দ্বিধাগ্রস্ত
রাস্তার মাঝে এসে বুড়ো হয়ে গেছি
বহগামী যানবাহন বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিধা
ভুলে যাচ্ছি যাত্রাপথ, আপন ঠিকানা।
দুপাশে রাশি রাশি মানুষ
কানের কাছেও মাছি ভন ভন
কাউকেই যায় না চেনা কুকুর না হায়েনা।
সকলেরই দৃষ্টিকটু বানান
মুখস্ত করা মানুষও যুক্ত হচ্ছে নতুন ওই দলে।
ছিনতাই হওয়া কবিতা
ছিনতাইকারীর হাতটাও মানুষের ছিল। মুখে মাখা দাঁড়িও ছিল। সাঙ্গপাঙ্গও ছিল রাতের অন্ধকার মিশ্রনে। হয়তো ঘরে তার বউ বাচ্চা ছিল, বাবা মা ছিল। কোনো দলের শ্লোগানও দিয়েছিল কোনোদিন।
অথবা এমনও হতে পারে: কাজ নেই। নেশার টানে এগুলোই হয়ে গেছে নেশা।
হয়তো চোর-পুলিশ খেলাও হতে পারে। হতে পারে পেছনে আছে ধাতব অন্ধকারের গাঢ় সমর্থন। অথবা অন্য কিছুও হতে পারে। হতে পারে কোনো গোষ্ঠীবদ্ধ রাজনীতি। মসনদ অধিগ্রহণের দাবা প্রতিযোগিতা।
ছিনতাইকারীরা মোবাইল নেবে না কমিটমেন্ট দিয়েছিল। তাদের দাবী ছিল তরল ক্যাশ। কাকের যেমন সাবান দরকারী। নারী হলে হয়তো চাইত সোনাদানাও। তুচ্ছ তাদের কাছে গোলাপ-বকুল।
চাহিবা মাত্র তাই দিতে হয়েছে যা ছিল সামান্য- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক।
অগ্রগতি চিত্র
মানুষের মুখোশ পরা সবগুলোই জানোয়ার মূলত
সাতশ মাইল হেঁটেও মানুষের দেখা নেই।
ছেঁয়ে গেছে অলিগলি, অফিস-বিপণি
পৃথিবীর সকল কর্তৃত্বই এখন তাদের রচনা।
না, এটা কোনো খণ্ডচিত্র নয়
পৃথিবীর তাবৎ অগ্রগতিই এই।
একটা কুকুর যা যা করে
একটা শকুন যা যা করে
একটা হায়েনা যা যা করে
তারই নিখুঁত প্রতিফলন।
আমার বাড়ি বা গ্রামের ঠিকানা
ঈদে ও পার্বনে আমি যেকোনো পরিবহনেই উঠে পড়ি
আমি জানি, আটষট্টি হাজার গ্রামেই আমার বাড়ি
প্রতিটি বাড়িতেই থাকেন আমার মা, স্বজনেরা।
বড় রাস্তার ধারে উঁচুতে যেখানে বাস থামে
তার নিচের দুর্বাঘাসের সরু মেটো রাস্তাটাই
আমার বাড়ির ঠিকানা।
ওই রাস্তাগুলো সেরা লাইন রবীন্দ্র-নজরুলেরও
ওই রাস্তা ধরেই আমি বাড়ি যাই গাছগাছালির ভেতরে।
যে বাড়ি সুষম বন্টন মানুষ আর পাখিদেরও
সেই বাড়িটি আমারও।
গ্রাম ও জনপদের কবিতা ৬
গ্রামে গেলে আমার পা থেকে
শেকড় ছড়াতে শুরু করে মাটির গভীরে
আমি রাতারাতি গাছ হয়ে যাই।
আমি শিকড় দিয়েই গ্রহণ করি পুষ্টিমান খাবার
রাতের অন্ধকারে জোনাকীদের সাথে গল্প জমাই
জোছনায় ডুবে থাকি।
গাছের রীতি নীতিতে
আমার দিন কাটে পাখিদের সাথে নির্ঝঞ্ঝাট
অফিস, বাসা, সমাজ, রাজনীতি
কোনো কিছু মাথায় আসে না।
আমি নদীর তীড়ে দাঁড়িয়ে
জলের ঢেউ দেখি
দুলতে থাকি বাতাসে।

কবীর হোসেন গত শতাব্দীর নয়ের দশকের বাংলা কবিতার ব্যতিক্রমী কণ্ঠ। জন্ম বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের নদীনালা মুখরিত চন্দ্রদ্বীপ বরিশালে, ১ জানুয়ারি ১৯৭৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় সমান বয়েসি তিনি।
মাধ্যমিক পাঠ চুকে ঢাকায় এসে যখন কলেজে ভর্তি হন তখন স্বৈর শাসনের সাইরেন, রাজপথে জলপাই রঙের গাড়ি। তারপর তুমুল একাকীত্ব চেপে বসলে কবিতার কাছে আশ্রয় নেন।
এ যাবত ৯টি একক ও একটি যৌথ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। জলবায়ুর অভিযোজন ও নারীর সংগ্রাম নিয়েও তিনি একাধিক গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন।
প্রকাশিত কবিতার বই : সুগন্ধী রুমাল (১৯৯৩), জলের মিছিল (যৌথ-১৯৯৪), নিসর্গের গ্রীণকার্ড (১৯৯৯), শীতপত্র কবি (২০০১), পায়ে পায়ে দাঁড়ি কমা (২০১৮), মুদ্রিত শিহরণ (২০১৯), গাছ উড়ে যাচ্ছে পাখির বিরহে (২০২০), বাছাই করা একশো কবিতা (প্রথম প্রকাশ-২০২১), মঙ্গল গ্রহের আড্ডা (২০২২), কালিঝুলির অক্ষর (২০২৪)।
অনলাইন সাহিত্যের কাগজ এই সময়ে একটি বৈচিত্র্যময় উদ্যেগ। খুবই শিল্পসম্মত এ কাগজে আমার লেখা প্রকাশ পাওয়ায় নবববর্ষে বিশেষ মাত্রা যুক্ত হলো। নবববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। নিরন্তর শুভ কামনা।