বোবা মানুষের রূপকথা
বোবা মানুষের ভিড়ে কিছু কিছু মুখ ভেসে ওঠে
জল আয়নায় যেরকম সূর্য ফোটে
সেরকমই মুখশ্রী ডুবে আছে সবুজ মিনারে
সে মুখগুলো হয়তো দেখছে তোমাকে
সেই রূপকথা আর ফুরায় না
আমরা গোপনে তৈরি করি নৌঘাট
শিশুদের হাসির মতো
গোধূলি বন্দর
বুনোফুলের চোখে ফোটে জোনাকতরী
জলের তলে গড়ে উঠছে
আঁকাবাঁকা বনপথ
উদ্বাস্তু পাখিদের মনকলোনী
তারাও পছন্দ করে শুকনো পাতার ধ্বনি
প্রতীক্ষা
আর একবার দেখা হলে
অব্যক্ত কথার মতো যেখানে জলের দাগ ছিল
সেখানে ছড়িয়ে দিব ফুলের সুবাস
ময়ূরপাখার রং থেকে
তোমার ফিরে আসার পথে জড়ো হবে
নক্ষত্র-উল্লাস
সেখানে আরো কিছুদিন ছড়িয়ে রাখব
না বলা কথা, চুপচাপ
ধুরন্ধর
দেখছি আমরা ঠেলে নিচ্ছে ধুরন্ধর
ছোপ ছোপ অন্ধকারে হাসছে কিঙ্কর
কালার ব্লাইন্ড
প্রতিদিন ঘুম শেষে যে জীবন ফুটে ওঠে
সে জীবন নিঃশর্ত ক্ষমার মতো
বয়ে চলছে বন্য আভার চোখে
যেন আনুগত্যহীন রোদ-ঝলকের নদী
বাঁক নেওয়া পথের দিকে ধুলো ওড়ে তার
সবুজ পাতার নিচে
তারও আছে জমানো গোধূলি দেখার সাধ
জলপোকায় খেয়ে নিয়েছে তার দিব্যদৃষ্টি
প্রলাপ
স্বপ্নে জলকামানের শব্দে
উতলা ভঙ্গিতে
ফুচকি মারছে হাওয়া
কথা না বলা মরমি মেঘ
উড়ে চলেছে একা
জমিনে পড়ছে ছায়া।
ছায়ার অন্তরে
এখন শিকড় ছড়িয়েছে
চারদিকে
যাব না কোথাও আর
বৃষ্টি কাদার জীবন
পার হচ্ছে নদী
দূরে
গোধূলি সাঁতার।
এখানেই রয়ে যাব
শুয়ে থাকব
পাতার পাশে
নাই মধুপের দল
সন্ধ্যায় পাখিরা
কাছে আসে।
তাদের পাখার নিচে
সমস্ত স্মৃতি গচ্ছিত রাখি
আর কোথাও যাব না
তুমি নাই
তবু তোমাকেই দেখি।

মুক্তি মণ্ডল, জন্ম ২২ জুলাই ১৯৭৬। চুয়াডাঙ্গা সদর। সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা : একটি অসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গ্রন্থ : ঘড়ির কাঁটায় ম্যাটিনি শো (২০০৮), পুষ্পপটে ব্রাত্য মিনতি (২০০৯), উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি (২০১১), ভেল্কিবাজের আনন্দধাস (২০১৫) যাচনার বাঞ্ছাধ্বনি (২০১৮), সূর্যাস্তের দলিত আলো (২০২৪), রুমালে আঁকা বাঘ (২০২৫)।