নারী : শিল্প ও সমাজতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ

নারী ও পুরুষের মিলিত প্রবাহে জীবন বহমান। চিরকাল এই সত্যের মধ্যে বাস করেও মানুষ কেন জানি বুঝে উঠতে পারে না। জীবনের গল্পে নারী ও পুরুষের রয়েছে সমান ভূমিকা। পৃথিবীতে সকলকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। এই লড়াই ঠিক থাকার, ভালো থাকার, আনন্দে থাকার। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর সংবেদনশীল মনোভাব জীবনকে ও বেঁচে থাকাকে অর্থবহ করে তুলতে পারে। কিন্তু এই মনোভাবের বিপরীতটাই বেশি দেখা যায় আমাদের চারপাশে। এক্ষেত্রে বৈষম্যের পাল্লা ভারি নারীদের দিকের। ফলে নারী-পুরুষের মধ্যে একটা অসম সম্পর্ক তৈরি হয়ে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে সমাজে। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) বলেন, ‘নরনারী উভয়ে মিলেই একটি সম্পূর্ণ সত্তা। একে অপরের পরিপূরক।’(বেবেল, ২০১৮ : পৃ. ৩৬) অথচ আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও দেখা যায় সমাজ এই সত্য এখনো সে অর্থে আয়ত্ত করতে পারেনি।

সিমোন দ্য বোভেয়ার তাঁর ‘The Second Sex‘ গ্রন্থে বলেন, ‘কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং নারী হয়ে ওঠে।’(বোভেয়ার, ২০১৯ : পৃ. ১৮৩) এই ‘হয়ে ওঠা’য় অনুঘটকের কাজ করে পুরুষতন্ত্র। নারীর ওপর প্রভুত্ব বিস্তারের কৌশল হিসেবে তার দুর্বলতাগুলো বড় করে উপস্থাপন করে সমাজ। এভাবে নারীর গুরুত্ব কমানোর খুব হীন একটা প্রয়াস চলে অতি সন্তর্পণে। প্রত্যেকটা মানুষের যেমন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শিতার ব্যাপার আছে, তেমনি ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতাও আছে। নারীও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে চারপাশে বিদ্যমান নারীর প্রতি বৈষম্যগুলোকে শিল্পের অঙ্গনে এবং সমাজতাত্ত্বিকদের চোখ দিয়ে দেখার অভিপ্রায়ে এই লেখার আয়োজন।

অনেকে হয়তো ভাবেন প্রাকৃতিকভাবে নারীর প্রতি উপেক্ষা উঠে গিয়ে সমাজ বৈষম্যহীন হবে। এছাড়া উপায়ই বা কী? কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস যে অন্য কথা বলছে। পুরাণ আসলে এক অর্থে সমাজের চালচিত্র তথা লোকাচারের বয়ান–দেবকথার মধ্যে দিয়ে। তো সেই মহাভারতের যুগে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ পালা হস্তিনাপুরের রাজসভা অবলোকন করে মজা আহরণ করেছে। (ব্যাস, ২০১১ : পৃ. ১৪১-১৪৫) আর হাজার হাজার বছর পৃথিবীর বয়স বেড়েও, নক্ষত্রের আলো ঈষৎ নিভে গেলেও সেই বস্ত্রহরণ পালা প্রতি ঘরে ঘরে, সমাজে, রাষ্ট্রে অভিনীত হয়েই চলেছে। ফর্মগত কিছু পরিবর্তন হয়তো কালের পরিক্রমায় হয়েছে কিন্তু গল্পের সারবস্তু একই রয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বিজ্ঞাপনের দিকে তাকানো যেতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না সেখানে পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীও এক ধরনের পণ্য। তাহলে কি কোনোই পরিবর্তন ঘটবে না? অনেক দিন ধরে চলা অনিয়ম নিয়মে দাঁড়িয়ে যায়। হয়তো নারীদের প্রতি অবমাননা পুরুষের ডিএনএ, আরএনএর গঠনে ঢুকে গেছে। তাই পদ্মা নদীর মাঝির কুবেরের মতো করে ভাবা যায়, ‘এমনভাবে তাহাকে বঞ্চিত করিবার অধিকারটা সকলে তাই প্রথার মতো, সামাজিক ও ধর্মসম্পর্কীয় দশটা নিয়মের মতো, অসঙ্কোচে গ্রহণ করিয়াছে . . .।’ (বন্দ্যোপাধ্যায়, ২০০০ : পৃ. ১১) আর ঠিক দশটা নিয়মের মতো নারীকে ঠকানোটাও একটা রেওয়াজ। রেওয়াজ বা নিয়ম তো একটা সময় মূল্যবোধের মতো বড় বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

এদেশে সর্বগুণান্বিতা হবার দাবী মেয়েদের উপরে। বিবাহযোগ্য কন্যাকে হতে হবে বিদুষী, কলাবতী সুধীরা ও গৃহকর্মনিপুণা। যে মেয়ে ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে বি. এস. সি. পাশ করেছে তাকেও কার্পেটে ফুল তোলা শিখতে হয়, বড়ির ফোড়ন দিয়ে মোচার ঘন্টা রাঁধতে জানতে হয় এবং সম্ভবপর বরের বন্ধুদের সামনে কনে বাছনির সময় মহাত্মা গান্ধীর একটি অতি পরিচিত ফটোর ভঙ্গিতে মাদুরে বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান ধরতে হয়’ [‘] যে ছিল আমার স্বপনচারিণী তারে’ ইত্যাদি।

বিবাহের দরবারে পুরুষের কাছে প্রত্যাশা সামান্য। ডাক্তার বরের মাসিক আয়ের খোঁজ নিয়েই মেয়ের মায়েরা খুশি থাকেন, তার ক্রীড়া-দক্ষতা, অভিনয় পারদর্শিতা কিংবা বক্তৃতা শক্তি নিয়ে মাথা ঘামান না। ছেলেরা করবে শুধু একটা। হয় পড়ালেখা, নয় ফুটবল, নয়তো ইন্কেলাব জিন্দাবাদ। মেয়েদের বিচার কোনো একটা। মাত্র কৃতিত্ব নয়, সব কিছু মিলিয়ে। তাদের দাম প্রথমতঃ রূপে, তারপর তাদের বিদ্যায়, তাদের সঙ্গীতে, তাদের নৃত্যে, তাদের সূচীশিল্পে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পিতৃকুলের ব্যাংকের ব্যালেন্সের পরিমাপে। (যাযাবর, ১৯৯৯ : পৃ. ৪৬)

এই চিত্র বিশ শতকের চতুর্থ দশকের নয়াদিল্লির শিক্ষিত সমাজের। অর্থাৎ ঐ পরিপ্রেক্ষিতে বলা। আর শঙ্কর তাঁর এপার বাংলা ওপার বাংলা গ্রন্থে ষাটের দশকের প্রথম বিশ্বের তথা আমেরিকার নারীদের, মানে শিক্ষিত নারীদের নিয়েও, এমন প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। সেখানে সপ্তাহান্তে যেসব সাবালক মেয়ে ডেটে যায় না তাদের মায়েরা উৎকণ্ঠায় থাকে মেয়ের পাত্রস্থ করার ব্যাপারে। মেয়েদের জীবন নিয়ে লেখকের সঙ্গে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী হেলেন মিড-এর। তার কথায় এটা স্পষ্ট যে এখানে মেয়েরা অনেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আসে একজন ভালো জীবনসঙ্গী পাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমেরিকার মেয়েরা অনেকেই মাদাম কুরি হতে চায় না। কেননা তাদের ভাবনাটা এমন:

. . . প্রতিভাময়ী মেয়ে হলে কেউ আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না। আমাকে বেচারা আন্টি সুশাসনের মতো চিরকুমারী থাকতে হবে। সবাই আমার মাথার প্রশংসা করবে কিন্তু কেউ প্রেম করতে চাইবে না। তার থেকে আমি বরং সেক্রেটারী হবো… হার্ভার্ডের গ্রাজুয়েট কার্তিকের মতো ছেলের সঙ্গে আংটি বদল করবো, বিয়ের পর তার আদর যত্ন করবো- দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা হবো এবং ওদের নিয়েই ব্যস্ত থাকবো। রক্ষে করো, আন্টি সুশাসনের মতো আইবুড়ো রয়ে গেলে–একলা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে হবে, লোকে আড়ালে হাসাহাসি করবে। (শংকর, ২০০২ : পৃ. ১৯২)

ভাবতে অদ্ভুত লাগলেও এসবে সত্যতা রয়েছে। এখানকার বাবা-মায়েরা চান মেয়ে ইভ কুরি এবং এলিজাবেথ টেলর একসঙ্গে হোক। কেননা তারা জানে আমেরিকার ছেলেরা নিজেদের দাম জানে। গল্পগুলো আমাদের দেশের মতোও অনেকটা। মেধাবী মেয়েদের পাত্র পাওয়া মুশকিল। এই ব্যাপারটা তো আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে আছে।

সভ্যতার যতই অগ্রগতি হোক মূলে অর্থাৎ শেকড়ে একটা অন্ধকার রয়ে গেছে। আমাদের দেশের সঙ্গে এই আমেরিকান সমাজের নারীদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের খুব বেশি হেরফের নেই। অবশ্য এক দিকে এগিয়ে আছে–সেটা হলো অর্থনৈতিকভাবে তারা বেশ স্বাবলম্বী। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যেটা আবার আমাদের দেশের মেয়েরা পারে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তাহলে রোকেয়া কথিত বিকশিত হওয়ার ব্যাপারটা খুব কার্যকর বলা যায় কি? হ্যাঁ, এই অর্থে বলা যায় যদি দূর কোনো ভবিষ্যতে পুরুষ নারীকে মর্যাদা দিতে শেখে তাহলে তার মূল্য আছে। আসলে সমস্যা জেন্ডারসংক্রান্ত মানসিকতায়। হুমায়ুন আজাদ তাঁর নারী গ্রন্থে অ্যাডলারের নারী ভাবনাকে তুলে ধরেন এভাবে:

শিশুকাল থেকে শিশুরা পিতৃতন্ত্রের বিধানের শিকার হয়ে ওঠে। ছেলেশিশুকে ক’রে তোলা হয় আধিপত্যবাদী, মেয়েশিশুর মধ্যে জাগিয়ে তোলা হয় অধীন ও অপদার্থের বোধ। অ্যাডলারের মতে, বালিকা চারপাশে নারীর বিরুদ্ধে কুসংস্কার দেখে দেখে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে নিজের আর নারীজাতির ওপর; এটা কোনো খোজা গূঢ়ৈষার ফল নয়, সমাজব্যবস্থাই তাকে ক’রে তোলে আত্মঅবিশ্বাসী। নারীকে বের ক’রে দেয়া হয় শক্তির এলাকা থেকে, পুরুষের সমাজব্যবস্থা তার সাথে এমন দুর্ব্যবহার করে যে তার মনে দেখা দেয় সংকট। সমগ্র সভ্যতা নারীর ওপর যে-চাপ সৃষ্টি করে, তা নারীকে বাধ্য করে পুরুষের কাছে আত্মসমর্পণে। তার পক্ষে সুস্থ থাকা কঠিন। তিনি দেখিয়েছেন সমাজ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজকেই মনে করে পুরুষের কাজ, গুরুত্বহীন কাজকে মনে করে নারীর কাজ; পুরুষ গুরুত্বপূর্ণ, শক্তিমান, সুযোগ্য; নারী বাধ্য, দাসভাবাপন্ন, অধীনস্থ। তিনি দেখিয়েছেন পুরুষ নারীর প্রতি যে-সৌজন্য দেখিয়ে থাকে, তাতে মনে হয় যে নারীদের খুব মূল্য দেয়া হচ্ছে; তবে তাও করা হয় পুরুষের সুবিধার জন্যে। (আজাদ, ২০১১ : পৃ. ১৬৯)

এই গ্রন্থের ফ্ল্যাপে বলা হয়েছে, “কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, পুরুষতন্ত্র ক্রমশ একটি মানুষকে ক’রে তোলে নারী। পুরুষ সৃষ্টি করেছে নারীর অবস্থান, তৈরি করেছে নৃশংস বিধিমালা, ক’রে তুলেছে তাকে কামসঙ্গী ও পরিচারিকা। . . . পুরুষের চোখে নারী অসম্পূর্ণ মানুষ, এক ‘আপেক্ষিক প্রাণী’।”(আজাদ, ২০১১ : কাভার পৃষ্ঠা) এই কথাগুলোর প্রতিধ্বনি গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের কথায়ও পাওয়া যায়। তিনি বলেন:

উপনিবেশবাদী ইতিহাসতত্ত্ব এবং প্রজাবিপ্লবের বিষয়ে উভয়ক্ষেত্রেই লিঙ্গের আদর্শ গঠনটি পুরুষকে প্রাধান্য দিয়েছে। যদি এই হয় যে উপনিবেশের উৎপাদন প্রসঙ্গে সাবঅলটার্নদের কোনো ইতিহাস নেই এবং কোনো বক্তব্যও রাখতে পারে না, তবে নারী তো সাবঅলটার্ন হিসেবে আরো অনেক অন্ধকার ছায়ার গভীর তলদেশে অবস্থান করছে। (স্পিভাক, ২০২১ : পৃ. ৪৭)

অ্যাডলার এবং গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ভিন্নভাবে বললেও মূল কথাটা এক। পুরুষতন্ত্রের নারীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার কোনো সদিচ্ছা বা প্রবণতা নেই। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নারী যখন এভাবে উপেক্ষার শিকার হয় তখন তলিয়ে দেখার আর কিছু থাকে না। আর এসব প্রক্রিয়া একেবারে পরিবার থেকেই শুরু হয়। এবং ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকে।

রাষ্ট্র কী? এটা তো আসলে মানুষের কল্যাণের জন্য মানুষের তৈরি করা প্রতিষ্ঠান। সেখানে কেন বৈষম্য হবে? কারা এর নিয়ন্ত্রক? তাহলে তো সেই গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক-এর কথাতেই আসতে হয়- নারীর কোনো কিছু বলার থাকে না। অবশ্য রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্ন লেখাটায় এক অভিনব রাষ্ট্রভাবনা দেখানো হয়েছে। সুলতানা ভগিনী সারার (ইউরোপের রমণী) সঙ্গে ‘নারীস্থান’-এ যায়। সেখানকার নিয়ম-কানুন তথা নারীদের রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে বিশদ বিবরণ শোনে। কী করে আদ্যাশক্তি নারী তার শ্রম, মেধা, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে পুরুষের চেয়ে ভালো কাজ করছে সেটা দেখানো হয়েছে। এবং প্রভুত্ব করার বিষয়ে বক্তব্য স্পষ্ট। ভারতবর্ষে যার বল বেশি সেই প্রভুত্ব করে। সুলতানা বলেন:

. . . সামাজিক বিধিব্যবস্থার উপর আমাদের কোনো হাত নাই। ভারতে পুরুষজাতি প্রভু,-তাহারা সমুদয় সুখ সুবিধা ও প্রভুত্ব আপনাদের জন্য হস্তগত করিয়া ফেলিয়াছে, আর সরলা অবলাকে অন্তঃপুর রূপ পিঞ্জরে আবদ্ধ রাখিয়াছে! উড়িতে শিখিবার পূর্বেই আমাদের ডানা কাটিয়া দেওয়া হয়- তদ্ব্যতীতে সামাজিক রীতিনীতির কত শত কঠিন শৃঙ্খল পদে পদে জড়াইয়া আছে। (রোকেয়া, ১৯৯৯ : পৃ. ১০৩)

এসব শুনে নারীস্থানের ভগিনী সারা বলেন:

কেবল শারীরিক বল বেশী হইলেই কেহ প্রভুত্ব করিবে, ইহা আমরা স্বীকার করি না। সিংহ কি বলে বিক্রমে মানবাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নহে। তাই বলিয়া কি কেশরী মানবজাতির উপর প্রভুত্ব করিবে? আপনাদের কর্ত্তব্যের ত্রুটী হইয়াছে, সন্দেহ নাই। আপনারা সমাজের উপর কর্ত্তৃত্ব ছাড়িয়া একাধারে নিজের প্রতি অত্যাচার এবং স্বদেশের অনিষ্ট দুই-ই করিয়াছেন। আপনাদের কল্যাণে সমাজ আরও উন্নত হইত- আপনাদের সাহায্য অভাবে সমাজ অর্দ্ধেক শক্তি হারাইয়া দুর্ব্বল ও অবনত হইয়া পড়িয়াছে। (রোকেয়া, ১৯৯৯ : পৃ. ১০৩)

কথাগুলো ভেবে দেখার মতো। রোকেয়া একশ বছর আগে বুঝেছিলেন পুরুষের পেশিশক্তির দাপটের বিষয়টি এবং কী সুন্দর যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন- নারীরা সরে এসে সমাজের ক্ষতি করেছে।

সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী প্রথম বৈষম্যের শিকার হয় নারীর কাছে, নারীর দ্বারা এবং সে ‘নারী’ এই বোধ তার মধ্যে দিয়ে দেয় তার মতো আরেকজন নারী। কেননা ঐ নারীটিও এভাবে বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছে। তার মস্তিষ্কের এই গঠনের জন্য পরোক্ষভাবে পুরুষতন্ত্র দায়ী। একটা মেয়েশিশু জন্মানোর পরে সমাজ নিয়ম আর মূল্যবোধের প্রশ্ন তুলে তাকে কারাগারে বন্দি করে ফেলে। বড় হতে হতে মেয়েটি বুঝে নেয় তার চারপাশে অদৃশ্য বেড়াজাল যা কখনো কখনো তার নিঃশ্বাসকে পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত করে। একটি ছেলেশিশুকে কিন্তু এসব বলা হয় না। সে মুক্ত। এবং সে জন্মের পর থেকে দেখে আসছে একটি মেয়েশিশুর পদে পদে প্রতিবন্ধকতাগুলো। ফলে সে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এই বোধে যে মেয়ে হলে এমন হবে বা মেয়েরা এমন হয়। হয়তো এরকম অনুভব থেকেই সমরেশ মজুমদার লিখে ফেললেন বিশাল একখানা বই মেয়েরা যেমন হয়। তিনি তাঁর এই বইয়ে খুব হিসেব করে সমাজের উপরিতলে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের দেখেছেন। গল্পের অন্তরালে কী আছে তার কারণ অনুসন্ধানে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। এবং এই দেখাটার মধ্যেও একটা ব্যালান্স করার ব্যাপার আছে। অতীত-বর্তমান, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, সংস্কারাচ্ছন্ন-সংস্কারমুক্ত এমন ব্যালান্স পরিলক্ষিত হয়। সবাইকে খুশি রাখার একটা সচেতন প্রয়াস সচেতন পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক করতেই পারে। আরেকটি বিষয় তিনি কৈফিয়ত দিয়েছেন- যা দেখেছেন তাই বলছেন। তবে দেখাটা আরেকটু গভীরতলসঞ্চারী হলে তাঁর চিন্তার সূত্রটা পাঠক ধরতে পারত। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছেন। তবে এই বইয়ের শেষ কথাটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে:

মনে রাখতে হবে, আমাদের অনেক দেবী, তাদের পুজো আমরা করি কিন্তু ভগবান বললেই আমরা একজন পুরুষমানুষকে কল্পনা করি, কোনো দেবী নয়।

আর সেই ভগবানরূপী পুরুষমানুষ তো মেয়েদের জানতেই চাইবেন না। তাতে অনেক সুবিধে। (মজুমদার, ২০২০ : পৃ. ২৪০)

ঠিক তাই। এই ‘সুবিধে’ সমাজের চালকের আসনে বসা পুরুষদের। তারা তাদের সহযাত্রীদের অজ্ঞতার বেড়াজালে আবদ্ধ করে রেখে ফাঁকা ময়দানে বীরত্ব দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এতে আসলেই সুবিধা অনেক।

এবারে সভ্যতার ইতিহাসের দিকে চোখ রাখা যাক। সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীর অবদানকে অস্বীকার করা হয় না। তবে খুব বেশি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করা হয় তাও না। ভারতবর্ষের সেই আদি যুগে নারী বেদ রচনা করেছে অথচ এই সমাজই পরবর্তীকালে নারীর বেদ স্পর্শ করার অধিকার ছিনিয়ে নেয়। আদিম গুহাবাসী মানুষও নারীর প্রতি এক ধরনের প্রভুত্ব করেছে। যখন থেকে রাজ্য জয় বা যুদ্ধবিষয় পুরুষের মাথার মধ্যে ঢুকেছে সেই আদিম সমাজে তখন থেকে তারা নারী ও শিশুকন্যাকে জীবন্ত বধ করেছে পুরুষের সঙ্গে তাদের অনুপাত যাতে না বাড়ে তাই। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যখন পালিয়েছে তখন অসুস্থ শিশুদের সঙ্গে কখনো কখনো নারীদেরও ফেলে রেখে গেছে। প্রয়োজনে নারীর মাংস ভক্ষণ করেছে। এর উল্টো চিত্র কিন্তু মেলা ভার। ভারতীয়দের মতো আমেরিকার অসভ্য ছিনুক জাতিরাও অতিথির শয্যায় বাড়ির কন্যা অথবা স্ত্রীকে পাঠিয়ে অতি উত্তম কাজ করত তাদের মতে। ‘চীনেদের দেশে একটি প্রচলিত বাক্য আছে, জ্ঞান যেমন পুরুষের শোভা বৃদ্ধি করে, অজ্ঞান তেমনি স্ত্রীলোকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।’ (চট্টোপাধ্যায়, ২০১২ : পৃ. ৬৬৮) কিন্তু প্রাচীন সমাজে বেশ কিছু ক্ষমতা এবং জ্ঞানের ঔজ্জ্বল্যে দীপ্তমান নারীর কথা জানা যায়।

প্রাচীন শাসকদের মধ্যে মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা ছিলেন পৃথিবীর বিখ্যাত।

প্রকৃতপক্ষে মিশরের সাতজন রানির নাম ছিল ক্লিওপেট্রা। . . . উক্ত সাতজন ছাড়াও আরও অনেক রানি পেয়েছিল মিশর। . . . দেশটি বরাবরই ছিল নারী শাসকদের জন্য সুবিদিত।

. . .

শোনা যায়, এই ক্ষমতাবান নারীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা এতটাই বেশি ছিল যে, বিদেশি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা রাজার তুলনায় তাকেই প্রাধান্য দিত বেশি। মিশরের আরেকজন রানি ছিলেন নেফেরতিতি। স্বামীর মৃত্যুর পর মিশরের হাল ধরেছিলেন তিনি। তবে মিশর শাসন করা প্রথম দীর্ঘস্থায়ী রানি ছিলেন দ্বাদশ রাজবংশের শাসক সবেকনেফেরু। অবশ্য ইতিহাসের পাতা উলটালে তার আগেও কমপক্ষে ছয়জন রানির উল্লেখ পাওয়া যায়। বাস্তবতা হলো, বিভিন্ন সময় মোটামুটি কয়েক ডজন নারী দ্বারা শাসিত হয়েছে আফ্রিকা। তাদের অনেকের আবার একাধিক ক্রীতদাসও ছিল।

১৯১৩ সালে প্রকাশিত ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া জানাচ্ছে- একজন স্প্যানিশ নারী জুলিয়ানা মোরেল মাত্র চার বছর বয়সে গ্রিক, ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষা শিখতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, নাগরিক আইন ও ধর্মশাস্ত্রে বিস্তারিত তালিম নেন। ১৬০৮ সালে জুলিয়ানা যখন আইনে তার প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রিটা অর্জন করেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
. . .

১৬৩৯ সালে আমেরিকায় L’Ecole des Ursulines de Quebec নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় ছিল; বর্তমানে যা মেইনে অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি একসময় একচেটিয়াভাবে মেয়েদের শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিল। . . .

১৬৩৯ সালের ৪ অক্টোবর মার্গারেট ব্রেন্ট প্রথম নারী হিসেবে আমেরিকায় নথিভুক্ত ভূমির মালিকানা পান। প্রাথমিকভাবে সেটার পরিমাণ ছিল ৭০ একর; . . .

(লুইস, ২০২২ : পৃ. ১৯-২১)

উদ্ধৃতির উদাহরণগুলো নারীর প্রাগ্রসর সামাজিক অবস্থানকে নির্দেশ করে। কিন্তু আপামর নারী কতটা এগিয়েছিল কিংবা নারী তার ক্ষমতার বলয়কে শেষ অবধি সুরক্ষিত রাখতে পারল না কেন কিংবা ক্ষমতার কেন্দ্রে (ক্লিওপেট্রা) থাকা নারীদের জন্য এসব কতটা উপভোগ্য ছিল- এমন প্রশ্ন সহজাতভাবে চলে আসে। কারণ খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে অনুভূত হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের (নারী ও পুরুষের মধ্যে) জায়গাটায় একটা ফাঁক রয়ে গেছে। সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর ‘প্রাচীন ভারতে নারী’ প্রবন্ধে বলছেন, “সুপ্রাচীন যুগে খানিকটা স্বাধীনচারিণী থাকলেও অচিরেই নারী পুরুষের বশংবদ ও আজ্ঞাবাহিকায় পরিণত হল।” (চন্দ, ২০০২ : পৃ. ১৭) পুলক চন্দ বিষয়টিকে এভাবে দেখছেন:

. . . শুরুর গল্প কিন্তু গুছিয়ে প্রথম শুনিয়েছিলেন ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস, তাঁর The Origin of the Family, Private Property and the State (১৮৮৪) গ্রন্থে। বলেছিলেন, নারীর সেই ‘বিশ্ব ঐতিহাসিক পরাজয়’-এর কথা। একগামিতা, পরিবার ও ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে তার হাত থেকে ‘ভুবনের ভার’/‘মাতৃঅধিকার’ (‘mother right’) কী ভাবে [কীভাবে] চলে গিয়েছিল পুরুষের কবজায়। আমরা দেখলাম বাইরের পৃথিবীর দখলদারি ও কর্মের জগতে পরাজিত নারী, মর্যাদা হারিয়ে পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হল, এবং আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে পড়লে চার দেওয়ালের দাসত্বে- সন্তানধারণ-পালন-সেবা-কর্তব্য-অকর্তব্যর বাঁধনে। সমাজের কাছে নারীর এই গৃহশ্রম ও ভূমিকার গুরুত্ব কমে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ল ঘরের বাইরে পুরুষের সমস্ত কাজের গুরুত্ব ও গৌরব। অন্যদিকে, নারীর স্বাধীন ব্যক্তিসত্তাকে স্বীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক পিতৃতন্ত্র শুধু তার শরীর তথা গর্ভের দখল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকল না, তার মন ও মানসিকতাকেও সুবিধা মতন ছাঁচে পুরদস্তুর ঢেলে নিতে চাইল। এমন ভাবে, যাতে সে স্বেচ্ছায় নিজের এ অবদমনকেও অনুমোদন জানায়, সহায়ক পর্যন্ত হয়ে ওঠে। তাই, পিতৃতন্ত্র নারীর চারপাশে যে গণ্ডি টেনে দিল তার সমীচীনতা প্রতিপাদনের লক্ষ্যে, ভারতবর্ষীয় সমাজের বাস্তবতায়, তৈরি হল পরিপূরক সাহিত্য, অতিকথা। গজিয়ে উঠল ধর্মশাস্ত্রীয় হাজারো বিধান, আচার অনুষ্ঠান, অনুশাসন, পাপপুণ্যের তত্ত্ব। পদে পদে চেতাবনি- শাস্তিদানের অকৃপণ আয়োজন। প্রাত্যহিক জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে এই সব এক সময় নারীর চিন্তাচেতনার গভীরে চারিয়ে গিয়ে তৈরি করল আধিপত্য-আনুগত্যর সুস্পষ্ট বুনট। (চন্দ, ২০০২ : পৃ. ০৮)

জ্ঞান আহরণ, ধর্মীয় কথাবার্তা তথা নারীর ব্যাপারে শাস্ত্রে কী বলা হয়েছে এটা নিয়ে শরৎচন্দ্র তাঁর ‘নারীর মূল্য’ প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মূল কথাটি তুলে ধরেছেন। এসব নিয়ে ভাবনার সারকথাটা শরতের ভাষায় এমন:

‘পছন্দ করি না’ এইটাই আসল কথা। বাস্তবিক কোন শাস্ত্রই পুরুষে অধিক দিন মানিয়া চলে না, যদি না তাহা তাহাদের আন্তরিক অভিপ্রায়ের সহিত মিশ খায়। মিশ খাইলে, তখনই সেটা টিকসই হয়, অন্যথা, স্বয়ং ভগবান রাস্তায় দাঁড়াইয়া নিজের মুখে চেঁচাইয়া বলিয়া গেলেও হয় না। হইতে পারে, অবস্থা-বিশেষে এই শাস্ত্র কাহারও বা দুঃখ উপস্থিত করে, কিন্তু সাধারণ ইচ্ছার চাপে এ দুঃখ স্থায়ী হইতে ত পায়ই নাই, পরন্তু দুঃখ উৎকৃষ্টতর ধর্মের আকার ধরিয়া পরলোকে শতগুণ সুখের আশ্বাস দিয়া পরিতৃপ্ত করিয়া যায়। পুরুষের ক্ষণিক দুঃখ ক্ষণিকেই শেষ হয়, কিন্তু চিরদুঃখ যাহাকে সহিতে হয়, সে নারী। (চট্টোপাধ্যায়, ২০১২ : পৃ. ৬৭২)

ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি তাঁর স্যাপিয়েন্স গ্রন্থে বলছেন:

বিভিন্ন সমাজে নারীরা ছিল পুরুষের, অর্থাৎ তাদের বাবা, স্বামী বা ভাইয়ের সম্পত্তি মাত্র। অনেক আইনি ব্যবস্থায়, ধর্ষণ সম্পত্তি আইনের অর্ন্তভুক্ত, বা অন্য কথায় ধর্ষিতা নারী নয়, বরং তার মালিক পুরুষটিই গণ্য হয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে। এই ক্ষেত্রে আইনি সমাধান হচ্ছে মালিকানার হাতবদল- ধর্ষককে ধর্ষিতার পিতা বা ভাইকে পণের টাকা দিয়ে পণ্যটির, অর্থাৎ নারীটির মালিকানা বুঝে নিতে হতো। বাইবেলে রায় দেওয়া আছে, যদি কোনো পুরুষ বাগদান সম্পন্ন হয়নি এমন কোনো কুমারীর সাক্ষাৎ লাভ করে, তাকে হরণ করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে এবং ধরা পড়ে, তবে সে ঐ নারীর বাবাকে ৫০টি রৌপ্যমুদ্রা দেবে এবং ঐ নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে (ডিওটেরনমি, ২২ : ২৮-৯)। সে যুগের হিব্রুভাষীদের কাছে এই বিধান বেশ যুক্তিসম্মতই মনে হয়েছিল*।

[*দুঃখজনকভাবে এই উপমহাদেশের বেশির ভাগ জায়গাতেই এখনও এই মানসিকতাই বিদ্যমান। আর তাও সেটা ধর্ষণকারী ধরা পড়লে। ধরা না পড়লে সব নিগ্রহ স্রেফ ধর্ষিতার। -অনুবাদক]

আর যে নারী কোনো পুরুষের সম্পত্তি ছিল না, তাকে ধর্ষণ করা অপরাধ বলে গণ্যই হতো না। যেমনটা ব্যস্ত রাস্তায় পরে [পড়ে] থাকা পয়সা কুড়ানোকে চুরি হিসেবে ধরা হয় না। কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করলে তা মোটেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো না। এই ধারণা আসলে অনেকটা ‘সোনার পাথরবাটি’র মতো। স্বামীপ্রবর মানেই স্ত্রীধনের উপর পূর্ণ মালিকানা। যদি বলা হতো, অমুক স্বামী তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করছে, তবে সে যুগের মানুষের কাছে তা শোনাত নিজের টাকার থলি থেকে চুরির মতোই অযৌক্তিক কথা। এই ধারণা অবশ্য শুধু প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ২০০৬ সাল নাগাদও বিশ্বের ৫৩টি দেশে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী ধর্ষণ কোনো আইনি অপরাধ ছিল না। এমনকি জার্মানিতেও মাত্র ১৯৯৭ সালে ধর্ষণ আইনে সংশোধনী এনে বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনের আওতায় আনা হয়। (হারারি, ২০১৪ : পৃ. ১৫৯-১৬০)

এরপর আর বেশি কিছু বলার থাকে না। ন্যূনতম মানবাধিকারটুকু নারীর জন্য সমাজ অবশিষ্ট রাখেনি। কেননা সমাজ তো নারীকে মানুষই ভাবে না। তাই তার অ্যাবিউজ হওয়াটা কোনো ব্যাপার না।

আসলে নারীর প্রতি অবমাননার সূচকগুলো অনেকÑশিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, ধর্মান্ধতা, ক্ষমতা আর চেতনাগত দৈন্য। আরও কিছু হয়তো খুঁজলে পাওয়া যাবে।

পুরুষের আনন্দ, বিষাদ কোনো কিছুই কি নারী ছাড়া হয়? তার উৎসবে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে সব তো স্বাদহীন হয়ে পড়ে। আর অসহায় নারী! সবকিছুতে তাকে ব্যবহার করা হয়, অপব্যবহার করা হয়- যুদ্ধ হোক কিংবা উৎসব হোক- অথচ এক পর্যায়ে দোষ তারই হয়। বলা হয়ে থাকে, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্লিনে এক দিনে দুই লক্ষ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো ধর্ষণের ঘটনা এটি। যে-কোনো যুদ্ধে এমন হয়েই থাকে। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে দুই লক্ষের ওপর নারী সম্ভ্রম হারিয়েছিল। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নারীর মৃত্যুর হার পুরুষের চেয়ে বেশি। তাহলে মানুষের মতো প্রকৃতিও তাদের ক্ষমা করে না। এখন যদি এমন প্রশ্ন তৈরি হয় নারীও তো তার উৎসবে পুরুষকে ব্যবহার করে? এমন যে হয় না সেটা না, তবে পুরুষের তুলনায় তা কিছুই না।

যা-ই হোক, অনেকে সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাস বলতে গিয়ে নারীদের রাজত্বের কথা বলে। এ প্রসঙ্গে ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি যা বলছেন:

অন্তত কৃষি বিপ্লবের পর থেকে বেশির ভাগ মানব সমাজই হচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, সেখানে নারীর চেয়ে পুরুষকে বেশি মূল্য দেওয়া হয়েছে। . . . নারীদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার জন্য তুলনামূলক কম সম্পদ ব্যয় করা হয়, তাদের আর্থিক সুযোগ অপেক্ষাকৃত কম, রাজনৈতিক ক্ষমতা কম এবং এমনকি চলাচলের স্বাধীনতাও কম। ‘জেন্ডার’ এমন এক প্রতিযোগিতা, যেখানে কেউ কেউ শুধু ব্রোঞ্জ পদকের জন্যই অংশগ্রহণ করে।

এটা সত্য যে কিছু কিছু নারী সময়ে সময়ে ‘আলফা’ অবস্থান দখল করতে পেরেছিলেন। যেমন, মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা, ৭০০ খ্রিষ্টাব্দে চীনের সম্রাজ্ঞী উ যেটিয়ান (Wu Zetian) এবং ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথ। কিন্তু এরা নিয়মকেই প্রমাণ করা ব্যতিক্রম মাত্র। এলিজাবেথের ৪৫ বছরের শাসনামলে, সমস্ত সংসদ সদস্য, রয়াল নেভি এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিচারক-আইনজীবী, বিশপ, আর্চবিশপ, যাজক ও ধর্মতাত্ত্বিক, ডাক্তার-সার্জন, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সব ছাত্র-শিক্ষক, মেয়র-শেরিফরা এবং প্রায় সমস্ত লেখক, স্থপতি, কবি, দার্শনিক, চিত্রকর, সংগীতবিদ এবং বিজ্ঞানীরা ছিল পুরুষ। (হারারি, ২০১৪ : পৃ. ১৬৫-১৬৮)

তাহলে নারীর একচ্ছত্র আধিপত্যর বিষয়টি শুধু কথার কথা।

ইংল্যান্ডের কথাশিল্পী ভার্জিনিয়া উল্ফ তাঁর A Room of One’s Own (১৯২৯) গ্রন্থে নারী ও উপন্যাসের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে দেখিয়েছেন:

সমাজে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থান এবং শিল্পের ওপর এর প্রভাব। তিনিই প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন যে, স্মরণাতীত কাল থেকেই নারীরা পুরুষের চেয়ে বিত্তহীন, ফলত শক্তিহীন। তার এই সীমাহীন দারিদ্র্যের জন্যও দায়ী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এই সমাজ তার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে সামাজিক বিধিনিষেধ এবং তাকে বঞ্চিত করেছে তার প্রাপ্য অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা থেকে, মূলত পুরুষেরই এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রয়োজনে। (উল্ফ, ২০১৯ : পৃ. ০৯)

ভার্জিনিয়া উল্ফ বলছেন নারীর জন্য প্রয়োজন একটি নিজস্ব কামরা এবং বছরে কমপক্ষে পাঁচশত পাউন্ড আয়ের নিশ্চয়তা। এসব পেলে নারী শিল্পচর্চায় তার দক্ষতা দেখাতে পারবে। আসলে প্রতীকী এই বিষয়টির অর্থ উল্ফ নারীর জন্য একটি মুক্ত আকাশ চেয়েছেন। চেয়েছেন তার মানসিক বিকাশের নিশ্চয়তা। কেননা পুরুষতন্ত্র নারীর শারীরিক বিকাশেই তার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে। নারীর মানসিক বিকাশ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো আন্তর্তাগিদ তারা অনুভব করে না। অথচ এটাই সবচেয়ে জরুরি। আমাদের রোকেয়াও নারীর মানসিক বিকাশের গুরুত্বকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন। যা-ই হোক, উল্ফ সবচেয়ে উন্নত বিশ্বের যে স্থানে দাঁড়িয়ে প্রায় একশ বছর আগের এই বাস্তবতার গল্প বলেছেন তা কেমন করে যেন আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া আরেক লেখক মেরি উলস্টোনক্রাফ্ট ফরাসি বিপ্লবের তিন বছর পর এক যুগান্তকারী গ্রন্থ লেখেন- LbÑA Vindication of the Rights of Woman (১৭৯২)। এটি ‘আজ নারী মুক্তি আন্দোলনের বীজগ্রন্থ বলে পরিচিত।’ (উলস্টোনক্রাফ্ট, ২০২১ : পৃ. কাভার পৃষ্ঠা) তিনি তাঁর নারীকেন্দ্রিক ভাবনাগুলোকে বাস্তব অভিজ্ঞতা, ইতিহাস, শিল্প এসবের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন।

মেরি তাঁর গ্রন্থটি তেরোটি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন। মেয়েদের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য শেষ অধ্যায়ের ছয়টি উদাহরণসহ পরামর্শ ধরনের কথা বলে উপসংহার টেনেছেন। এর অনেক পরে নাইজেরিয়ার লেখিকা চিমামান্দা এনগোজি আদিচি লিখলেন আমাদের সবার নারীবাদী হওয়া উচিত এবং একটি নারীবাদী ঘোষণাপত্র। এটি মূলত ২০১২ সালে আফ্রিকাবিষয়ক একটি কনফারেন্সে দেওয়া বক্তৃতা। তিনি বলেন, “পৃথিবীর জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ নারী কিন্তু ক্ষমতা আর সম্মানের অধিকাংশ জায়গা পুরুষদের দখলে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কেনিয়ার প্রয়াত ওয়াঙ্গারি মাথাই সহজ ও সুন্দরভাবে বলেছিলেন, ‘যত উপরে যাবে, তত কম নারী দেখতে পাবে।’”(আদিচি, ২০২১ : পৃ. ২৫) খুব সহজ করে চিমামান্দা তাঁর চারপাশে ঘটে যাওয়া ছোটো ছোটো ঘটনায় নারীর প্রতি পুরুষতন্ত্রের বিরূপতা তুলে ধরেছেন। পড়তে পড়তে মনে হবে- এই চিত্র আফ্রিকার নয়, বাংলাদেশের কিংবা সমগ্র পৃথিবীর। চিমামান্দা তাঁর বন্ধু ইজাওয়েলেকে পনেরোটি পরামর্শ দেন। ইজাওয়েলের শিশুকন্যা যার বয়স মাত্র এক সপ্তাহ তাকে কীভাবে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে সে বিষয়ে তিনি এই পরামর্শ দেন।

সমাজতাত্ত্বিক রুশো ভাবেন, ‘সোনিয়াকে একজন নিখুঁত মানুষ হতে হবে, যেমন একজন পুরুষ এমিলিয়াস।’(উলস্টোনক্রাফ্ট, ২০২১ : পৃ. ১১৩) আমাদের আপত্তিটা এখানে। পুরুষই সবকিছুর মানদণ্ড এই চিন্তাটা থেকে বের হয়ে আসার সময় এসেছে। এখন সমাজে পেশিশক্তির চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মূল্য বেশি। সে নিরিখে মেধা আর যোগ্যতা একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে ভালো কিছুর মানদণ্ড নির্ণয়ে।

হয়তো পুরুষতন্ত্র নারীকে চেনে বলেই তটস্থ থাকে। কিংবা প্রতিপক্ষ ভেবে আগে থেকেই অস্ত্র শাণ দিয়ে রাখে। রোকেয়া আমাদের দেশের নারীদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাশ্চাত্যের নারীদের প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে বলেন, ‘সভ্যতা ও স্বাধীনতার লালনভূমি লণ্ডন [লন্ডন] নগরীতে শত শত “ডেলিশিয়া-বধকাব্য” নিত্য অভিনীত হয়! হায়! রমণী পৃথিবীর সর্ব্বত্রই অবলা!’ (রোকেয়া, ১৯৯৯ : পৃ. ১১৫) আজকের পৃথিবীতে শিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী নারীর সংখ্যা বাড়লেও নারীর প্রতি অবমাননা কমে গেছে তা কিন্তু নয়। বরং এই অবমাননা অনেকটা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। আজকের তথ্য ও প্রযুক্তিতে উন্নত বিশ্বে নারী পূর্বের চেয়ে আরেকটু যেন বেশি অনিরাপত্তায় ভুগছে। বলছি নারীর অনলাইন ভায়োলেন্স ও সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়ার কথা। ActionAid-এর একটি রিসার্চ রিপোর্ট ‘Violence against women online in Bangladesh’. এখানে বলা হয় ৬৪% নারী অনলাইন ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছে। এই রিপোর্টে ১২ ধরনের অনলাইন ভায়োলেন্সের কথা বলা হয়।.(‘ 64pc of women fall victim of online violenceÕ, Prothomalo, https // en.prothomalo.com>bangla) এমন ভয়াবহ চিত্র কেবল বাংলাদেশের নয় বরং বিশ্বব্যাপী। প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিনব প্রক্রিয়ায় অবমাননার শিকার সারা বিশ্বের নারীরা। ‘Combatting Online Violence Against Women & Girls : A Worldwide Wake-up Call’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে :

Violence Against Women and Girls (VAWG) is already a problem of pandemic proportion; research shows that one in three women will experience some form of violence in her lifetime. Now, the new problem of ‘cyber VAWG’ could significantly increase this staggering number, as our research suggests that 73% of women have already been exposed to or have experienced some form of online violence. With social networks still in their relative infancy, this is a problem that urgently needs to be addressed if the Net is to remain an open and empowering space for all. (ÔCombatting Online Violence Against Women & Girls: A Worldwide Wake-up CallÕ, UNESCO, https://en.unesco. org>files)

আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত সমাজে নারীর প্রতি এই অনভিপ্রেত আচরণ প্রশ্ন তোলে- আমাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন মানসিকতায় এই শিক্ষা কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পেরেছে কি? আসলে সময় ও জীবনযাত্রার পদ্ধতি বদলে গেলেও নারীর লড়াই থেমে যায় না, ক্রমশ তা কঠিন হতে থাকে।

নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে আমাদের নারীদের পুরুষের চেয়ে একটু বেশিই পরিশ্রম করতে হয়। তাদের একাধারে উচ্চশিক্ষিতা, সুন্দরী, গৃহকর্মনিপুণা, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং অসীম ধৈর্যের আধার হয়ে উঠতে হয়। হয়ে উঠতে হয় দশভুজা। প্রতিটি নারী এক অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে আজীবন যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ। কাফকা মানুষের জীবন নিয়ে যেমনটা বলেন:

জন্মাবার পর থেকেই মানুষের বিচার চলছে। তার অপরাধ সে কখনোই জানতে পারে না। তার দিনানুদৈনিক কাজ ঠিক গড়িয়ে যায়। আর এই কাজের চাকায় অনির্দিষ্ট ভাবে সে ঘোরে। সে কোনো অন্যায় না করেও একদিন সকালে গ্রেপ্তার হল। তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ জানতেও পারল না। (কাফকা, ২০১৯ : পৃ. ১১)

কথাটা পুরুষের ক্ষেত্রে যতটা সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য নারীর ক্ষেত্রে। কিছু না করেও সে অভিযুক্ত। বারবার বিচারের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। নারীর ক্ষেত্রে বিচারটা দুই দিক থেকে চলে। এক. প্রকৃতি, দুই. পুরুষ। এও পৃথিবীর এক সত্য।

এসবের পরেও আমরা প্রত্যাশা করি- মানবতার স্ফুরণে জীবন জিতে যাক। জিতে যাক শুভবোধগুলো, জিতে যাক কল্যাণ। জীবন এগিয়ে যাক জীবনের পথে। আলোকের ঝরনাধারায় স্নাত হোক ধরা, স্নিগ্ধ হোক মানুষের মন, জয় হোক মানবতার।

ঋণস্বীকার

বেবেল, আগস্ট (২০১৮)। নারী অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতে। কনক মুখোপাধ্যায় অনূ.। ৭ম মু.। কলকাতা : ন্যাশনাল বুক এজেন্সি      প্রাইভেট লিমিটেড, ২০১৮।

বোভেয়ার, সিমোন দ্যা (২০১৯)। দ্বিতীয় লিঙ্গ। হুমায়ুন আজাদ অনূ.। ৭ম মু.। ঢাকা : আগামী প্রকাশনী।

ব্যাস, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন(২০১১)। ‘সভাপর্ব’, মহাভারত। রাজশেখর বসু অনূ.। ৩য় মু.। ঢাকা : নবযুগ প্রকাশনী।

বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক(২০০০)। ‘পদ্মানদীর মাঝি’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠগল্প ও উপন্যাসসমগ্র। মুক্তি সরকার সম্পা.। ঢাকা : সাহিত্য সংকলন সংসদ।

যাযাবর (১৯৯৯)। দৃষ্টিপাত। স্কাই প্রথম প্র.। ঢাকা : দি স্কাই পাবলিশার্স।

শংকর (২০০২)। এপার বাংলা ওপার বাংলা। চতুঃপঞ্চাশৎ মু.। কলকাতা : বাক্-সাহিত্য প্রাইভেট লিমিটেড।

আজাদ, হুমায়ুন (২০১১)। নারী। ৩য় স.। ঢাকা : আগামী প্রকাশনী।

স্পিভাক, গায়ত্রী চক্রবর্তী (২০২১)। “সাবলটার্ন কথা বলতে পারে কি?”। আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্ব: কয়েকটি অনুবাদ। লিরিক। জিল্লুর রহমান সম্পা.। চট্টগ্রাম : ২০২১।

রোকেয়া, বেগম (১৯৯৯)। ‘সুলতানার স্বপ্ন’, রোকেয়া রচনাবলী। আবদুল মান্নান সৈয়দ, সেলিনা হোসেন ও অন্যান্য সম্পা.। নতুন সং.; ঢাকা : বাংলা একাডেমি।

মজুমদার, সমরেশ (২০২০)। মেয়েরা যেমন হয়। ১১শ মু.। কলকাতা : মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ।

চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র (২০১২)। ‘নারীর মূল্য’, শরৎ রচনা ২। ঢাকা : রহমান বুকস।

লুইস, বব (২০২২)। ফেমিনিস্ট প্রোপাগান্ডা। ফারিহা মায়মুনা অনূ.। ঢাকা : গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস।

ভট্টাচার্য, সুকুমারী (২০০২)। ‘প্রাচীন ভারতে নারী’, নারীবিশ্ব। পুলক চন্দ সম্পা.। কলকাতা : গাঙচিল।

হারারি, ইয়ুভাল নোয়াহ(২০১৪)। স্যাপিয়েন্স। সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ ও প্রত্যাশা প্রাচুর্য অনূ.। ঢাকা : ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।

চট্টোপাধ্যায় শরৎচন্দ্র (২০১২)।, ‘শ্রীকান্ত প্রথম পর্ব’, শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। ঢাকা : রহমান বুকস।

মজুমদার, অতীন্দ্র (২০২৩)। চর্যাপদ। পু.মু.। ঢাকা : জয় প্রকাশন।

উল্ফ, ভার্জিনিয়া(২০১৯)। নিজের একটি কামরা। আলম খোরশেদ অনূ.। ২য় পরিমার্জিত মু.। ঢাকা : সংহতি।

উলস্টোনক্রাফ্ট, মেরি (২০২১)। নারীর ভাগ্যজয়ের অধিকার। মোবাশ্বেরা খানম অনূ.। ঢাকা : সুবর্ণ।

আদিচি, চিমামান্দা এনগোজি (২০২১)। আমাদের সবার নারীবাদী হওয়া উচিত এবং একটি নারীবাদী ঘোষণাপত্র। শিমিন মুশশারাত অনূ.। ২য় মু.। ঢাকা : বাতিঘর।

কাফকা, ফ্রানৎস (২০১৯)। বিচার। নৃপেন্দ্র সান্যাল অনূ.। পু.মু.। কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং।

‘64pc of women fall victim of online violenceÕ, Prothomalo, https://en.prothomalo.com>bangla, 28 Nov, 2022

‘Combatting Online Violence Against Women & Girls: A Worldwide Wake-up CallÕ, UNESCO, https://en.unesco.org>files, Visited on 02 Jan, 2024

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *