রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন নগ্ন বাকীবিল্লাহ

সবই ঠিক আছে এই ফ্ল্যাটের শুধু একটা দিক…

মুখের মধ্যে গরুর মাংস আটকে যাওয়ায় শেষ করতে পারেন না বাক্য বাকীবিল্লাহ। অমরাবতী হোম লিমিটেডের মালিক আহমেদ মকবুল তাকিয়ে আছেন বাকীবিল্লার দিকে। বাকীকিল্লাহ কি সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন, জানার জন্য মুখিয়ে আছেন। মনে মনে বিরক্তির এক শেষ। কিন্তু মুখে হালকা স্মিত হাসি ঝুলিয়ে রাখছেন। ক্রেতা লক্ষী। কিনতে আসলে নিজের রুচি আর সক্ষমতার উপর নির্ভর করে ফ্ল্যাট বিক্রি। মকবুল দেখেছেন, অনেকে আসে খুব স্বাভাবিকভাবে, মনেই হয় না ফ্ল্যাট কিনবেন! কিন্ত দেখা যায় চট করে কিনে ফেলেন। জোয়ারসাহারা এলাকার এই বাড়িটি করেছেনে তিন বছর আগে, আট তলা ফ্ল্যাট, দুটি ব্লক। সবই বিক্রি হয়ে গেছে কিন্ত চারতলার ডান দিকের ফ্ল্যাটটি কোনোভাবে বিক্রি হচ্ছে না। দুইজন ক্রেতা আগে দেখে টাকাও বায়না করেছিল কিন্ত দুইজনই পরে বায়না বাতিল করেছে। ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিলে বাঁচেন আহমেদ মকবুল। বিক্রি বাট্টা করে ব্যবসা যা করার করেছেন। এই ফ্ল্যাট থেকে যা পাওয়া যাবে উপড়ি— তেরোশো পঞ্চাশ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি প্রথম দুজনের বিক্রি করেছিলেন পয়ষট্টি লাখ টাকায়। কিন্তু না নেয়ায় আর কেউ দেখতেও আসেনি। ছয় মাস ধরে খালি পরে আছে। রিয়েল হোমসের অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকেরা উঠে গেছে কবে শুধু পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটটা থেকে গেছে। বাড়ির কেয়ারটেকার সুনীল শর্মাকে লাগিয়ে রেখেছেন— বিক্রি করে দিতে পারলে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবি।

পঞ্চাশ হাজার টাকার আশায় সুনীল শর্মা প্রায়ই ক্রেতা জোগাড় করে ফোন দেয় আহমেদ মকবুলকে। মকবুল বলেন, আগে ফ্ল্যাট দেখিয়ে ক্রেতা পছন্দ করলে আমাকে জানাও। আমি তখন আসব।

সেই অনুসারে সুনীল শর্মা জানিয়েছে, স্যার একজন ক্রেতা পেয়েছি, ফ্ল্যাটটা পছন্দ করেছে। আর দাম যখন বলেছি ষাট লাখ টাকা, আরও পছন্দ করেছে। ক্রেতার নাম বাকীবিল্লাহ।

তাই?

জি স্যার। গতকাল বাকীবিল্লাহ স্ত্রীসহ ফ্ল্যাট দেখে গেছে। আজকে আসবে। আপনি যদি আসেন…

ঠিক আছে, আসব। তুমি ওনাকে আসতে বলো।

বাকীবিল্লাহ কালো রঙের মানুষ। মুখটা গোলাকার। মাথার চুল পেকে সাদা। কানের উপর লম্বা লোম। পড়নের প্যান্ট শার্ট নতুন। জুতোটাও। হালকাপতলা গড়নের মানুষ বাকীবিল্লার স্ত্রী রহিমা আখতার সেই তুলনায় মোটা। মুখের গড়নে রাশভারীভাব। চোখের দৃষ্টি বড় তীব্র। রহিমা আখতার সরকারী অফিসে ছোটপদে চাকরি করেন আর বাকীবিল্লাহ বেসকারী অফিসের কেরানী।

দুজনার সংসারে দুটি কন্যা। রেশমী আর চুমকী। রেশমী আর চুমকীর মা রহিমা আখতারের দুনিয়ায় কোনো সাধ নেই, একটি মাত্র সাধ ছাড়া। ঢাকা শহরে একটা ফ্ল্যাট কিনবেন এবং জীবনের পড়ন্ত বেলায় ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসে আকাশ দেখতে দেখতে মৃত্যকে আলিঙ্গন করবেন।

বেচারা বাকীবিল্লাহ পড়ে মুশকিলে— আরে বাবা সাধ আল্লাদ কার না থাকে? কিন্ত সম্ভব অসম্ভব ঘটনা আছে না? সম্ভব অসম্ভব যত শব্দই থাকুক অভিধানে কিংবা আটপৌড়ে জীবনের রোজনামচায়, সব অস্বিকার করে রহিমা আখতার একটা ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ায় সাধ পূরণ করতে মরিয়া। সংসারে ফ্ল্যাট নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হলে মেয়েদুটোও যোগ দেয় মায়ের সঙ্গে। সংসারের চারজনের তিনজন একদিকে চলে গেলে বাকীবিল্লাহ একলা গভীর খাদের কিনারে পড়ে।

তোমরা জানো একটা ফ্ল্যাট কিনতে কতো টাকা লাগে? প্রশ্ন করেন মেয়েদের উদ্দেশ্যে যদিও, কিন্ত তাক করেন স্ত্রী রহিমা আখতারকে।

রহিমা আখতারও খোঁজ খবর রাখেন, আমার অফিসের জোবায়ের ভাই তো আমার পদেই চাকরি করে একটা ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছে। আমাকে সেই ফ্ল্যাটের … দেখিয়েছে। প্রথম দিয়েছে এক লাখ টাকা। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে জোবায়ের ভাই যদি কিনতে পারে আমরা কেন পারব না?

রেশমী বড় হলেও কথায় পটু ছোট মেয়ে চুমকী, মা তো ঠিকই বলেছে বাবা। আর জোবায়ের আংকেল চাকরি করে একা, আর তোমারা কর দুইজন।

রাইট, বড় বোন রেশমা সমর্থন জানায় মাথা ঝাকিয়ে, বাবা ঠিকই তো বলেছে চুমকী। আমরা কেন ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট কিনতে পারব না?

ত্রিমুখী আক্রমনে পর্যদস্তু বাকীবিল্লাহ প্রতিউত্তর করবার জন্য মুখের মধ্যে কোনো শক্তি খুঁজে পান না। জিবহবা আড়ষ্ঠ। বুঝতে পারেন নিজস্ব চিন্তা ও স্বার্থের কাছে পুত্র কন্যা স্ত্রী সবাই দূরের বাসিন্দা। ঢাকা শহরে একটা ফ্ল্যাট যদি হয়, আমি কি আমার সন্তান স্ত্রীর চেয়ে কম গৌরববোধ করবো? কিন্ত ওরা বাস্তবতা বোঝে না। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ফ্ল্যাটের বুকিং দিতে গেলে, মাসের বাসা ভাড়া, খাওয়া দাওয়া মেয়েদের পড়াশুনার খরচ মেটানো যাবে না। বাসায় প্রতিদিনের খরচ, গ্রামের বাড়ির টুকটাক দায়দায়িত্ব পালন করতে করতে পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে অনেক আগেই, দেয়ালের ভার বইতে পারায় এখন পিঠ কুজো। কুজো পিঠের উপর চড়ে বসেছে স্ত্রী কন্যাদের বায়নার পুতুল ফ্ল্যাট!

বছর খানেক আগে অফিসের কলিগ শামসুদ্দিন মিয়া জানায়, বাকী ভাই চলেন একটা জমি দেখতে যাই।

মানে? কিসের জমি?

পাশের চেয়ারে বসে শামসুদ্দিন মিয়া, ভাবী আর আপনার কন্যারা দাবী তুলেছে না, একটা ফ্ল্যাটের জন্য। আপনি আমি যে বেতন পাই সেই বেতন দিয়ে জীবনেও একটা ফ্ল্যাট কেনো, একটা ফ্ল্যাটের বারান্দাও কিনতে পারবো না। সেইজন্য আমার বন্ধু আরিফ একটা জায়গার সন্ধান আনছে, ঢাকা থেকে বেশী দূরে না, সাভারের দিকে বিরাট হাউজিং হয়েছে একটা— নাম- পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে দেখে তাকায় বাকীবিল্লার দিকে, কনক হাউজিং লিঃ। এখনও দাম কম, দুই তিন বছর পরে দাম আরও বাড়বে। আমরা কয়েকজন মিলে পাঁচ কাঠার একটা প্লট কিনলে নিজেরাই দশ তালার বাড়ি বানাতে পারবো আস্তে আস্তে। আজকাল ঢাকা শহরের আশেপাশে এই ধরনের মেলা ফ্ল্যাট হচ্ছে— চলেন।

আড়মোড়া ভাঙ্গে বাকীবিল্লাহ, এই ধরনের অনেক ঘটনা শুনেছেন কিন্ত কখনো নিজেকে জড়িয়ে একটা কিছু করার ইচ্ছে জাগেনি। হাঙ্গামা হুজ্জোত একেবারে ভালো লাগে না। এই তো বেশ আছেন— স্বামী স্ত্রী দুজনে চাকরি করছেন, হোক ছোট চাকরি, চলে যাচ্ছে তো। বাড়িঅলা মানুষটা ভালো, পনেরো বছর ধরে আছেন, বাড়িঅলা কোনো ঝামেলা করছে না। চাকরি, বাজার, সংসার চলে যাচ্ছে তো— বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে গেলে নানা ঝামেলা। জমির কাগজপত্র ঠিক আছে কি না দেখো—বাড়ির প্ল্যান পাশ করানো আছে কি না—

আমাদের সঙ্গে চলেন, যোগ দেয় পাশের রুমের হোসনে আরা।

তুমিও আছো?

হাসেন হোসনে আরা, না থেকে কি করবো? ঢাকা শহরে ভাড়া থাকি, কিচ্ছু নাই। কেমন আছি শরনার্থী শরনার্থী লাগে। যদি সবাই মিলে একটা কিছু করা যায়, মাথা গোজার ঠাঁই- ছেলেমেয়েরা তো সুখ পাবে। চলেন—

যাবে কিভাবে?

আরে সেই ভাবনা আপনার ভাবতে হবে না। আমরা জায়গা দেখেতে যাবো জানালেই কনক হাউজিং থেকে গাড়ি পাঠাবে।

তাই নাকি? অবাক বাকীবিল্লাহ।

জি, চলেন। আগামী শুক্রবার সকালে।

হোসনে আরা আর শামসুদ্দিন মিয়ার আমন্ত্রনে পরের শুক্রবার বাসার সামনে থেকে কনক হাউজিংয়ের গাড়ি এসে নিয়ে যায় সাতজন সম্ভাব্য ক্রেতাকে। সাতজন ক্রেতার সঙ্গে ছিলেন বাকীবিল্লাহও। দশ সিটের মাইক্রোবাসে সাতজন যাত্রী। জানালার পাশে বসে প্রকৃতি দেখতে দেখতে নিজের মধ্যে নিজেকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করেন বাকীবিল্লাহ, সারাটা জীবন বাসের যাত্রী হয়ে অজস্র যাত্রীদের গুতোয় খেয়ে খেয়ে অফিসে আসা যাওয়া করতেছি, আর আজ একটা চমৎকার গাড়িতে যাচ্ছি জমি দেখেতে! আমি কে? আমি বেসকরী অফিসের ব্ইাশ হাজার টাকা বেতনের একজন কেরানী। যাচ্ছি সাভারে জমি দেখতে…. ভেতরে ভেতরে দম ফাটানো হাসির আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাকীবিল্লার।

প্রায় দেড়ঘণ্টা পড় কনক হাউজিং-এ পৈৗঁছে তো চক্ষু চড়কগাছ। বিশাল জায়গা—যতদূর চোখ যায় কনক হাউজিংয়ের সাইনবোর্ড দাঁড়িয়ে। গাড়ি থামতেই প্রজেক্ট ম্যানেজার দরজা খুলে প্রত্যেকের হাতে একটা লাল গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বলে, কনক হাউজিংয়ে আপনাকে স্বাগতম।

সাইট অফিসে যাবার পর ডিম ভাজা, পরাটা আর বড় বড় মগে গরুর দুধের চা খেয়ে বাকীবিল্লাহ নিজেকে নিয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আরে ব্যাটা, জমি কিনবো কি কিনবো না— ঠিক নেই— আমাদের পিছনে খরচ করছিস?

বাকী ভাই চলেন, আমাদের জায়গা দেখে আসি, চা খাওয়ার পর সাইট অফিস থেকে বের হয়ে কেবল একটা সিগারেট ধরিয়ে বাদশাহী মেজাজে টানছেন বাকীবিল্লাহ।

আবার কোথায়?

হাসে শামসুদ্দিন মিয়া, আমরা তো এলাম মূল হাউজিংয়ের সাইট অফিসে। এখন যাবো আমরা যে পাঁচ কাঠার প্লট ঠিক করেছি দেখার জন্য। ওঠেন—

আবার গাড়িতে চড়ে আঁকা বাঁকা নানা রাস্তা পার হয়ে একটা বিরান জায়গায় গাড়ি থামায় প্রজেক্ট ম্যানেজার। সবাই গাড়ি থেকে নামে। সামনেই ছোট বড় নানা আকারের প্লট সাজানো। কয়েকটায় মালিকের নাম ঠিকানাসহ সাইনবোর্ড দাঁড়িয়ে স্বদম্বে মহিমা প্রচার করছে। এইসব প্লটের মাঝখানে একটা পল্ট দেখায় ম্যানেজার, এইটা আপনাদের জন্য রেখেছি শামসু ভাই। আর দেখেন, প্লটটা কিন্তু কনক হাউজিংয়ের প্রধান যে সড়ক, সেই সড়কেরই পাশেই… কয়েক মিনিট ধরে ম্যানেজার প্লটের মাহাত্য বর্ণনা করে যায়। অনেকের সঙ্গে বাকীবিল্লাহও শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন। সব চেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব মনে হলো বাকীবিল্লাহর, আবার সাইট অফিসে এলে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হলো। বিরানীর প্যাকেট আর কালো পানীয়। সবার সঙ্গে বসে আয়েশ করে খেতে খেতে আবার ভাবনায় ডুবে যান বাকীবিল্লাহ, কেনো ব্যাটারা এতো খরচ করছে? উদ্দেশ্যে কী? খাওয়া দাওয়ার পর আবার গাড়িতে করে ঢাকায় আসার পথে জিজ্ঞেস করে শামসুদ্দিন মিয়াকে, আমাকে বোঝাও তো, তোমার কনক হাউজিং লি. কেনো এতো খরচ করলো?

হাসে শাসমুদ্দিন মিয়া, বাকী ভাই- আপনি তো পড়ে আছেন কূয়ার মধ্যে। আরে বাবা কনক হাউজিং এই দেশের সব চেয়ে বড় প্রজেক্ট। আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না, ওরা কতো হাজার বিঘা জমির মালিক! এখন জমি বিক্রি করতে হবে না? বিক্রির জন্য ক্রেতা লাগবে। আমরা তো এসেছি কিনতে। অফিসে গিয়ে আমরা আলোচনা করবো কবে কিনবো, কতো টাকা দেবো শুরুতে। তো জমি বিক্রির জন্য প্রচার দরকার। আমাদের সন্মান আর আপ্যায়ন করলো, আপনি তো আপনার আশপাশের দু একজনকে কনক হাউজিং সর্ম্পকে বলবেন, বলবেন না?

ঘাড় নাড়েন বাকীবিল্লাহ, নিশ্চয়ই বলবো।

মৃদু হাসি ঝোলে শামসুদ্দিন মিয়ার ঠোটে, ওদের সামান্য এই ইনভেস্টমেন্ট সফল হলো!

তা ঠিক! বাকীবিল্লাহ বুঝতে পারেন, ব্যবসা কেবল ঘি খাওয়ার নয়, মাখারও। হাউজিং কোম্পানীগুলো ব্যবসার জন্য ঘি মাখছে। সেই ঘি থেকে সামান্য, আঙুলের চিমটির মতো পেয়েছেন বাকীবিল্লাহ। ছুটির দিনটা গাড়িতে ঘুরে, খেয়ে দেয়ে ভালাই কাটলো। জীবনে এমন দিন একবার এসেছিল বাকীবিল্লার বিয়ের পর দুই তিন দিন। সুখের রাজকীয় সেই দিন তো হারিয়ে গেছে গহীন গাঙ্গে। বিয়ের পর সংসার, সংসারের পর সন্তান, জীবন দৌড়ুচ্ছে পরিত্যক্ত বাস যেভাবে অতিরিক্ত বোঝা নিয়ে চলছে।

পরের কয়েক দিন অফিসে বাসায় কনক হাউজিংয়ের জমি নিয়ে টানা চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে। বাসায় স্ত্রী রহিমা আখতার একেবারে বিপরীতে অবস্থান নেন, অতো দূরে জমি কিনে কবে বাড়ি করবে? নাই গ্যাস, নাই কারেন্ট।

কারেন্ট না থাকলেও খুটি টানা হয়েছে, সংশোধন করেন বাকীবিল্লাহ। সাইট ম্যানেজার বলেছে, মাস খানেকের মধ্যে কারেন্ট লেগে যাবে।

ওই রকম বলে থাকে হাউজিং কোম্পানীর লোকজন, টাকা নেয়ার ধান্ধা। একবার টাকা নিলে আর ফেরত দেবে না। বুঝতে পারছো?

মাথা ঝাকান বাকীবিল্লাহ, না বোঝার কি আছে।

ওই সব বাদ দিয়ে ঢাকা শহর বা আশেপাশে একটা ফ্ল্যাট দেখো। তোমারও বয়স হয়েছে, আমারও। দূরের ওই জায়গায় কবে বাড়ি হবে, লোকজন আসবে, ততদিনে মরে ভর্তা হয়ে যাব।

হ্যাঁ মা ঠিকই বলেছে বাবা। তুমি ঢাকা শহরের মধ্যে একটা ফ্ল্যাট দেখো, ছোট মেয়ে চুমকী নিজের ইচ্ছে মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়।

ঠিক আছে, বলেন বাকীবিল্লাহ। কিন্ত হাসেন মনে মনে- মেয়েরা আমার বাস করছে কল্পনার সুন্দর রাজ্যে। পরের সপ্তাহে রহিমা আখতার জোয়াসাহারা এলাকার এই ফ্ল্যাটটার সংবাদ জানায়। বাসার কাছে শফিক আলী ফ্ল্যাট কেনা বেচার কাজ করে। শফিকের সঙ্গে এসেছে আহমেদ মকবুলের ফ্ল্যাট দেখতে। ফ্ল্যাটটা দেখে খুব পছন্দ হয় রমিমা আখতারের। রুম দরজা জানালা বাথরুম ঘুরে ঘুরে দেখে আহমেদ মকবুলের সামনেই বলে, ভাই ফ্ল্যাট আপনার ভালোই। দামটা আর ইকটু কমান।

কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সুনীল শর্মাকে ইশারা করেন মকবুল। সুনীল শর্মা সঙ্গে সঙ্গে বাইরে চলে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে টাকা কমানোর দেন দরবার চলছে। আহমেদ মকবুল ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি ব্যবসা বোঝেন, এই ফ্ল্যাট ষাট লাখ টাকার কমে বিক্রি করবেন না, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। ষাট লাখ টাকার কমে বিক্রি করলে লাভ চলে আসবে মার্জিনের কাছাকাছি। তিনি তো দানখাতা খুলে বসেননি। কিন্ত রহিমা আখতার আবদার করছে, ভাই আমরা এতো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারবো না।

আহমেদ মকবুল হাসেন মিটি মিটি, আরে বাবা আমি তো বুঝতে পারছি ফ্ল্যাট তোমাদের পছন্দ হয়েছে। কিনবা ঠিকই এখন বাহানা করছো, কতোটা কমানো যায়। হাসি আড়ালে রেখে আহমেদ মকবুল বলেন, ভাবী আপনি জায়গাটা দেখেছেন? মেইন রাস্তা থেকে মাত্র চার মিনিটের পথ। মেইন রাস্তায় গেলে সারা ঢাকা শহর আপনার হাতের মুঠোয়- বাস রিকশা গাড়ি চলছে দমাদম। বাসটার চারপাশে আলোবাতাস খেলা করে…

সুনীল শর্মা হাতে বিরানীর প্যাকেট আর কালো পানির বোতল নিয়ে ঢোকে রুমের মধ্যে।

মকবুল বলেন, দ্রুত সার্ভ করো। হাতের ঘড়ি দেখেন, আমার সময় কম। মেইন অফিসে যেতে হবে।

গরুর মাংসের হাড়ের রসালো নরম অংশ চুষতে চুষতে বলেন বাকীবিল্লাহ, পিছনের দিকটা একেবারে অন্ধকার। আপনার এই বাড়ি আট তলার কিন্তু পিছনের বাড়িটা বারোতলার। বারোতলা বাড়িটা আপনার আটতলা বাড়িটাকে একেবারে ঢেকে রেখেছে। বাড়ির সামনের সামনের রাস্তাটা তুলনায় খুবই ছোট। বড় একটা গাড়ি ঢুকলে উল্টো দিক দিয়ে একটা রিকশাও ঢুকবে না। সব ফ্ল্যাট বিক্রি হলেও এই ফ্ল্যাটটা কেনো যে হলো না, আমার কাছে অবাক লাগছে। আপনার এই বাড়িটার এই ফ্ল্যাটের মধ্যে ভুত টুথের ব্যাপার আছে নাকি!

আহমেদ মকবুল বুঝতে পারছেন, মূল্যবান গোটা দুপুরটা এই বিরানী খাওয়ানো- সবইটাই শূণ্য। তৃপ্তির সঙ্গে গরুর মাংসের খাওয়া এই লোকটি আমার ফ্ল্যাটটা কিনবে না। লোকটার আচার আচরণ কথার মধ্যে একটা পরিচয়হীন লুম্পেন চরিত্র ঠিকরে বেড়ুচ্ছে। আহমেদ মকবুল গভীর জলের মাছ। জীবন শুরু করেছেন শূণ্য থেকে। জীবনের প্রথস চাকিরটা শুরু করেছিলেন একটা ইনডেটিং ফার্মে, ডেক্স অফিসার হিসেবে। বস ছিল একটা খাটাশ। প্রতি মাসের বেতন দিতে পরের মাসের মাঝামাঝি। তাও ভেঙ্গে ভেঙ্গে। ছয় মাস পর যখন চাকরি ছেড়ে একটা প্রকাশনা সংস্থায় ঢোকেন, তখন পাওনা ছিল ত্রিশ হাজার টাকা। বুঝে গিয়েছিলেন আহমেদ মকবুল এই ত্রিশ হাজার টাকা কোনোদিন পাওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় চাকরি প্রকাশনা অফিসার হিসেবে একটা বনেদী প্রতিষ্ঠানে শুরু করলেও শান্তি ছিল না, বেতন মাসে মাসে পেলেও নিজের দিনের শুরু কখন হতো, রাত কটায় শেষ হবে কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। এগার মাসে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে চলেগিয়েছিলেন আহমেদ মকবুল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর চাকরি কবরেন না, গ্রামের বাড়িতে বাপের যেটুকু সম্পদ পেয়েছেন- সেই জমিতে মাছ চাষ করবেন । সেই দুঃসহ সময়ে দূর সর্ম্পকের মামা এনায়েতুর রহমান জানালেন, হাউজিংয়ে চাকরি করবে কি না!

জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায় একটি সিদ্ধান্তে। আহমেদ মকবুল মাছের কারবারী হবার আগে একটা চান্স দিতে চাইলেন জীবনকে। সিদ্ধান্ত নিলেন ঢাকায় আসবেন, শেষ বারের মতো ট্রাই করবেন জীবনের লাইসেন্স পেতে, দেখতে চান, জীবনের রেলগাড়ি কতদূরে যায়। এলেন ঢাকায়, যুক্ত হলেন এভরিডে হাউজিং লিমিটেডের ফিল্ড অফিসার হিসেবে। কয়েক মাস চাকরি করতে করতে ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে চোখের সামনে নিজেকে অগ্রসর করবার এক সড়ক। বছর দুয়েক পরে অন্য আর একটি হাউজিং ফার্মে জয়েন করেন সিনিয়র সুপারভাইজার হিসেবে। আরও দুই বছর দেশের বড় একটি হাউজিংয়ে জয়েন করেন ডেপুটি পারচেজ সুপারভাইজার হিসেবে— এবং নিজেকে খুব দ্রুত এগিয়ে নিতে শুরু করলেন। এবং তিন বছরের মাথায় নিজেই ছোট আকারের নিজের কোম্পানী অমরাবতী হাউজিং খুলে বসলেন। অমরাবতী হাউজিংয়ের বয়স এখন বারো বছর। ঢাকা চ্ট্রগ্রাম মিলিয়ে বিশটি প্রোজেক্ট চলছে। সেই আহমেদ মকবুল বেকুফ বনে গেলেন একজন কেরানী বাকীবিল্লার কাছে ধরা খেয়ে গেলেন! রাগে শরীর কাঁপলেও নিজকে সংযত করেন আহমেদ মকবুল।

আপনি খান ভালোভাবে ভাই, আমার তাড়া আছে— দাঁড়ান আহমেদ মকবুল।

বিরানী চিবুতে চিবুতে বাকীবিল্লাহ উত্তর দেন, ঠিক আছে ভাই। আপনার ফ্ল্যাট আমার আর আমার স্ত্রীর পছন্দ হয়েছে। কিনবো আমরা, নিশ্চিত থাকেন। কিন্ত দুই একটা সমস্যা যে বের হয়েছে, বাসায় আমার স্ত্রী কন্যাদের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শীঘ্রই আপনাকে জানাবো।

আহমেদ মকবুল নিশ্চিত, এই লোক আর কোনোদিন যোগাযোগ করবে না। কেবল ফ্ল্যাট দেখাকে কেন্দ্র করে একবেলা পেট ভরে খেয়ে গেলো। কিন্ত হাসি মুখে বলেন মকবুল, ওকে। আমার একটা জরুরী বৈঠক আছে, চলি। তিনি দ্রুত রুম থেকে চলে যান আর সুনীল শর্মা মাকুন্দা মুখে দাঁড়িয়ে থেকে বাকীবিল্লার ধীরে সুস্তে শান্তিতে খাওয়া দেখছে। মকবুলের ইচ্ছে হচ্ছে, সুনীল শর্মাকে নীচে নেমে দুই গালে দুইটা চর দিতে। কিন্ত আপন মনে হাসেন, সুনীল শর্মার ঘটে মানুষ চেনা বা বোঝার এতো শাণিত স্রোত নেই। সুতরাং লোকটাকে দশটা থাপ্পর দিয়েই কোনো লাভ নেই। ওর মনে আনন্দ ছিল, ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে দিতে পারলে নগদ নারায়ন পাবে!

বাকীবিল্লাহ দিন রাত ভালোই কাটছে। অফিস করা আর প্রায় বন্ধের দিনগুলোতে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া-ঘোরা চলছে আনন্দঘন অভিসারের বেগে। বাহ, জীবন এক অবাক ঘন্টা! কেবল বাজাতেই জানলেই বেজে চলে টং টং। মোবাইলের কল্যাণে এই হাউজিং ভ্রমনে অনেক বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে বাকীবিল্লাহকে। প্রতিদিন কোনো না কোনো হাউজিং কোম্পানী থেকে অফার আসে…

সেই অফারের যোগসূত্রে বাকীবিল্লাহ এসেছেন বনশ্রীতে রেডি ফ্ল্যাট দেখতে। যথারীতি গাড়িতে নিয়ে এসেছে রেডিয়েন্ট হাউজিং লিঃ। বিরাট প্রজেক্ট- দুই বিঘা জমির উপর আঠারো তলা বিল্ডিং রেডিয়েন্ট হাউজিংয়ের। ঢাকার অন্যান্য হাউজিংয়ের চেয়ে একটু সস্তাও। বারেটার দিকে এসেছেন তিনি। গাড়ি সকাল সকাল পাঠালেও বাকীবিল্লাহ নানা অযুহাতে দেরী করে আসেন, যাতে দুপুরের লাঞ্চটা খাওয়াতে বাধ্য হয় কোম্পানী। তিনি রেডিয়েন্টের এই প্রজেক্টে এসে সব দেখেশুনে স্ত্রী রহিমা আখতারকে ফোনে জানান, এইখানে একটু সস্তায় ফ্ল্যাট পাওয়া যেতে পারে।

তাহলে ভালো করে দেখো।

তুমি দেখলে ভালো হতো।

আজকে তুমি দেখে আসো, আমি আগামী সপ্তাহে যাবো।

ঠিক আছে।

প্রজোক্ট ম্যানেজার জানে আলমের পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে আলাপ করেন বাকীবিল্লাহ। জানে আলম খুশি হয়ে লাঞ্চের জন্য রুমে নিয়ে যায় বাকীবিল্লাহকে। মোরগ পোলাউ আর মোজো সামনে। দুপুর পার হয়ে বিকেল নেমে এসেছে ঢাকা শহরের তপ্ত কপালের উপর। বাকীবিল্লাহ খিদে অনুভব করেন। তিনি আয়েস করে বসে মৌ মৌ গন্ধেভরা মোরগ পোলাউয়ের প্যাকেট খোলেন। পাশে দাঁড়িয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার মোজোর বোতল খুলে রাখে। মুখ কেবলমাত্র একটা লোকমা তুলেছেন বাকীবিল্লাহ, দরজায় একটা ছায়া পড়ে।

সুস্বাধু মোরগ পোলাউ চিবাতে চিবাতে ফিরে তাকান বাকীবিল্লাহ। তাকিয়ে বুঝতে পারেন, আমি এক অন্ধকার ট্যানেলে আটকা পড়েছি।

আপনি এখনও ফ্ল্যাট কিনেন নি? দরজায় দাঁড়িয়ে তিন বছর আগের সেই আহমেদ মকবুল।

না মানে, মুখের কথা সরে না বাকীবিল্লার।

কার সঙ্গে কথা বলছিস? দরজায়, মকবুলের সঙ্গে এসে দাঁড়ায় রেডিয়েন্ট হাউজিংয়ের এমডি, আহমেদ মকবুলের বন্ধু জগলুল আলম।

জানে আলম বলে, স্যার উনি ফ্ল্যাট কিনতে এসেছে। বেশ কয়েকটা দেখে এগার তলার ছয় নম্বরটা পছন্দ করেছে। বাকীবিল্লাহ স্যার ওনার বৌয়ের সঙ্গেও আলাপ করেছে। আগামী সপ্তাহে দুজনে একসঙ্গে এসে দেখে ফ্ল্যাটের বায়না করবেন।

হাহাহা হাসিতে ফেটে পড়েন আহমেদ মবকুল, আমি এই লোকটাকে চিনি তিন বছর আগে থেকে। তোমার বাকীবিল্লাহ প্রতি ছুটির দিনে হাউজিং কোম্মানীতে এসে ফ্ল্যাট দেখে কেনার আশ্বাস দিয়ে পেট ভরে খেয়ে থাকেন, এটা হচ্ছে বাকীবিল্লাহ সাহেবের খাওয়া বিজনেস! আমি ঠিক বলেছি মি বাকীবিল্লাহ…

তুই এসব কি বলছিস, অবিশ্বাস জগলুল আলমের গলায়।

আমাকে বিশ্বাস না হয়, জিজ্ঞেস কর লোকটাকে—

বাকীবিল্লাহ খাওয়া বাদ দিয়ে সামনের দিকের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। দূরের আকাশে কয়েকটা কাক উড়ছে। গলার মধ্যে প্রথম লোকমার পোলাউ পাথরের আকার নিয়ে মিছিল করছে। কালো রঙের মোজোর ছোট বোতলের মধ্যে এ্যাকুরিয়ামের রঙিন মাছ সাঁতার কাটতে দেখছেন। অনেকক্ষণ কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাকীবিল্লাহ পিছনে, দরজার দিকে তাকান, কেউ নেই। কিন্ত তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারছেন না। স্থির অনঢ় বসে আছেন। পা দুটোকে মনে হচ্ছে পাহাড়ের ভার নিয়ে অপেক্ষায় আছে, উড়ে যাবার জন্য। সন্ধ্যার একটু আগে বাকীবিল্লাহ শরীরটাকে টেনে টেনে রুম থেকে বের হলেন। কেউ নেই কোথাও। ঘটনা কি? লোকগুলো কি আমাকে আড়াল থেকে দেখছে? নাকি মারার জন্য গোপনে অপেক্ষা করছে? করিডোরে এসেও কাউকে পান না। তিনি সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে নামতে থাকেন এগারতলা থেকে। কেবল তৈরী হচ্ছে বিল্ডিং, এবড়ো থেবড়ো সব। রেলিং নেই, অন্ধকার, যে কেনো সময়ে পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু নিজকে সামলে অভুক্ত শরীরে নেমে আসছেন, নামাটা মনে হচ্ছে অনন্তকালের নাকি সিঁড়িটা অনন্ত!

নামতে নামতে বাকীবিল্লাহ যখন বিল্ডিংটার সামনের রাস্তায় নীচে নামনে, তখন সন্ধ্যা। রাস্তায় জ্বলছে আলো। চারদিকে অজস্র মানুষের অজস্র কোলাহল। সেই কোলাহলের মধ্যে বাকীবিল্লাহ আড়শোলার মতো হাঁটছেন নিঃশব্দে। ফোন করেছেন রহিমা আখতার। তিনি রিসিভ করেন না। পকেটের রেখে দেয়া মোবাইল আপন সুরে বাজতে থাকে। হাঁটতে থাকেন ফুটপাত ধরে আলো ও অন্ধকারের ঘণিভূত মোহমায়ায়। আবার ফোন বাজে, বাজতেই থাকে, বাকীবিল্লাহ হাঁটতে থাকেন। হাঁটতে হাঁটতে তিনি যখন শহরের শেষ মাথায় পৌঁছান তখন রাত গভীরে। নিজের দিকে দেখতে পান, শরীরে কোনো কাপড় নেই।

শহরের শেষ প্রান্ত থেকে বাকীবিল্লাহ শহরের দিকে হাঁটতে শুরু করেন… একা হাটঁছেন নিজের সঙ্গে ….

1 thought on “রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন নগ্ন বাকীবিল্লাহ”

  1. ওয়াহাব রুশদি

    Moni Haider জীবনের গল্প। ভালো লাগলো!

    বাকিবিল্লাহকে বিভিন্ন প্রজেক্ট এ গিয়ে খাওয়া বিষয়টাকে আমি নেগেটিবলি দেখছি না….

    কারন তার সক্ষমতাও নেই ফ্লাট কেনার, তার চাকুরির বেতনে তো একটা ফ্লাট কেনা সম্ভব নয়, তিন বছর ধরে ফ্লাট কিনবে বলে বিভিন্ন প্রজেক্ট ভিজিট করে স্ত্রী কন্যাদের শান্তনা দেয়া ছাড়া আর কি বাই করার আছে বাকিবিল্লার…..

    আর মকবুল সাহেব যেহেতু দেখেছে তিন বছর আগে বাকিবিল্লাহ তার ফ্লাটটিও কিনে নাই, তাই তাকে বন্ধুর সামনে বাকিবিল্লাহকে অপমান করতে ছাড় দেননি।

    নতুন জায়গায় ফ্লাট কিনতে যেয়ে মুকবুল সাহেবকে দেখে….. বাকিবিল্লাহ ভাতের প্রথম লোকমা লেখার অংশ থেকে….. গল্পের শেষ লাইন পর‍্যন্ত লেখক মনি হায়দারের লেখার প্রতিটা শব্দ পড়তে আমার ভালো লেগেছে….

    বাকিবিল্লার প্রতি মায়ার টান অনুভব করছি। আমার সক্ষমতা থাকলে, একটা অফারে বাকিবিল্লাকে তার প্রতি মাসের বাড়ি ভাড়ার মুল্যে লম্বা কিস্তিতে একটা ফ্লাট ক্রয় করাতে সহযোগিতা করতাম। আমার দেয়া কাল্পনিক ফ্লাটটা বুঝে পাওয়ার পর বাকিবিল্লার ছোট দুটো মেয়ের উচ্ছাস হাসি দেখতে পেতাম……

    লিখে যাও হে বন্ধু মনি হায়দার
    তোমার শুভ কামনায়

    পাঠক
    ওয়াহাব রুসদি

Leave a Reply to ওয়াহাব রুশদি Cancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *