সকলের গল্প
আমাদের সকলের এক একটা গল্প ছিল
গল্পগুলোর শুরু ছিল শেষ ছিল না
—এর গল্প থেকে ওর গল্প চক্রাকারে ঘুরতে লাগল
দিন শেষে অসীম সেই গল্পগুলোর পথরেখা মিলে গেল
যার যার জীবনের পথে
দলিত আত্মার প্রেম
কে জানে আমার এই কর্মফল
কী অলুক্ষণে এনেছিল ডেকে
মৃতের নিঃশ্বাস
বগলদাবা করে
নিয়ে তোমার হাত
ছুটে গেছি হতে সূর্যরশ্মি
দলিত আত্মার প্রেম
লিখে কাব্য দুটো গোলাপের কলিতে
হয়তো আজ সে নিহত হতে গিয়ে উঠবে জেগে
হাত দুটো জড়িয়ে বেজে উঠল কি ভায়োলিন
তোমার কণ্ঠস্বরে
‘ফুটেছে যে কলি
তাকেই পুষ্পিত করি ভালোবাসায়’
দুটো জীবন কি করে যেন
বিপরীত রতি দেখে
ঘুরে দাঁড়ায় নিহত হতে
পৃথিবীর রথে
নীল সাদার প্রেম
তুমি পড়বে নীল বেনারশি, আমি সাদা ধূতি,
চলো, চুপি চুপি আজ নীল সাদার প্রেমে পড়ি।
আমাদের এই গোপন খেলা, গোপন অঙ্গীকার,
দুটি নদী, একটিতে ভাসে স্নিগ্ধতা, অন্যটিতে ঢেউয়ের ছন্দ।
তোমার চোখে আকাশের নীল,
আমার হাতে সাদা মেঘের প্রলেপ।
এঁকেছি কিছু সুখী সুর,
প্রাণে মিশে থাক, অন্ধকারে আলোয় রঙিন তুলি।
তুমি হাসলে, নীল নূপুরের শব্দ শোনা যায়,
বাজাই সাদা সেতারের তান,
আমাদের প্রেম, নীল ও সাদার সেতু,
এক শিল্পের আল্পনা, মিলিত দুটি প্রাণের উল্লাসে।
চলো, চুপি চুপি আজ নীল সাদার প্রেমে পড়ি,
শুধু তোমার হাতে আমার হাত, আর সঙ্গী হয়ে থাকি,
এই অমল প্রেমে, নীল ও সাদায় হারিয়ে যেতে চাই,
তুমি আমার পৃথিবী, আমি তোমার আকাশের যাত্রী।
কিছুই দেয়া হলো না
যে প্রাণ দিলাম তোমায়, সে তো তোমারই দেয়া,
তোমার আলোয় জ্বলে আমি, তবু কিছুই দেয়া হলো না।
তোমার মায়ার বাঁধনে বাধা পড়ে রই,
জীবনের এই কাব্যে শুধু তোমার ছোঁয়া পাই।
তোমার দানে ভরা জীবন, তবু কেন শূন্য লাগে,
তোমার প্রেমের ঋণে আমি চিরদিন যে জাগে।
চেয়েছি দিতে হৃদয়খানি, তা-ও তোমারই সুধা,
তোমার দেয়া ভালোবাসা আমার দানে বাঁধা।
আকাশ যত তারায় ভরা, সবই তোমার সৃষ্টি,
আমি কী দিই তোমাকে? এ যে ভাবনার বিস্মৃতি।
তোমারই দেয়া শ্বাসে বাঁচি, তোমার আলোতে চলি,
তোমার ছায়ায় লুকিয়ে আছি, তবু যেন কভু বলি।
যে প্রাণ দিলাম তোমায়, সে তো তোমারই দেয়া,
আসল কথা এই—তোমাকে কিছুই দেয়া হলো না।
নিয়তির রেখা
এই দেহ চুলের সিঁথির মতো,
এক সরল রেখায় আঁকা—
চিকন দিগন্তে মিশে যায় ধীরে,
যেন সময়ের ছুঁড়ে দেওয়া ফাঁকা।
তবু মন চায় উড়তে দূরে,
জানতে—যেখানে পথ শেষ হয়,
যেখানে ঝরা পাতার কণ্ঠস্বর
শুধু বাতাসে রেশ রেখে যায়।
পথ কি শুধু রেখা টানে?
নাকি তারও শেষে আছে কাহিনী?
নিয়তি কি হাসে একলা বসে,
অন্ধকারের ভেতর মেলে দেয় ঋণী?
তবু পা চলে, এই মাটির উপর,
যতই হোক শরীরের ভার।
মন উড়ে যায়, গোপন আশা নিয়ে—
পথের শেষে অপেক্ষা করে কি আর?
দিগন্ত যদি হয় এই জীবনের বাঁধ,
আমি সেই রেখা ছুঁয়ে ছড়াই।
শরীর ফুরাবে, কিন্তু মন যাবে
চিকন রেখা পেরিয়ে—অনন্তে মিলাই।

রাজ মাসুদ ফরহাদ একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, যিনি সাহিত্য, প্রযুক্তি এবং রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ১৯৮২ সালের ১৯শে নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা রাজ ফরহাদ শৈশব থেকেই সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর প্রথম কবিতা ‘একটি গোলাপের আত্মকথা’ নবম শ্রেণিতে বিদ্যালয়ের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্র তাঁর সাহিত্যচর্চার ভিত্তি মজবুত করে।
২০০২ সালে ‘ভাস্বতী’ এবং ২০০৫ সালে ‘কুঁড়েঘর’ সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার মাধ্যমে বিভিন্ন মতাদর্শের লেখকদের সৃজনশীলতা উন্মোচনে ভূমিকা রাখেন। তাঁর লেখায় সমাজবাস্তবতা, শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রাম, রোমান্টিসিজম, প্রকৃতি, দর্শন এবং রাজনৈতিক অভিব্যক্তি গভীরভাবে ফুটে ওঠে।
তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘Exceptional Talent’ স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি। তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনি এআই এবং এনএফসির মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : জলের ফুল (২০২৫), বিভাসিত রক্তগোলাপ (২০২৫)।