আমি
এই তো নিরিবিলি, চুপচাপ বসে আছি
কোমল ঘাসে শীতের শিশির হয়ে
কার্ণিসে নির্জন পাখিটির মতো আমারও
প্রহর কাটে একা; অভিযোগহীন।
আমি তপ্ত খরায় তৃষ্ণার্ত চোখ পেতে
এক হাওয়ার বিকেলের জন্য
আকুল অপেক্ষায় থাকি।
আমি কোনো আনমনা ধান ক্ষেতে
হাওয়া-দোল খেলি, তার বদ্ধ ডোবা
জলে বুনো মাছের দলে হারাই একা।
আমার সমস্ত চলাচল দিগন্তরেখার
টানে; পদচিহ্নে অচীন বেদনা বাজে।
কথা
একদিন ফুরিয়ে যায় সকল কথা
কেবল উচ্চারিত শব্দরা ওড়ে
নৈঃশব্দ্যতায়।
যে কথা ভেঙেছে মন, সে তার
গোপন বাক্সে রেখে যায়
অচীন দুঃখতাপ।
কথায় গড়ে সেতু, কথায় ভাঙে নদী,
কথারা খাঁ খাঁ রোদে
পোড়ায় অযুত জনপদ।
আমরা
আমরা ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছি
আমাদেরকে, তাড়াহুড়ো বা অবহেলায়;
ক্রমাগত নিজকে পিছনে রেখে
সরে আসছি নিরাপদ দূরত্বে, একা।
বুক পকেটে গচ্ছিত অর্থের মতো ফুরফুর
করে উড়ে যাচ্ছে সম্পর্ক
আর গোলক ধাঁধার ঘূর্ণে
লিখে দিচ্ছি নিঃসঙ্গতার নাম।
একা ও একাকীত্বে কি স্বাধীনতা মেলে
চোখের অগোচরে কষ্টের সর ভাসে
শুশ্রুষার অভিলাষে।
আমি কি কারো
আমি কি কারো সিঁথির ব্যথা
দীর্ঘশ্বাসে ঘুমিয়ে থাকা বদ্ধক্ষণ।
আমি কি কারো বর্ষা রাতের নির্জনতা
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখার অলীক ছায়া।
আমি কি কারো কাপড়কাচা
ক্ষারের মতো ধুঁয়ে নিচ্ছি সারা জীবন
নিত্য দিনের গাড়ীর চাকায় ঘুরছি পিছে।
আমি কি কারো অভিযোগের অভিমানে
ডুবিয়েছি স্বপ্নতরী।
আমি কি কারো কৃপণতা, ছবির ফ্রেমে
আঁকড়ে রাখা কেবলই ছবি।
নইলে আমি একেলা কেন! ঘুরে বেড়াই
মন খারাপের চাবি হাতে।
তুমি বললে
ক্ষয়ে যাওয়া বিকেলবেলা
ক্রমশ অন্ধকারে ডুবতেই
তুমি বললে, প্রতীক্ষা।
অবহেলায়; একা বসে থাকা
দেখে, তুমি দিব্যি বললে
নিঃসঙ্গতা।
তোমার হাতে গোলাপ দিতেই
তুমি বললে, অভিলাষ।

আহসান জামান, জন্ম ৬ নভেম্বর ১৯৬৯, নলতা, সাতক্ষীরা। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। পড়াশোনা করেছেন ঝিনাইদহ ক্যাডে টকলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : শীর্ণ নদী ও পূর্ণিমার চাঁদ [১৯৯৫], উড়ে যাই শঙ্খদেশে [২০১৯] রোদ্দুরে শোকের ছায়া [২০২৪]।