জেরুজালেম
অন্ধকারে ছিল যখন আমেরিকা য়ুরোপ
ভারতভূমির কথা জানত না বেশি লোক
জানত না কেউ- আমরা কখন সভ্য হলেম
তখনো ছিল- জেরুজালেম! জেরুজালেম!
মুসাকে যেহেতু দিলেন প্রভু অঙ্গীকার
থাকবে এখানে সন্ততি আর সঙ্গী তার
তারাই হয়েছে ইহুদি নাসারা আর মোস্লেম
এখানে বসত গড়েছে সবে জেরুজালেম!
যারা এখানে রক্ত ঝরায় রাত্রি দিন
সভ্যতাকে রেখেছে যারা নিজ অধীন
খুঁজেছে এখানে অমর মানুষ নিকষিত হেম
তবু এখানে রক্ত ঝরে জেরুজালেম!
কে দেবে বল অভঙ্গ সেই তীর ও তুন
কে তাড়াবে সিনাই থেকে হিংস্র শকুন
সর্ব ধর্মের প্রার্থনা হোক মানুষের প্রেম
মানুষ এনেছে সভ্যতা এই জেরুজালেম!
ঈশ্বর দর্শন
ফিলিস্তিনি শিশুটি ছাড়া কেউ আল্লাহকে সরাসরি দেখেনি
খোদার তাজাল্লি দেখে মুসা হয়েছিলেন নিশ্চেতন
তাঁর দূরবর্তী আগুনের ইশারায় পুড়ে গেল তুর-পর্বতমালা
পবিত্র সেই ছাইভস্ম এখনো মানুষ মাখে চোখে- ঈদ-পার্বণে
আজ মুসা নেই- এখনো হয়নি চাক্ষুষ দিদার
অথচ তাঁর সেই সিনাই পর্বতে
প্রতিশ্রুতভূমিতে- নিত্য পড়ছে অগ্নির গোলা
আকাশ থেকে নেমে আসছে টন টন আগুন
বিকট চিৎকারে ফেটে যাচ্ছে শিশুদের মাথার উপর
তাদের পিতা নেই, অঙ্গবিহীন সহোদর কাতরাচ্ছে-
বিধ্বস্ত হাসপাতালের অলীক বেডে
কিছুক্ষণ আগে তার মায়ের রক্তে ভিজেছে ফুটপাত
এখন আর কেউ নেই- না ঘর, না স্বজন
শিশুটি দৌড়াচ্ছে, আর আল্লাহকে ডাকছে-
ইয়াল্লাহ! ইয়াল্লাহ!
যেন দূর থেকে তাঁকে দেখেতে পেয়েছে
তুমি সামনে কোথাও আছ- নিশ্চিত জানে সে
তোমাকে সে বলতে চায় কিছু-
তাঁর শরীর থেকে রক্ত মুছে দিয়ে
তুমি তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে
আর ভাইদের সুস্থ করে দেবে
ঘরগুলো করবে মেরামত
আর বোমাবাজদের করবে পাকড়াও।
স্বাধীন ফিলিস্তিন
একদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন হবে-
শিশুরা জেগে উঠবে ভূমধ্যসাগর তীরে
মায়েরা করবে সন্তানের জন্য খাদ্য প্রস্তুত
বোমার শব্দবিহীন জেগে উঠবে ভোরের লালিমা
যদিও সেদিন আমি থাকব না
সেদিনও মানুষ থাকবে এই গ্রহে
কয়েক দিনের ব্যবধানে চলে যাবে ট্রাম্প
মরে যাবে তেলাবিবির কসাই
যদিও আসবে পৃথিবীতে নতুন ইহুদি
ইহুদি- কোনো ধর্ম নয়, জাতি নয়, নয় মানবিক সংঘ
পুঁজির দাসত্ব যার ধর্মে ঈশ্বর উপাসনা
তুমিও হতে পারো আমিও হতে পারি ইহুদি শাবক
ঈশ্বর পুত্র যীশু বলেছিলেন সে কথা সহস্রাব্দ আগে
আজ পৃথিবী বুড়ো ইহুদির দখলে
চারিদিকে ইহুদি সংঘ
ফুরিয়ে যাচ্ছে সৌদি তেলের মজুদ
খাদ্যের অপচয় শেষে তারা
দেশে দেশে করিছে মসজিদ নির্মাণ
বাংলা পাক বুরকিনা ফাসোতে
তীর্থযাত্রীদের কেনাকাটা হবে বিবিদের মৃগয়া
বুভুক্ষ শিশুরা তুলিতেছে মুখে তৃণের গ্রাস
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপাপড়া শিশু অনবরত কাঁদিতেছে
অবুঝ সহোদর খুঁজিতেছে তাকে
অবুঝ সহোদরা খুঁজিতেছে তাকে
মাথার ওপর তেলাবিবির শকুন উড়িতেছে
একটি ডুগং শিশু করিতেছে খেলা
লোহিত সাগরের জলে উঠিছে ভেসে বহুবর্ণিল প্রবাল
সামনে যদিও বাব এল মান্দেব- মরণ উপত্যকা
তবু সিনাই উপকূলে ওই তো সূর্য উদিতেছে…
দাইফ দ্য মাস্টারমাইন্ড
কারা তোমায় হত্যা করে
যারে তুমি হত্যা করেছ-
সে-ই তোমায় হত্যা করে
যারে তুমি হত্যা করো
নিহতের অশরীরি শরীর-
তোমার পশ্চাৎ অনুসরণ করে
তুমি বেঁচে থাকলেও মরে যাও
যদিও তাকে তুমি দেখ-
আসলে সে তোমার চোখের ভ্রম
সে তার ছায়া
যাকে তুমি হত্যা করেছ
যেমন দাইফের কথা ধরা যাক-
তার একটি পাতুমি আগেই নিয়েছ
তার শিশুপুত্র, তিন বছরের আদরের কন্যা
প্রিয়তমা স্ত্রী- কারা তাকে হত্যা করেছিল
দাইফ তো দেখতে পারে না
তার চোখ অন্ধ হয়েছিল তোমার স্প্রিন্টারে
তার বৃদ্ধ পিতা
তার স্নেহময়ী মা
তারাও মরেছে তোমার গুলিতে
তুমি ছায়ার সাথে যুদ্ধ করছ
চাচ্ছ প্রাণ-ভিক্ষা
প্রেতলোকে করছ শান্তিপ্রার্থনা
তুমি ভাবছ তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ
সে-ই করছে এসব অনাসৃষ্টি
বলো, কেউ কি তাকে দেখেছে কখনো
তার ছবির সত্যতা কেউ করেনি নিশ্চিত
তার সহপাঠীরাও মরে গেছে একই নিয়মে
যখন তার স্ত্রীর খুলি উড়ে গেল
তোমার বোমায়
গুলিতে ঝলসে গেল শিশুপুত্রের বুক
তার কন্যাটিও মরে গেল চোখের সামনে
তখন কি করে দাইফ বেঁচে থাকে
অহেতুক ভাবছ সে বেঁচে আছে
যেহেতুতুমি তার অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়েছ
যেহেতু তার আত্মা ঘুরে বেড়ায় তোমার চারপাশে
তুমি তার ছায়ায় মারোবোমা
কে তোমায় মারছে হে অবোধ খুনি
মৃতরা ছাড়া কেউ তোমায় মারতে পারে না
এটা তো মৃতদের আবাস ভূমি
যারা মারা গেছে গোলান পর্বতে
যাদের বাড়িঘরে করছ বসবাস
শুনছ তাদের আত্মার দীর্ঘশ্বাস
তাদের কবরের কারাগারগুলো দিচ্ছ পাহারা
কেউ তোমায় মারেনি
কেউ তোমায় মারবে না
যার স্ত্রী মরেনি তোমার গুলিতে
যার ভাই স্তব্ধ হয়নি বেয়োনেটের খোঁচায়
দাইফ সত্যিই বেঁচে নেই-
জন্মের মূহুর্তে মরে গেছে শরণার্থী শিবিরে
দাইফের কোনো দেশ নেই, সে অনাগরিক
তুমি তার গল্প বানাচ্ছ
তার নামে কথা সাজাচ্ছ
দাইফ তোমার ছায়াসঙ্গী
দাইফ তোমায় তেড়ে বেড়াচ্ছে
তেড়ে বেড়াবে প্রজন্মান্তর
তুমি সংখ্যা দিয়ে ধরতে পারবে না
মুছে দিতে পারবে না কখনো
কারণ দাইফ তোমার হত্যাকাণ্ডের ফসল।
মৃত্যু
আমি মরবো বলেই জন্মেছি-
তবু দিচ্ছ মরার ভয়-
মরতে না পারলে অহেতুক আশ্বাস
তুমি বরং অভিশাপ দিতে পারো বাঁচার-
যা কার্যত হবে না সফল
দু’একটিছোট মৃত্যুতুমি করেছ বশীভূত
কিন্তু তারা বড়-মৃত্যুর চেলাপুলা
আমি গভীর নদীতে দিই ঝাঁপ
দাবানলে করি মৃগয়া
পাহাড়থেকে অনেকবার পড়েছি
শিশুকালে খেয়েছি ভয়াল মন্বন্তর
তারও আগে দেশ-ভাগের লেবেঞ্চুস
ঘুড়ির বদলে এখন উড়াই পানির পাইপে রকেট
কতবার রাজা এলো রাজা গেলো
তারাও আমার মৃত্যুর কাছে পরাভূত মেনেছে
তুমি ভূমি থেকে করবে উচ্ছেদ
আমি তো জন্মেছি শূন্য গর্ভ বাঙ্কারে
তুমি সূর্যকে করেছ আড়াল, বেশ
আমি অন্ধকার কক্ষে হয়েছি প্রবিষ্ট
সুপেয় পানীয় জল
বাগানের সুমিষ্ট ফল
তুমি সব নিয়েছ দখল
কেবল আমার মৃত্যুকে বাঁচাতে এসো না
কারণ আমি এখন প্রান্তে এসে গেছি
প্রণয়ের খুব কাছাকাছি
এতদিনের অতৃপ্ত বাসনা
উপেক্ষার কষ্ট
আজ দুহাতে নেবো টেনে
যার কোমল বাহুদ্বয় তোমাকেও
উজাড় করে নেবে।
আমেরিকা
স্বাধীনতা, মুক্তি ও গণতন্ত্র শব্দত্রয়কে বস্তুত আমারা
ঘৃণা করতে শুরু করেছি; কিছুদিন আগেও যা
ছিল আমাদের প্রাণের দোসর
পবিত্র শব্দেরা একদিন আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ
করে তুলেছিল; পবিত্র বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে
আমরা একটি ধর্মগ্রন্থের কথা বলেছিলাম
আমরা শিখেছিরাম এ ফর আব্রাহাম ও আমেরিকা
জে ফর জেফারসন আর ওয়াশিংটন ঘাড়ের ওপর
তুলে ধরেছেন অন্য এক পৃথিবী
আমরা যুক্তিকে ঈশ্বর বলে ডেকেছিলাম
সংখ্যার ভয়াবহতা জেনেও আমরা তার পক্ষ নিয়েছিলাম
অথচ যার দৃশ্যত পতন ও প্রতারণা আজ
আমাদের গভীর গুহার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে
বিগত বিশ্বাস আজ আমাদের কষ্টের কারণ
যে উপত্যাকা ও জলাশয় তোমার অবদান
যাকে আমরা আশ্রয় ভেবেছিলাম
তুমি নিজেই তার সুপেয় জল দূষিত করেছ
আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি না…
রবার্ট ফিস্কের প্রতিবেদন
মাত্র দুমাসের হিসেব; বড়জোর দুমাস কয়েকদিন
সব কিছুই ঘটেছে জুন ২০০৬-এর পরে, আর আমি
এ রিপোর্ট লিখছি আগস্টের মাঝামাঝি, তখন
হামাস জঙ্গিরা এক ইসরাইলি সৈন্যকে করেছিল আটক
এটা ছিল বিবিসি আর সিএনএন-এর ব্রেকিং নিউজ
তার আগের দিন ইসরাইলি সৈন্যরা এক ফিলিস্তিনি
ডাক্তারকে ধরে নিয়ে যায়-বিশ্বমিডিয়ার কাছে
এ খবরের ছিল না প্রচার যোগ্যতা
৭০ দিনের মাথায় সৈন্যরা নিয়েছে কেড়ে ১৮০ জন
ফিলিস্তিনির প্রাণ আর হামাস জঙ্গিদের রকেটে
নিহত হয়েছে এক ইসরাইলির মূল্যবান জীবন
তবু জঙ্গিদের এ কেমন বাড়াবাড়ি
লড়াই ভূমি নিয়ে
এই যুদ্ধে আমি মরে যাবো
এই যুদ্ধ আমায় মেরে যাবে নিশ্চয়
বৈরি সেনারাও থাকবে না বেঁচে
দেখতে হবে শিশু ও নিরস্ত্র নারীদের লাশ
এই যুদ্ধে অনেকে মরে যাবে নিশ্চিত
বিপরীত পক্ষে যারা মারা যাবে তাদের অনেকে নির্দোষ
শিশু ও নিরস্ত্র নারীরাও পড়বে না বাদ
অনেকে বলবে এই যুদ্ধ ছিল অসম অন্যায়
কেউ উত্তেজনায় খাট থেকে পড়ে যাবে
কেউ লাফাবে ধর্মযুদ্ধ বলে
কিন্তু আমার তো কোনো ধর্ম নেই
যদিও ধর্মের পরিচয়ে নেমে আসে রকেট
আমাদের মাঝখানে ভিন্ন দুটি শব্দ-
হয়তো একই ভাষার, একই উদ্দেশ্যে নিবেদিত
অথচ আমাদের লড়াই ভূমি নিয়ে
বাস্তুভিটা নিয়ে
একটি উপাসনার ঘর নিয়ে
এখানে রয়েছে আমার পিতার কবর
দাদিমার লাগানো জলপাই গাছ এখনো
শান্তির বার্তা নিয়ে বাতাসে কম্পন তোলে
অথচ তারা আমাদের ভূমি থেকে করছে উচ্ছেদ
অদৃশ্য ঈশ্বরের নামে মনগড়া প্রতিশ্রুতির নামে
আমরা তো এখানেই ছিলাম
অথচ তাড়া খাওয়া মহিষের মতো।
হোলি
আজ তোমার নামে হোলি খেলবো
আজ তাঁর নামে হোলি খেলবো
আজ প্রাণাধিকের নামে হোলি খেলবো
আজ নিজেকে রাঙিয়ে নেবো
আজ লালে লাল হবো
আজ নিজের রক্ত দিয়ে হোলি খেলবো
হোসেন যেভাবে খেলেছিল শুষ্ক মরুতে
শিশু আসগর খেলেছিল পিতার বুকে
লাল রক্তে যাদের ভয়
তারা রক্তজবা নিয়েও খেলতে পারে
তারাই শুধু খেলতে পারে এ খেলা
যারা তাঁর সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে
যারা প্রিয়তমের সঙ্গে মিলিত হতে চায়
যারা মরুভূমির বালুকণা রক্ত দিয়ে ধুতে চায়
এ খেলা তাদের জন্য
যারা দেহের সীমানা ছেড়ে গেছে
যারা নিজের রক্ত দিয়ে মুখমণ্ডল ধুয়েছে
হে আমার বন্ধুরা দেহের আবরণ খুলে ফেল
আজ তাঁর সঙ্গে মিলিত হতে হবে
শরীরে রেখো না কোনো অশুভ বস্তু
তাঁর সঙ্গে হোলি খেলতে হবে
আজ তাঁর প্রাপ্য তাকে দিতে হবে
ওই তিনি আসছেন
হে মহাবীর তুমি কি ভয় পাচ্ছ বিজয়ীর গাণ্ডিব
নিরস্ত্রের বিনাশে আজ পৃথিবীর উল্লাস
তুমি হাঁটু গেড়ে বসো
আর তোমার হৃদপিণ্ডের রক্তে সন্তরণ করো
বিজয়ীরা এ খেলা খেলতে পারে না
ওরা শুধু দর্শক
ওরা শুধু বধ্যভূমি প্রস্তুত করতে পারে
ওরা খেলতে পারে না
এ খেলা অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্র দেখতে পারে না
এ খেলা ধর্মের ধ্বজাধারী যুধিষ্ঠির দেখতে পারে না
এ খেলা অবিরত
সব কালে সব দেশে এ খেলা চলতে থাকে
ফেব্রুয়ারি মার্চে জুলাই আগস্টে অক্টোবরে
শিশুরা এ খেলা খেলতে নেমে আসে পথে
এ খেলা এখন চলছে লোহিত সাগরে
রক্তস্নাত গাজা উপত্যকায়
এ খেলা দেখছে বিশ্বের শক্তিমান রাজারা
এ খেলা দেখছে ধর্মের চাঁইরা
কিন্তু তারা খেলতে পারবে না
তারাই শুধু এ খেলা খেলতে পারে
যারা শুধু একজনকেই ভালোবাসে
বহুগামীদের জন্য এ খেলা নয়
চলো আমরা তাঁকে ভালোবাসি
তাঁর নামে হোলি খেলি
নিজের রক্তে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলি।
ঈশ্বর এখন গাজাতে
সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিন নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখছেন, একজন খেদ করেছে এভাবে : ছেলে বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘বাবা ঈশ্বর কোথায় থাকেন?’ বাবার জবাব- ‘ফিলিস্তিন ছাড়া হয়তো সর্বত্র’।
বর্তমান সময়ে এমন ভাবনা হয়তো অস্বাভাবিক নয়- চোখের সামনে এতো রক্তপাত বিশ্ববাসী হয়তো আগে কম দেখেছে। আর নিস্ক্রিয় মানুষ ভাবে ঈশ্বর তাদের সব অপকর্মের সাজা নিজ হাতে তুলে নেবেন।
কিন্তু আমার মনে হয়, ঈশ্বর এখন গাজাতেই আছেন। তা নাহলে গাজার হাতে গোনা কজন মানুষ কিভাবে এতো রক্ত ও প্রতিরোধ বিশ্ববাসীকে দেখাতে পারে! ঈশ্বর গাজাতে বিশ্ব মানুষের পরীক্ষা নিচ্ছেন। গাজা সবাইকে ডেকে ডেকে বলছে, পৃথিবীতে কোনো মুসলমান কি এখনো জীবিত আছে! আরব জাজিরা সৌদি হজ্বযাত্রী কি এখন ঘুরছে কালো পাথরে! কোথাও কি এখনো কোনো মানুষ আছে? এখনো কি বেঁচে আছে তথাকথিত মানবতার মার্কিন, সমতার চীন? শোন বিশ্ববাসী গাজায় ঈশ্বর তোমাদের পরীক্ষা নিতে চান। এখন কাবাঘরে নয়, মসজিদে নয়, ভ্যাটিকানে নয়, জগন্নাথ মন্দিরে নয়, সিনাগগ সাইল্যান্ট টাওয়ারে নয়, এখন ঈশ্বর গাজাতে আছেন, আর বাকি সব দাজ্জালের অধীন। ঈশ্বরের আজ একটিই রাজ্য- সার্বভৌম কুরশি- তার নাম গাজা উপত্যকা।
যাত্রা
এখন কোথায় আছি- রাত্রির গভীরতা কেটে গেলে
পুনরায় তুলবো কি নোঙ্গর
ইফিজিয়া সমুদ্রের তটে জমেছে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ
একে একে হারিয়ে যাচ্ছে তারাদের নিশানা
আমাদের আগেই করেছে সতর্ক- অভিজ্ঞ কাপ্তেন
সমুদ্র শান্ত হলেও উঠতে পারে জেগে ঘুমন্ত মহাদেশ
পানির ছলাৎ ছল মানে তরলের বিরুদ্ধে যাত্রা
এখানে অভিজ্ঞতার কোনো নেই প্রয়োজন
সমুদ্র কখনো রাখে না ধরে পদচ্ছাপের রেখা
প্রতিটি ভ্রমণ এখানে অনভিজ্ঞ যাত্রা
মাথার ওপর দুএকটি সিগাল উড়ছে
নীল তিমিরা সংঘবদ্ধ আত্মহননের জন্য
ছুটে আসছে তীরের দিকে
জেলেরা যদিও বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠাতে চাচ্ছে জলে
তবু কেউ জানে না তাদের গোপন অভিমানের কথা
প্রতিটি প্রাণ যদিও পৃথিবীতে একবারই আসে
তবু মানুষ করেছিল প্রচার তাদের শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই
এই সব আধিপত্যবাদি পতাকার নিচে আমাদের বাস
টুকরো টুকরো ভূমির মালিকানা নিয়ে গড়েছি প্রমূর্তি
বস্তুত রঙ ও আকৃতির বিভাজন পবিত্র টোটেম
জানি এখনই বইবে অনুকূল বাতাস- মাঝিরা তুলবে পাল
স্থল ও সমুদ্রে আমাদের সেনারা সমান পারদর্শী
যদিও জানি স্বদেশের বুকে আর হবে না ফেরা
কারণ দ্বিতীয় গন্তব্য এখানে অলীক বাসনা
আমার মৃতদেহ খেয়ে নেবে সমুদ্রের কামট
হয়তো সিগালের চঞ্চুতে মিলে যাবে শব-
আমাদের সীমাবদ্ধতার দিন।
স্বাক্ষর
তুমি চেয়েছিলে- আমার খুলিতে নেপেন্থী পান
রক্ত দেখেছিলে, হয়েছিল রক্তের সাধ
অগত্যা খেয়েছিলে রেডওয়াইনের সাথে পাউরুটি মিশিয়ে
প্রাচীন নগর থেকে উঠে এসে মানুষের কাছে
চেয়েছিলে তাদের জরা মৃত্যু- হাসির হুল্লোড়
এখানে ফসল কাটার দিন- সন্তান প্রসবের কালে
মানুষের মায়েরা কিভাবে প্রেমের উৎসবে মাতে
মৃত্যু এমন এক রাত- অদ্বিতীয় পুনরপি
যদিও আমরা এখানে মৃত্যুর জন্য আসি
তিনিই এখানে একমাত্র জীবিত দেবতা
অথচ ঘুমন্ত মৃত্যুকে তুমি পুনরায় জাগাতে চেয়েছিলে
পাল্টে দিয়েছিলে সমাধি ফলক
কোথাও ছিলো না এফিটাফ
জেনেছিলে তুমি ছাড়া এই গ্রহে আর কিছু নেই-
এই বোধ উন্মত্ত হয়েছিল মায়াবী জ্যোৎস্নায়
তোমার জগতে কখনো ওঠেনি সূর্য
তুমি শুধু রাতের সাথে করেছ বসবাস
আমরা উন্মত্ত নৃত্যে মেতেছি
বরফযুগের আগে ভাঙেনি আমাদের ঘুম
যদিও একদিন মুছে যাবে তোমার সব স্বাক্ষর
একটি মহাযুদ্ধের পরে কর্তিত লাশের ভেতর
জেগে উঠবে দু’একটি কিশলয়
গ্রিকপুরাণের গল্প হয়ে তুমি থেকে যাবে-
অন্ধ কবির মহাকাব্যের পাতায়!
বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক
পাকিস্তান জিন্দাবাদ একদিন শুনেছিলাম
জয়বাংলা প্রকম্পিত হয়েছিল বাংলার বাতাস
তারপর এলো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
এরপর বাংলাদেশ চিরজীবি হোক-
এসবই ইতিহাসের অংশ
ইতিহাস স্মরণ করা যায়
ইতিহাসের পুনরাবর্তন ঘটে কদাচিৎ
বর্তমানও খুব শীঘ্রই ইতিহাস হয়ে যাবে
তুমি ইতিহাস পড়তে পারো আর
নিজের পঞ্চ-ইন্দ্রিয় রাখতে পারো খোলা
চাইলে নিজের হুইলে দিতে পারো তেল
বাংলা কখনো এক রকম ছিল না
এখনো কিছু বাংলা অন্য বাংলায় আছে
কিছু বাংলা অন্য দেশে আছে
আর দেশ বলে কখনো কিছু ছিলো না
দেশ হলো কিছু মানুষের পারস্পরিক ক্ষমতার স্বীকৃতি
তুমি আর আমি প্রজা কিংবা রাজকর্মচারি
ভাবো একবার- সুলতানি বাংলার মানচিত্রের কথা
মোগল-নবাবের বাংলা নিশ্চয় এক ছিল না
আর ব্রিটিশরা বাংলা বলতে কি বুঝতো
তোমার কি মনে আছে গৌড় পাণ্ডুয়া-
লক্ষণাবতী সোনারগাঁ রাজমহল মুর্শিদাবাদ কোলকাতা
আর যারা বাংলাকে জোড়া লাগাতে চেয়েছিল
তারাই একদিন বাংলা ভাগের জন্য করেছিল লড়াই
সাতচল্লিশের পরে পাকিস্তানের বাংলা ছিল পূর্বে
আর ভারতের বাংলা পশ্চিমে
আর এখন তুমি ভঙ্গ বাংলা নিয়ে করছ জয়বাংলা
অধিক সত্য হলো- অতি ক্ষুদ্র তোমার জন্মবাংলা
তারচেয়ে ক্ষুদ্র তোমার জন্মভিটা
ক্ষুদ্রতর মা-বাংলার জরায়ু- প্রকৃত জন্মস্থান
তুমি নিজ গ্রাম বা শহরের বাইরে যাওনি কখনো
আবার যেতে চাইলেও পারবে না
সেখানে আছে পাহাড়ি বাংলা- নিষিদ্ধ বাংলা
অথবা তোমার ছেলেমেয়ে থাকছে এদেশে
পড়ছে ইংরেজি ইশকুলে
যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়
প্রস্তুতি নিচ্ছে আইইএলটিএস, জিআরই
তাহলে তোমার জয়বাংলা কোথায়
যারা তোমায় জয়বাংলা বানাতে চায়
তারাও থাকে বিদেশ
তারাও দেশের টাকা বিদেশে পাঠায়
যারা অন্য দেশ থেকে দেয় সবক-
তাদেরই বা দেশ কোথায়-
তারা হলো কথার উপনিবেশ
তুমি ততক্ষণই জয়বাংলা বলো
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলো
যতক্ষণ তুমি কিছু পেতে চাও, কিংবা ভয় পাও
এবার নিজের চরকায় তেল দাও
প্রয়োজনে জয়বাংলা বলো
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলো
পাকসারে জমিন বলো
সব সত্য- সবই তোমার বাপদাদারা বলেছে
মহান নেতারাও বলেছে- জিন্দাবাদ জয়বাংলা
এসবই কালের ক্যাচাল
কেউ তোমাকে জয়বাংলা বলতে বলে
কেউ জিন্দাবাদ
তবে যা যায় তা আর ফেরে না
দরকার নতুন স্লোগান
নতুন কালের নতুন মানুষের
আপাতত বলতে পারো- ‘জয়বাংলা-জিন্দাবাদ’
ইনকিলাব জিন্দাবাদ
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
মামুলি কবিতা
কবিতাগুলোর জন্য এখন আমি খুব অনুতপ্ত
মানুষের অনেক সময় নিয়েছে কেড়ে
কিছুটা সময় ছিলো তাদের প্রিয়জনের জন্য
কিছুটা ছেলেপুলে বুড়ো দাদা-দাদির জন্য
পাড়ার চাচিরা বলেছিল দোকান থেকে এনে দিতে পান
সকাল থেকে হয়নি সন্তানের দুগ্ধপান
কবিতা পড়তে গিয়ে বিছানায় যেতে হয়েছিল দেরি
কৃষক কবিতা পড়েনি বলে ফলন গিয়েছিল বেড়ে
কে আর চায় কবির মতো অকম্মা সন্তান জন্মাতে
তাদের ঠিক মতো লেখাপড়া হবে না
কাটাবে ঝোপঝাড়ে গাঁজাভাঙ খেয়ে
কিছু হ্যাংলা মেয়েমানুষ নেবে তার পিছু
যদিও পরনিন্দা কবিদের নিয়তি
তবু কি সব ভাবের কথা লিখেছিল কবিতায়
প্রেম ও প্রিয়তমা বললেও প্রেম ছিল কদাচিৎ
কিছু লোক আছে- যারা কবিতাকে চায়
কিছু লোক করে ঘৃণা
আদতে কেউ কাউকে চায় না
কোথাও চলছে যুদ্ধ- কোথাও যুদ্ধের প্রস্তুতি
আজ মনে হয় কবি এক অক্ষম যুদ্ধবাজ
শব্দের মসৃণ অস্ত্রে কারো সময় নিয়েছে কেড়ে
অথচ পাশেই ফুটে আছে দারফুর গাজা
মস্কো পাঠাচ্ছে কিয়েভে উড়ন্ত রক্তের উপহার
ফুলের মতো ঝরে পড়ছে মানুষ মাটিতে
আর আমি কলহপ্রিয় প্রতিবেশীর সাথে রয়েছি মত্ত
ডিমের মধ্যভাগ নাকি প্রান্তে ভাঙা হবে
এই নিয়ে আমাদের দ্বন্দ্ব
এমন জীবনবেদের কাছে সবই তুচ্ছ মামুলি!

মজিদ মাহমুদ। জন্ম ১৬ এপ্রিল ১৯৬৬, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে। এম.এ (বাংলা), ১৯৮৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি ঠিক রেখে কখনো সাংবাদিকতা, কখনো শিক্ষকতা; আর পাশাপাশি সমাজসেবা।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই: কবিতা— মাহফুজামঙ্গল (১৯৮৯), গোষ্ঠের দিকে (১৯৯৬), বল উপখ্যান (২০০০), আপেল কাহিনী (২০০১), ধাত্রী ক্লিনিকের জন্ম (২০০৫), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), কাঁটাচামচ নির্বাচিত কবিতা (২০০৯), সিংহ ও গর্দভের কবিতা (২০১০), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১১), দেওয়ান-ই-মজিদ (২০১১), গ্রামকুট (২০১৫), কবিতামালা (২০১৫)। প্রবন্ধ ও গবেষণা— নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র (১৯৯৭), কেন কবি কেন কবি নয় (২০০১), ভাষার আধিপত্য ও বিবিধ প্রবন্ধ (২০০৫), নজরুলের মানুষধর্ম (২০০৫), উত্তর-উপনিবেশ সাহিত্য ও অন্যান্য (২০০৯), রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ-সাহিত্য (২০১১), সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা (২০১১), রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ (২০১৩), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৪), সন্তকবীর শতদোঁহা ও রবীন্দ্রনাথ (২০১৫), ক্ষণচিন্তা (২০১৬)। গল্প-উপন্যাস— মাকড়সা ও রজনীগন্ধা (১৯৮৬), সম্পর্ক (২০১৯), মেমোরিয়াল ক্লাব (২০২০), তুমি শুনিতে চেয়ো না (২০২৪)। শিশু সাহিত্য— বৌটুবানী ফুলের দেশে (১৯৮৫), বাংলাদেশের মুখ (২০০৭)।