা সাংবাদিকতা।