রুপসা
দেখা হবে আকাশ।
আবার তোমার সাথে,
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের তারার সাথে,
সূর্যোদয়ে আবার ফিরে আসা সূর্যাস্তে
মাটির মায়াকে সন্ধি করে,
সচেতন বাতাসের গাঢ় চুম্বনে,
শেষ বিদায়ের পূর্বক্ষণে,
দণ্ডায়মান সময়ের শেকড়ে,
এ হাতের ইশারায়
জানিয়ে দেই,
জীবনের সৌন্দর্য।
বিলিয়ে দেই,
ফিরে আসা মানুষের হাত,
বৃক্ষ হয়ে ফিরিয়ে দেই,
রুপসার রূপে মুগ্ধ পথিকের ছায়া।
গড়ে তোলে মানব আর মানবতার মায়া।
আত্মসমর্পণ
যখন নিঃশ্বাস হয়ে ওঠে অবিশ্বস্ত,
অবিন্যস্ত চুলের আহ্বানে পারি দেই সুদীর্ঘ পথ।
মনের কথা না শুনে হেঁটে চলা
এলোমেলো বাতাসের সাথে।
মেঘ আর আকাশের ছায়ায়
নীল জলের মহাসমুদ্র এগিয়ে আসে স্বাগত জানাতে।
সবুজ অরণ্য আর ধানক্ষেতের মাঠও এগিয়ে আসে।
হাতে থাকা জ্বলন্ত সিগারেট নিভে যায় অচেনা আনন্দে।
বন্ধুর এগিয় দেয়া শঁপাঞ ভর্তি পেয়ালা
পড়ে থাকে সচেতন অযতনে।
এলভিস আর লালনের দেখা হয় স্বর্গোদ্যানে,
কোটি মানুষের প্রার্থনাগীত,
শোনা যায় কালো নদীর বাঁকে বাঁকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ভার নিয়ে
চৌরাস্তায় এসে ঠেকে যাই, দিকভ্রান্ত নাবিকের মতো।
কখনও সামনে, কখনও ডানে-বামে
তাকিয়ে দেখি তুমি আর তোমার ছায়া প্রচ্ছায়া।
আদুরে আমন্ত্রণের সাঁঝে দেখা মেলে,
না বলা কথার পসরা নিয়ে চলা সওদাগরের সাথে,
কিছু কথা বাণিজ্যিক শহরে অবিক্রীত থাকে,
কিছু কথা অবিকৃত অবস্থায় তুলে নেই হাতে।
ময়ূরপঙ্খি নৌকার বহর দিগন্ত সীমা পেরিয়ে যায়।
ঠিক তখনই তীব্র অনুশোচনার দহন এসে হানা দেয়।
অদেখা অশ্রুপাতে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে যায়
পাপ, তাপ আর অহংকারের মেঘমালা।
হরতন আর ইস্কাপনের আড়ালে
ঢাকা পরে চায়ের কাপ আর পুরাতন ম্যাগাজিনের ছবি।
আনত চোখের ভয়াবহ সৌন্দর্যে আত্মসমর্পণ
হয়ে ওঠে অবধারিত উৎসবের উপলক্ষ।
সৃষ্টি হতে থাকে মুদ্রিত ইতিহাস
আর মহাকাব্যের আধুনিক সংকলন।
মন্দিরে ঘণ্টায় জাগ্রত হয়,
প্রজা আর পুরোহিত।
ফাল্গুন আর চৈত্রের
সুমিষ্ট কোমল দ্বন্দ্ব শেষে,
তোমার প্রেমের বারতা নিয়ে হাজির হই
নদীমাতৃক বাংলাদেশে।
তোমার গন্তব্যে
আমি নক্ষত্র ভালোবাসি,
ভালোবাসি তাই তোমাকে,
নক্ষত্রের মতোই সমুজ্জ্বল তুমি।
তোমার উপস্থিতি
আলোকিত করে আমার হৃদয়ের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ।
আমি আকাশ ভালোবাসি,
ভালোবাসি তাই তোমাকে,
আকাশের মতো বিশাল তোমার হৃদয়।
তোমার বিশালতায়
সাদা মেঘের মতো দিশাহীন আমাকে আশ্রয় দিয়েছো।
আমি সমুদ্র ভালোবাসি,
ভালোবাসি তাই তোমাকে,
জলের মতো গভীর তোমার চোখের দৃষ্টি।
দৃষ্টির ঐ গভীরতায়
ডুবে যাই তোমার মমতা মাখানো গভীর অতলান্তিকে।
আমি পাহাড় ভালোবাসি,
ভালোবাসি তাই তোমাকে,
পাহাড়ের মতো দৃঢ় তোমার সংকল্প।
মনের ঐ দৃঢ়তা
পথ চিনিয়ে দেয়, হেঁটে চলি শধু তোমার গন্তব্যে।
পাহাড়, আকাশ, সমুদ্র আর নক্ষত্র
সবকিছুই নগন্য হয়ে যায়, তোমার চোখের নোনা জলে।
ক্ষণজন্মা পৃথিবীতে আসলে তুমি হয়ে ওঠো অসীম।
অতীত, ভবিষ্যৎ আর বর্তমানে আমায় করো সীমাহীন।
সহস্র বছরের সময়ের স্রোত আজ থেমে যায় তাই
তোমার পরোক্ষ কামনায়!
সোনার তাবিজ পড়া মানুষের আত্মকথা
আমার ফুল ভালো লাগে,
আমার ভুল ভালো লাগে,
তোমার মিষ্টি কথা শুনতে ভালো লাগে,
বর্ষার বৃষ্টি, শরতের মেঘ সবই ভালো লাগে।
ভালো লাগে রোমান্টিক কবিতা লিখতে,
রোমাঞ্চকর ছবি দেখতে।
ভেবো না আমি বেঁচে আছি।
কবেই মরে ভুত হয়ে আছি, তাই
অলস দিন কাটাচ্ছি
গাছের ডালে,
পুরোনো ডোবায়,
পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে।
বেঁচে থাকতে আমি ছিলাম ভণ্ড।
মানবতা মানবতা করে চিল্লাফাল্লা করতাম।
সেমিনার সিম্পোজিয়াম গরম করে ফেলতাম।
আমার গলায় ঝুলতো সোনার তাবিজ।
সনদপত্র সাজানো থাকত আমার ড্রইংরুমে।
আমি একা না,
আমার মতো লক্ষ লক্ষ সোনার টুকরো বেঁচে থাকত,
এখনও বেঁচে আছে জলকাদার পৃথিবীতে।
আমরা মানবতার ধারক, সভ্যতার বাহক ছিলাম।
তবে আমাদের বিরক্ত করত অনেকে,
এই যেমন ভাষা আন্দোলনের শহিদেরা,
স্বাধীনতার শহিদেরা,
ভিয়েতনামের গেরিলারা, ফিলিস্তিনের মানুষেরা।
এরা স্বপ্নে দুঃস্বপ্নে এসে জ্বালাতন করত।
বলত, আমাদের নিয়ে লেখো,
গল্প, কবিতা, কলের গান, জলের গান, প্রবন্ধ।
অসহ্য লাগত বেহায়াগুলোকে।
দেখলেই পিষে ফেলতে ইচ্ছে করত
ইতরগুলোকে।
সাহস কত পরামর্শ দেয়।
আমরা ছিলাম ঈশ্বরের প্রায় কাছাকাছি।
তাই ভাবলাম,
একদিন যাই চা খেয়ে আসি স্বর্গের ক্যান্টিনে,
ভবিষ্যতের ঠিকানাটাও দেখে আসলাম,
সেখানকার হত্তাকত্তাদের সাথে আলাপ সেরে এলাম।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,
আর কিভাবে যেন চড় খেয়ে পড়ে গেলাম নরকে।
সেখানে দেখি আমার মতো আরও অনেকে।
মুখ গোমড়া করে বসে আছে
গাছের ডালে,
পুরোনো ডোবায়,
পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে।
তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছে
ফিলিস্তিনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এবং
পৃথিবীর অনেক জায়গা থেকেই
স্বর্গের বাগান দখল করে নিচ্ছে নিষ্পাপ মানুষেরা।
মহাকালে
ছন্দ তোমার আনন্দে থাকে,
আমি কান পাতলেই তা শুনতে পাই।
ষোড়শ শতকেই হোক, হোক আগামী সহস্রাব্দে,
তোমার মায়া মেশানো চোখের রাজত্বে
পেতে চাই এক চিলতে ঠাঁই।
নরম ঠোঁটের বালিশে, ঠোঁটের আয়েশে,
আয়োজন করব মুশায়রা।
শুনবে তুমি, পড়বে তুমি, আমার সকল কবিতা।
সবই তো তোমার জন্য,
জনঅরণ্য আর বন্য প্রকৃতির ছায়া ঘেরা,
ক্ষুদ্র নিবাসে আমায় ডেকে নিও
কোন পড়ন্ত বিকেলে, নিমজ্জমান সূর্যের প্রহরে।
শরীর জুড়ে আবৃত্তি হবে,
সঙ্গীতের তালে তালে, ভেসে যাওয়া সম্ভাবনাকে
নতুন করে জানাব নিমন্ত্রণ।
বর্তমানের না চাওয়া আর না পাওয়ার আক্ষেপ
বিলীন হবে সময়ের মহাস্রোতে।
দূর অতীত আর নিকট ভবিষ্যতের মহারথে
চড়বো দু’জন সারথী হয়ে।
দিগবিজয়ী মহাপুরুষের জন্মক্ষণে, আমরা
হাতে-হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করব।
শতকোটি গ্রহের পুণর্জন্মেও আমাদের রবে এক সত্তা।
শপথের ছায়াপথের
দু’জন পথিক হয়ে মিশে যাবো নক্ষত্র আর কৃষ্ণগহ্বরে।
রেখে যাবো চিহ্ন আমাদের সৃষ্ট প্রজন্মের মাঝে।
বাস্তব তখন কল্পনার মতো মনে মনে হাসবে।
পানাপুকুরের রূপান্তর যেন মহাসমুদ্রের স্বপ্নে।

আসিফ মাহতাব পাভেল পেশাগত কাজের অবসরে লিটল ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ব্লগে লেখালেখি করেন। লেখালেখির মধ্যে আছে ছড়া-কবিতা, ছোট গল্প, শিশুতোষ গল্প ও অনুবাদ।
জীবনান্দ দাসের বনলতা সেনের শহর নাটোরে তাঁর জন্ম। পিতার চাকরির সুবাদে শৈশব থেকে তারুণ্য কেটেছে নাটোর, রাজশাহী দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
প্রকাশিত গ্রন্থ, অনুবাদ: সালমা লাগেরলফের দু’টি গল্প: দুই অপরাধী কেভিনহুলার (২০১০), দ্য ক্রনিক্যালস অব নারনিয়া: দ্য হর্স এন্ড হিজ বয় (২০১৫), দ্য ক্রনিক্যালস অব নারনিয়া: দ্য লায়ন, দ্য উইচ এন্ড দ্য ওয়্যারড্রোব (২০১৯)। শিশু-কিশোর সায়েন্স ফিকশন ও অন্যান্য: পিল পিল (২০১২), ভিন্ন ভুবনে (২০২২)। কাব্যগ্রন্থ: স্বহস্তে পুনর্মুদ্রণ (২০২৩), অবৈতনিক নজরদারি (২০২৪), মনের মহলে (২০২৫)।