জোড়া

সম্মুখে সমুদ্রের গর্জন—বালির বালিশ বানিয়ে নিলয় আর রুবি সমুদ্রের ঢালু তটে পাশাপাশি শুয়ে আছে। বহুক্ষণ দু’জন দুজনকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আকাশের তারা তাদের বড় বড় চোখের মণিতে জ্বলজ্বল করে উঠল; দু’জনে আরও গম্ভীর হল।

শত শত নক্ষত্র টাঙানো মহাকাশ; বিশাল ফেনাময়ী সমুদ্রের ঢেউ যেন তাদের গায়ে চাদর পরাতে পরাতেও এগিয়ে আসছে না। নক্ষত্রগুলো তাদের একচোখ নিয়ে জোড়া মানুষ দুটোকে স্পষ্ট দেখে আছে সমুদ্রের তীরে।

সিদ্ধান্তহীন অপলক দু’জনে তারার দিকে চেয়ে থাকল আর ইচ্ছাকৃত অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে আনতে লাগল বারবার। মনের কথাটা ইচ্ছে করেই যেন নোনা জলে মিলিয়ে ফেলছে দু’জনে। সেই কথাবার্তার কোনো শুরু শেষ বা যুক্তি নেই।

এভাবে এলোমেলো কথা টেনে রাত বাড়তে লাগলে তারাদের গতি বদলাল। চাঁদের টান বিচ্ছিন্ন করে পানি বাড়তে লাগল—জোয়ার শুরু হয়েছে। এবার গতিতে এগিয়ে এসে নোনা ঢেউ নিলয়ের পায়ে একটা টোকা দিল। তারপর তাকে পাঁচ ইঞ্চি ভিজিয়ে রুবিকেও ধরা দিল। কিন্তু কেউ নড়ল না।

হঠাৎ একটা মিলিত কিছুর শব্দ পেয়ে দু’জনেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসল—দুজনেই দেখল, তীরে ঠিক তাদের সামনেই একটা বড়সড় নৌকা আকারের জাহাজ এসে ভিড়েছে; ভেতরটা সমস্ত অন্ধকার। বাতাসে খোলা সবুজ পাল আকাশের রঙ্গে পিত রং ধারণ করে আছে। দূর সমুদ্র থেকে কখন ভাসতে ভাসতে এত বিশাল জিনিস এদিকে এসে গেছে দুজনেরই খেয়াল নেই।

তারা বুঝল, যে শব্দ শুনে তারা উঠে বসেছে সেটা জাহাজের ভেতরের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে। চেপে চেপে আসছে—কিঁচিমিঁচি পাখি, সিংহের গর্জন, ঘোড়া, ভেড়াসহ কখনো না-শোনা প্রাণীদের ডাক।

অবিলম্বে একটা লোক খোলা চুলে তক্তার উপর এসে দাঁড়াল। তার দেহ আর বর্ণনা খুবই চেনা। নিলয়, রুবি দুজনেই বিস্ফারিত দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে রইল আগন্তুকের দিকে।

আগন্তুক বলল, ‘আমার জোড়া প্রাণী দরকার। তোমরা কি জুটি?’

তারা বুঝতে পারল না কি বলবে। ভেতরে অসংখ্য পশুপাখির মিলিত শব্দগুলো আবারও কানে বাড়ি দিল। নিলয়, রুবি দু’জন দুজনের মুখের দিকে তাকাল।

গম্ভীর গলায় আগন্তুক আবারও প্রশ্ন করল, ‘তোমরা কি একসাথে থাকতে রাজি? তোমরা কি জুটি?’

তারা কিছুই বলল না।

আগন্তুক আবারও বলল, ‘আমার জোড়া প্রাণী দরকার।’

কিছুক্ষণ নীরবতার পর… তারা দুজন দুজনের হাত ধরে ধীরে ধীরে জাহাজের উপর উঠে পড়ল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *