অপরিহার্য প্রস্থান

জল ও জলাশয়

জলের সন্ধান পেয়ে মুখ খুলে দেয় জলাশয়
শতাব্দী শতাব্দী ধরে এই জল
ছুটে যায় জলাশয় অভিমুখে।
প্রকরণগত গতিময়তার নাম মহাকাল।
জলমগ্ন এই মহাকালের নাম ‘আমি’।
‘আমি’ একবিন্দু জল গড়িয়ে পড়ি জলাশয়ে।
গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ-বাতাশ, মৃত্তিকাসহ
একটি লাটিম-সদৃশ ঘূর্ণায়মান সকল অসুখ
আমাদের দেহময় আমৃত্যু ঘুরতে থাকে।

অসুখ সেরে গেলে সকল সৌর গোলকের দেহ
নিজ নিজ আঁতুড় ঘরে ফিরে আসে;
পৃথিবীর সকল ‘অনুসন্ধান’ ছুটতে থাকে-
শতাব্দী শতাব্দী ছুটতে থাকে, অবিরাম;
আহা! জল, আহা! জলাশয়
কেন অমঙ্গলের চিরায়ত ধ্বনি
বয়ে নিয়ে চলো কাল-মহাকাল অবধি।

১৪.০৯.২৩
কল্যানপুর

সে এক অনাবিল আকাঙ্ক্ষা

মাংস, সে এক অনাবিল আকাঙ্ক্ষার নাম
চাকু দিয়ে কেটে কেটে আমরা
সেইসব নরম স্বাদ গ্রহণ করি;
অথবা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে
একটুকরো সুডৌল মাংস থেকে
নিংড়ে নিই মৌ-নিসৃত নির্যাস।
অনাদিকাল থেকে মাংস
এক অনাবিল আকাঙ্ক্ষার নাম।

আমরা শিশুকাল থেকেই
মাংস খেতে খেতে বড় হই,
যুবক হই এবং বৃদ্ধ হই;
তারপর মরে গেলে এইসব
অনাবিল আকাঙ্ক্ষার মাংস
খসে খসে মাটিতে মিশে যায়;
সকল মাংসের স্বাদ সেখানে একই।

আমাদের প্রস্থানে পৃথিবীর কোন অনু-ভূমি
টের পায় না কিছু;
শুধু টের পাই আমি, আমার অহম—
সে সদা জাগ্রত থাকে পৃথিবীতে;
মাংসের স্বাদ নিতে নিতে সেই আমি
শিখে ফেলি বেঁচে থাকার নিয়ম-কানুন।

২৮.১১.২৩

মুদ্রাস্ফীতি আমাদরে সিপাহসালার

মুদ্রাস্ফীতির সবুজ মাঠে
উদ্ভ্রান্ত ভেড়াদের মতো
আমরা খাদ্য খুঁজে বেড়াই।
আমাদের খাদ্যগুলো ক্রমান্বয়ে
আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতির সবুজ মাঠে
এই মায়াবতী রহস্যময়ী মুদ্রা
রাজ্যের সিপাহসালার হয়ে
প্রজাদের শিশ্ন চেপে ধরে আছে।
আমরা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ
ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে করতে
নিজেদের বুকের হাড়গুলো বের করে ফেলি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অংক স্যার
হাড়গুলো গুনে গুনে অংক শেখায়
রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ সন্তানদের।
মুদ্রাস্ফীতির টগবগে ঘোড়া
আমাদের নিয়ে যাচ্ছে
আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর দিকে;
মৃত্যুর পূর্বে রষ্ট্রের পক্ষ থেকে
ওটা আমাদের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার।

০৮.০৫.২০২৪

অপরিহার্য প্রস্থান

মাবিয়া মাবিয়া চলে যেতে চাও, যাও
একটু থামো; আমার লেখার ঘরে—
দুটো কলম আছে; ফাউনেন্ট পেন;
ঝরঝর করে লেখা ঝরে; ওদুটো
নিয়ে যাও তুমি।

মাবিয় মাবিয়া একটু থামো;
যেতে চাও, যাও;
কখনো কখনো স্বেচ্ছাগমনে বাধা দিতে নেই।
আমার শোবার ঘরে বালিশের উপর
অনেক যত্নে আমার মাথাটা রাখা আছে;
ওটা নিয়ে যাও সঙ্গে করে;
তুমি ছাড়া ওটা নিরর্থক।

মাবিয় মাবিয়া আরেকটু থামো; থামো!
ঘরের দক্ষিণমুখী বারান্দায়
রাখা আছে আমার হৃদযন্ত্র;
ওটাও নিয়ে যাও;
ওটা স্পন্দনহীন তুমি ছাড়া;
এক সার্থক চিত্রকরের ব্যর্থ পেইন্টিং;
জীবন্ত ক্যানভাসে উত্তাল জীবনের ঢেউ।
মাবিয় মাবিয়া সবকিছু নিয়েছো ঠিকঠাক?
এবার যাও, পিছনে তাকিও না আর।

১২.১১.২৪
মগবাজার, ঢাকা।

মাবিয়া সুলতানা

সকল দৃশ্যকে একা রেখে
সরিষা ফুলের হাত ধরে দু’মাইল হাঁটি;
অযথায় ঘামের গন্ধে বিচলিত হই;
এই যে হাঁটার দৃশ্য,
এই যে হাত ধরাধরি
যেন অদূরেই অপেক্ষায় আছে গন্ধম ফল।
অতঃপর স্বর্গচ্যুত হলে
মাবিয়া সুলতানার চুল বেয়ে
নেমে আসি মর্তে।
মর্তের পুঁজিবাজারে আমি
বিক্রি হয়ে যাই।
মাবিয়া সুলতানার চুল বেয়ে
পুঁজিবাজার উর্দ্ধমূখী হয়
এই চিন্তায় কার্ল মার্কেসর নির্ঘুম রাত।

মাবিয়া সুলতানা নিশ্চিন্তে ঘুমায়;
এঙ্গেলস যুদ্ধ করে সম্মুখ সমরে
লেনিন বিল্পব কাঁধে নিয়ে—
সমাজতন্ত্রের কক্ষপথে ঘুরতে থাকে
একশ বছর।
আমি পুনরায় সকল দৃশ্যকে
একা রেখে হাঁটতে থাকি
সরষে ফুলের হাত ধরে।
যে দৃশ্য বিগত বিগত দশকের
ফ্রেমে বন্দি হয়ে আছে।

১৮.০১.২৫
কল্যাণপুর, ঢাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *