হেমন্তের এই হাওয়ায়

একদিন

একদিন ভুলে যাবে; কিছুতেই
মনে আসবে না আমার নামধাম;
জায়নামাজের মতো ভাঁজ করে গুছিয়ে
রাখবে কালঘরে; স্মৃতির মিউজিয়ামে।

একদিন নৈঃশব্দ্য ঝড় এলে
আমার সমস্ত কবিতা খুলে খুলে
অসংখ্য শব্দ, অসংখ্য অক্ষর ঝরে
যাবে অনাদরে; পাখিদের বনে।

একদিন আমার সমস্ত বিষণ্নতা
উড়ে যাবে মেঘদেশে; মন খারাপের
মেঘে বৃষ্টি হলে তুমি বলো কান্না।
তালাবদ্ধ ঘরকে ডেকো সন্ন্যাসী।
পথকে বলো পথিক; যাপনের
ছন্দ হারিয়ে হব ছন্নছাড়া।

মায়ের আঁচলে বাঁধা বহুমুখী সাহসও
একদিন ম্রিয়মাণ চাঁদের মতো হারিয়ে
যাবে অবশ অন্ধকারে।

তুমি

তুমি অস্পষ্ট গল্পের মতো জড়িয়ে আছো, হয়তো কোনো বহমান নদী
অথবা বোবা আকাশে রঙের অক্ষরে কথা বলে; অগাধ।

তুমি শব্দহীন ভূমিকম্প; অন্তরীক্ষে লিখে রাখো ভঙ্গুর তছনছ;
ছন্দহীন অযুত শতাব্দির ইতিহাসে গলে যাওয়া হীম বরফের গলনাঙ্ক।

তুমি অচেনা পথ, পথিকের থমকে যাওয়া পাদুকার ক্লান্তি;
আবদ্ধ জলে বেড়ে ওঠা বুনো জলজ উদ্ভিদ।

তুমি পার্কের সরল দোলনা, কাঁচের চূড়ির মতো নিক্কন হাসি।
কুয়াশায় জড়িয়ে থাকা মায়ার মতো জড়োসড়ো শীতের সকালবেলা।

তুমি ফুলের কোমল পাঁপড়ি, অসংখ্য কথার অনুমতির দরজা,
দর্পণে অলীক বিম্ব, তোমার প্রফুল্ল চোখ ভোর আলোর স্পন্দন।

হেমন্তের এই হাওয়ায়

হেমন্তের এই হাওয়ার ছলে
হয়তো আমিও ঝরে যাব
পাতাদের সাথে; একা।

ব্যথা নয়, অভিমান নয়;
কোনো এক বিষণ্ন অভিসারে
পাতারা যেন রঙ মাখে
ঝরে যাবে বলে; হুটহাট
অসুখে, মানুষ যেমন।

আমরা দুজন শীতের মতো কেউ

আমরা দুজন শীতের মত কেউ;

শীত এলে পাখিরা উড়ে যায়
নিরাপদ দূরত্বে, বৃক্ষের হলুদ পাতায়
জড়িয়ে ধরে অচীন মৃত্যু বেদনা।

শীত এলে পুকুরের জল, গায়ে
স্তব্দতার চাদর মুড়ে বসে। ঘরভর্তি
শূন্যতার আয়োজন, ইচ্ছামতো
ইচ্ছে হয়ে যায়। রোদের ভাঁজে
গাঢ় মিঠে তাপ; বিনম্রতায়
আলসে করে রাখে।

আমরা দুজন পলক ফেলি না তো
শীতের মতো উম্ ধরেছি চোখে।

দাগ

হায়েনার হাত থেকে এনে
এদেশ এখন নেকড়েরা
ছিঁড়ে খাচ্ছে প্রতিদিন।

জলের নীচে জলছাপে
নাচে স্বপ্ন-স্ক্যাচ; কষ্টরা
বায়বীয়, অস্পর্শকাতর।

প্রতিদিন যে ইচ্ছেকে
জমিয়ে রাখি তাকে
বলে দারিদ্রতা; আর
কল্পনায় ওড়ে যে
উড়োজাহাজ, সে তো
পুঁজিবাদী আনন্দোলোক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *