নদীগণ

নদীগণ

প্রতিটা পুরুষ তার হৃদয়ে নদী খনন করে
কারো নদী গভীর, কারো নদী অগভীর
কারো কারো আবার শুকনো
আমার আছে ছোট নদী।

নদীসমূহ সাগরে পতিত হয়
আমার গেছে শুকিয়ে
শুকনো নদীর ধারা পায় কি দরিয়ার মিলন

হাঁটু বয়সে কাটতাম সাঁতার
ভয় ছিল না স্রোতের
এখন নামি না জলে
শুনেছি নারীর মুখে
জলহীন নদীতে ডুবে যায় পুরুষ

প্রতিটা পুরুষের থাকা চাই নদী
যেমন থাকা চাই একান্ত হুর
পুরুষ নারী ছাড়া একা ও বিস্ময়
কাতরতা কেটে গেলে নারীও নদীর মতন।

নারী ছাড়া নদী একা
প্রেম ছাড়া পুরুষ
আমিও একা এবং একক
স্রোতে ভাসব বলে কাটছি যমুনার জল।

প্রেমহীন নদীতে থাকে না কোনো স্রোত
হারিয়েছে কি নদীগণ স্রোতস্বীনী যৌবন
এদিকে চলছে ভাটা
ঝরা পাতার মতো কাটছে জীবন
তোমারে কামনা করি নদী
তোমারে ডাকি একান্ত ইবাদতে
আমাকে দাও প্রেম, আমাকে কর হৃদয়ের স্রোত।

মহামিলনের পথে

একটা দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে,
রাগের ভিতর;
হৃদয়ের ভিতর ছুটে যাচ্ছে।

কাঁধ থেকে দূরে
কেমন নিস্তব্ধ প্রেমের মধ্য দিয়ে আমরা
এগিয়ে যাচ্ছি নীরবতার বারান্দায়।

সকাল হয়ে যাচ্ছে
আমরা সকাল দেখছি না
সুন্দর একটা হাসি ধেয়ে আসছে
সমস্ত কোলাহল ছেড়ে
একান্তে, সমুদ্রের পৃষ্ঠ থেকে দূরে কোথাও
দিয়েছি ডুব।

আমাদের বাড়ি নেই, ঘর নেই
যাত্রা নেই
লক করে সমস্ত খুচরা আলাপ
অনন্ত গহীনের পথে হাঁটছি।

আমাদের দূরত্ব নিঃশ্বাসের থেকেও নিকটে
আলোর মতো উজ্জ্বল, সৎ কিংবা স্নিগ্ধ।

দ্বিধাহীন চিত্তে আরো সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা
ফেলে রেখে আমরা হাঁটছি
মহান সম্মেলনের দিকে,
যেখানে প্রেম গেছে, ভালোবাসাও সেখানে পূর্ণ হাজির।

কামনার দিনকাল

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ- দিন ঘন হয়ে আসিতেছে
রাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠিতেছে
অন্ধকার- বৃষ্টি আর মৃদু বাতাস বইতেছে
অমাবস্যা নাইমা আসবে এমন একটা ভাব তৈরি হইতেছে

জোয়ার আসিতেছে
ক্রমে শরীরে হৃদয়ে
দেহের ভেতর ক্রমান্বয়ে মেঘ জমিতেছে
আমি নিমগ্ন নিঝুম একটা সময়ে এসে উপছে পড়েছি।

চক্ষু কামাতুর,
উত্তাল ঢেউ বয়ে যাইতেছে
তবুও সন্ধ্যায় আগামীর সম্ভাবনা ধুলিসাৎ হইয়া যাইতেছে

আমার ভেতর আযান দিয়া উঠল কেউ
স্ত্রীর ভালোবাসায় মগ্ন হইতে লাগলাম
আমার ঘোর কেটে গেল
দেখলাম আমার চোখ ভেজা
মোবাইল স্কিনের আলো নিভে গেল
কি লক হওয়ার আগ মুহুর্তে তোমার নম্বরটা চোখে পড়ল
মনে পড়ল দীর্ঘদিন তোমার সাথে আলাপ নাই, সাক্ষাৎ নাই।

ভেতরটা আহত কবুতরের মতো ঝাপটাইতে লাগল
কোনো আশা রইল না
উড়ার সমস্ত স্বাদ নাশ হইয়্যা গেল
আমি মরিয়া যাইতে লাগলাম।

ভেতরে দহন জমতে থাকল দম
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারলাম না।

একটা কোমল হাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে
কেমন ঘোরে সকাতরে তোমারে ডাকতেছি- আয়শা আয়শা আয়শা।

তখনই বিদুৎ আসল
আমি বুঝলাম আমি নেশা করেছি
এ নেশা আদিম নেশা
এ নেশা আদমের জিন থেকে মহাকাল পেরিয়ে আমার শরীরেও সে হাজির।

কাম-কবুতর

লিলিথ লিলিথ বলে ডাকি যারে
হৃদয়ের কোনে জমে জল
আমি কি তারই দূর ভাবনা
নাকি হিমালয়

কেমনে তারে দেখাই হৃদয়ের ব্যথা
অফুরন্ত ফুটছে আগুনের ফুল
আমি কার লাগি কাঁদি
কার সিথানে
করেছি সমর্পণ

লিলিথ লিলিথ আমার
ঘন হয়ে আসে মন
তৃষ্ণাফুল
নাকি ভুল
নাকি সাত দরিয়ার চুম্বন

লিলিথ বলে ডাকে মায়াহরিণ
তীরে ভিড়ে না কোনো ঢেউ
দূর বনে ডাকে
সোনালি ঘুঘু এক
যার ছিল ছায়াবিথী
সে কোণ পানে বিলাবে বলে
কোন দিকে নিল মোড়
কত দূর সীমানার পথ
সে ডাকে কাম-কবুতর।

আনন্দ-বিলাস

মৌসুমি এই কবিতাটা তোকে নিয়ে

মহাকালের পথে যেতে যেতে ভাবি নিঃশ্বাস কিভাবে নিতে হয়?
কিভাবে টিকে থাকতে হয় সমগ্র প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে
যেমনি টিকে থাকে পিঁপড়েরা।

আমাকে কি বলতে পারো কেন জরুরী এইসব বেঁচে থাকা?
জীবনের পথে চলতে চলতে আমিও তোমাকে চেয়েছিলাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে
যেমনি করে চায় মানুষ।

কল্পনার কবুতর না হয়ে মানুষই হতে চেয়েছিলাম
কি অদ্ভুত মুগ্ধতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি গভীর মায়ায়
অনন্তের পথেই যাত্রা দিলাম তাই।

সবকিছু হিসেব করে হয় না
ভেবে না ভেবে কিছুটা পরাজয় মেনে নিয়ে আগাতে হয়
আমিও এগিয়ে যাচ্ছি।

কারো প্রতি কোনো অভিমান নেই
জীবন উপভোগ চূড়ান্ত হলে তার কি বা মানে?
আমি না হয় একাই কাটালাম
জন্ম বা জীবন, সত্ত্বা বা স্বরুপ
গভীর চুমু থেকে কোনো অংশে মহৎ কি?

আমাকে তোমার মনে পড়ার কথা না
তোমার কেবল মনে ধরে আয়শা বা এরিনার রুপ

আমি আমার সমস্ত আগুন ও প্রয়োগসহ বিদায় নিলাম আলোর দিকে-
মহাকালের পথে, অনন্ত ভবিষতের প্রান্ত রেখায়
যেখানে মিলেছে সুর ও সঙ্গম।

বিদায়! বিদায় হে বন্ধু বিদায়।

তোমাকে

[নিশাত এই কবিতাটা আপনার জন্য]

ফাগুনের হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে
গ্রামের শেষ মাথায় ইদগাহ মাঠের দক্ষিণ কোণে ফুটেছে শিমুল
উত্তরে লিচু আর আমের বাগান
মুকুলের গন্ধে মাতোয়ারা সবকটা পাড়া
আমি যাচ্ছিলাম একা উদ্দেশ্যহীন
কি মনে করে যেন দাঁড়ালাম একচিমটি
কয়েকটা বাচ্চা খেলছিলো মিম্বরের কোণায়
এইসব দৃশ্য দেখতে দেখতে পার হচ্ছি
মনে পড়ছে তোমার থুতনির কথা
হাতের তালুর রেখাগুলো ভেসে উঠছে চোখে
সম্মুখে আকাশের প্রান্তে মিশে থাকা ধানের সবুজ সমুদ্র
আইলগুলো তোমার হাতের রেখার মতো জমিনে লুটায়ে আছে
কয়েকটা ফিঙে উড়ছে
মাঝে সাজে ফড়িং ধরছে তারা
আমি হাঁটছি গন্তব্যহীন
সোনালী দিঘী, মাছের পুকুর, ভুট্টা-ক্ষেত
গর্ভবতী আলু খেতের নরম মাটি পেরিয়ে যাচ্ছি
বাহারি জংলি ফুল ফোটে আছে বোরো খেতের আইলে
সেই-সব দেখতে দেখতে মনে পড়ছে তোমার কথা
বলছিলে আমরা হাঁটবো বাপ-দাদাদের হালের জমিন
দাদুদের মতন রুইবো মরিচের চারা
গম আর সরিষার ক্ষেত করব
তিশি আর তিলও করব সিজনে সিজনে

তোমার কোমরে ছিল চারখান তিল
দুইখান ছোট, দুইটা বেশ; এইসব
মেয়েটার কোথায় কোথায় তিল হবে
টোল হবে কিনা
এই নিয়েও আলাপ হয়েছিলো বহুত
তোমার স্মিত হাসির কথা মনে পড়ছে
বলছিলে মরাল-বাঁশের বেত দিয়ে বানাবে মাঝারি ডোল
তারপর যত সব খুচরা কথা সব রাখবে তার ভিতর
সময়ে অসময়ে করবে খরচ
সেইসব পাতাঝরা দিন কোথায়?
কোথায় গোস্বায় গুইগুই করা লালমুখ
আমি অবশ্য গ্রামগুলো এখনো হাঁটি
অভ্যাস বদলানো আমাকে দিয়ে হয় না
প্রতিদিন একই দোকান থেকে বেচা-কিনি করি
একই রঙের জামা পড়ি
ভেরিয়েশনে তেমন আগ্রহ নেই
তুমি অবশ্য রুচিশীল
প্রতি মৌসুমে ফোটো আমের মুকুল
কী পলাশ, কাটাকুন্দ, বিষ-কুমরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *